Image of মো: রাসেল বকাউল

নাম: মো: রাসেল বকাউল

জন্ম তারিখ: ১০ জুন, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : থাই গ্লাস কর্মচারী শাহাদাতের স্থান : যাত্রাবাড়ি, ঢাকা

শহীদের জীবনী

রাসেল বকাউল, ১০ জুন ২০০২ সালে চাঁদপুর জেলার পূর্ব রাজারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বকাউল (৫০) ও নীলু আক্তার (৪২) দম্পতির কোল জুড়ে জন্মগ্রহণ করেন। কৃষক পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান হিসেবে তার জন্ম যেন পরিবারের জন্য এক আশীর্বাদ হয়ে আসে। ছোটবেলা থেকেই রাসেল ছিলেন নম্র, বিনয়ী এবং মায়াময় এক চরিত্রের অধিকারী, যিনি শুধু পরিবারের নয়, পুরো গ্রামের সবার ভালোবাসায় পরিপূর্ণ ছিলেন। তার জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে ফুটে উঠেছিল এক সৎ ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি। থাই গ্লাস কোম্পানিতে কাজ করার মধ্য দিয়ে পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করলেও, রাসেলের অন্তরে ছিল দেশের জন্য গভীর ভালোবাসা। বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ সেই ভালোবাসারই প্রকাশ। দেশের জন্য, সমাজের জন্য ন্যায় ও সমতার সংগ্রামে তিনি ছিলেন এক নির্ভীক যোদ্ধা, যিনি শান্ত অথচ দৃঢ় পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে যেতেন। রাসেল বকাউল তার জীবনের স্বল্প সময়েই যে ত্যাগ ও সাহসিকতার নজির রেখে গেছেন, তা আজীবন তার গ্রাম, পরিবার ও দেশবাসীর হৃদয়ে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। শহীদ পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা রাসেল বাকাউল, যিনি শহীদ তানভীর সিদ্দিকীর মতই ন্যায়ের পথের এক সংগ্রামী যোদ্ধা ছিলেন, বেড়ে উঠেছিলেন এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে। রাসেলের পিতা ছিলেন একজন ক্ষুদ্র চাষী। যিনি জমির অভাবে অন্যের জমিতে দিনমজুর হিসেবে কাজ করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হিসেবে তার কাঁধে ছিল সংসারের ভার, অথচ তার উপার্জন কখনোই পর্যাপ্ত ছিল না। প্রতিদিনের জীবনযুদ্ধে রাসেলের মা, একজন গৃহিণী, সংসারের সামান্য যা কিছু ছিল, তা দিয়ে সন্তানদের মুখে আহার তুলে দিতেন। তারা নিজেদের ছোট্ট কুটিরে বসবাস করত, যা বর্ষাকালে প্রায় ডুবে যেত, আর শীতকালে ঠাণ্ডায় কাঁপত। অভাব রাসেলের জীবন থেকে শৈশবের সুখ কেড়ে নিয়েছিল। তার বয়সী অন্য শিশুরা যখন স্কুলের পথে হেসে-খেলে যেত, রাসেল তখন মায়ের পাশে বসে কষ্টের মলিন মুখ দেখে ভাবত, কীভাবে এই দুঃখের সমাপ্তি ঘটানো যায়। বয়সের তুলনায় তার কাঁধে ছিল অনেক ভারী দায়িত্ব, তবুও তার মনে ছিল এক অটল বিশ্বাস একদিন এই দারিদ্রের শৃঙ্খল ছিঁড়ে সে বেরিয়ে আসবে। তার স্বপ্ন ছিল তানভীরের মত হয়ে ওঠা ন্যায়বিচারের প্রতীক, অসহায়দের কণ্ঠস্বর। তানভীরের মৃত্যুর পর রাসেল আরো দৃঢ় প্রত্যয়ী হয়ে ওঠে। কিন্তু তার নিজের জীবনও ছিল বৈষম্য আর বঞ্চনার গল্পে ঘেরা। পরিবারের মাসিক আয় ছিল অত্যন্ত সামান্য, আর অর্ধপেট খেয়ে দিন কাটানোর দিনগুলি যেন তাদের নিয়তির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাসেল জানত, সংগ্রাম ছাড়া কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। তিনি নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, যদিও অনেক সময় বই কেনার টাকাও তাদের হাতে থাকত না। রাসেলের মা প্রায়ই বলতেন, "রাসেল, তুই বড় হবি, আমাদের সব কষ্ট মিটিয়ে দিবি।" তার মায়ের এই আশার কথাগুলো রাসেলের মনকে শক্তি যোগাত, যদিও তার সামনে ছিল দারিদ্রের কঠিন বাস্তবতা। শাহাদাতের ঘটনা ৫ আগস্ট সকালের সূর্যটা একটু অন্যরকম। কেমন যেনো রক্তিম। লাল আবরণ যেনো ছাড়ছেই না। হঠাৎ করেই চারিদিকে অন্ধকার করে মেঘের ঘনঘটা। অঝোর ধারায় নামলো অবারিত ধারা। কেইবা জানতো এই বৃষ্টি স্বৈরাচারির বিদায়ের শুভলক্ষণ হিসেবে পরিণত হবে। সারা দেশের ছাত্রজনতা ঢাকার দিকে রোড টু ঢাকার কর্মসূচিতে রওনা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে। রাসেল বকাউলও ছিলো তাদের মধ্যে অন্যতম একজন যোদ্ধা। রাজধানীর যাত্রাবাড়ি ছিলো অন্যতম কুরুক্ষেত্র। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, সকালে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে অংশ নেন রাসেল বকাউল। তিনি তার চার বন্ধুর সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেন। সকাল ১০:৩০ মিনিটে মিছিলটি যাত্রাবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে, সেখানে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ হঠাৎ লাঠিচার্জ ও গুলি চালায়। পুলিশের একটি গুলি রাসেলের শরীরের ডান পাশ দিয়ে প্রবেশ করে এ বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। আহত অবস্থায় রাসেলের বন্ধুরা তাকে দ্রুত ঢাকার মাতুয়াইল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সকাল ১০:৩৩ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর, চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই নির্মম ঘটনায় রাসেল শহীদ হন এবং তার মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনের ইতিহাসে একটি হৃদয়বিদারক অধ্যায় হয়ে ওঠে। শহীদ রাসেল সম্পর্কে অনুভুতি শহীদ রাসেল বকাউলকে নিয়ে তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন, সহপাঠী, ও এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে। রাসেল ছিলেন একজন শান্ত, সদালাপী ও পরিশ্রমী যুবক। পরিবারের প্রতি তার দায়বদ্ধতা এবং সহপাঠীদের সঙ্গে তার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাকে সবার প্রিয় করে তুলেছিল। তিনি ঢাকায় থাই গ্লাস কারখানায় কাজ করতেন, কিন্তু দেশের বৃহত্তর কল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়ের দাবিতে তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। রাসেলের মা নীলু বেগম জানিয়েছেন, রাসেল পরিবারের ছোট সন্তান হলেও সবার দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করতেন। তার বাবা নুরুল ইসলামও বলেছিলেন, রাসেল তার পরিবারের গর্ব ছিল এবং তার মৃত্যু তাদের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। রাসেলের সহপাঠী এবং বন্ধুরা বলেছে, তিনি একজন আদর্শবান মানুষ ছিলেন এবং তার আত্মত্যাগ তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। এলাকার মানুষ রাসেলের এই আত্মত্যাগকে দেশের জন্য বিরাট ত্যাগ হিসেবে দেখছে এবং তারা মনে করেন, রাসেলের মতো যুবকরা সমাজে পরিবর্তনের সূচনা করেন. প্রতিবেশী সোহাগ বকাউল বলেন, বকাউল নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। সকলকে নামাযে ডাকতেন। শান্ত ও ভদ্র ছিলেন। কারও সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন না। এক নজরে শহীদ রাসেল বকাউল নাম : রাসেল বকাউল জন্ম তারিখ : ১০ জুন ২০০২ পেশা : থাই গ্লাস কর্মচারী স্থায়ী ঠিকানা : পূর্ব রাজারগাঁও, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর পিতা : নুরুল ইসলাম বকাউল, পেশা-কৃষি,বয়স-৫০ মাতা : নীলু আক্তার, পেশা-গৃহিনী, বয়স-৪২ পরিবারের সদস্য সংখ্যা-০৮ বড় বোন : মিসেস হাসিনা (২৮), বিবাহিত বড় ভাই : হাসান বকাউল (২৫), দোকানদার ছোট ভাই : কাউসার বকাউল (১৮), দিনমজুর ছোট ভাই : রুহুল আমিন (২২), মৌলভী ছোট বোন : রেখা (২৭), বিবাহিত ছোট বোন : রেহেনা আক্তার (১৬), বাহারগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ব্যক্তিত্ব : শান্ত স্বভাবের ও ভালো মনের মানুষ-নিয়মিত নামাজ পড়তেন-ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করতেন মৃত্যুর স্থান : যাত্রাবাড়ি, ঢাকা মৃত্যুর তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ মৃত্যুর কারণ : বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পুলিশের গুলিতে নিহত জানাজার স্থান : রাজারগাঁও বাজার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ দাফন : নিজ বাড়িতে প্রস্তাবনাসমূহ ১ : আর্থিক সহায়তা: পরিবারের দৈনন্দিন খরচ, চিকিৎসা ব্যয়, এবং শিক্ষার জন্য সহায়তা ২ : বাবার জন্য কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিলে উপকার হবে ৩ : ছোট ভাই-বোনদের লেখা-পড়ার খরচ যোগানে সগযোগীতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রাসেল বকাউল

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মোহাম্মদ ওয়াসিম

মো: রোহান আহমেদ খান

শামছুল ইসলাম

মো: আজাদ সরকার

ছাইদুল ইসলাম

ওমর বিন নুরুল আবছার

জামসেদুর রহমান জুয়েল

মোহাম্মদ সজিব

মো: ইউসুফ

সাদ আল আফনান

মো: ওসমান পাটওয়ারী

মো: জুয়েল

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo