Image of মো: সাহাদাত হোসেন

নাম: মো: সাহাদাত হোসেন

জন্ম তারিখ: ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : হোটেল কর্মচারী শাহাদাতের স্থান : ফরিদগঞ্জ থানার সামনে, চাঁদপুর

শহীদের জীবনী

শহীদ পরিচিতি পৃথিবীর বুকে সবাই সমানভাবে জন্ম নেয় না। কেউ সুখের ভিতরে কেউ দুঃখের ভিতরে জন্ম নেয়। পিতা মাতার আদর যত্ন পেয়ে অনেকে বেড়ে ওঠে আবার কেউ বেড়ে ওঠে পিতা মাতার আদর যত্ন ছাড়া দুঃখ কষ্টের মধ্যে। শহীদ শাহাদাত এরকমই একজন ছেলে ছিলেন তিনি ছোটকাল থেকেই অনেক কষ্ট করে বেড়ে উঠেছিলেন। ২০০৮ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি বাবা খলিলুর রহমান ও মা শিরতাজের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় শহীদ সাহাদাত হোসেন। দুই ভাইয়ের মধ্যে সে বড়। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা গ্রামে তার জন্ম ও বেড়ে উঠা। ছোট বেলায় বাবা মার বিচ্ছেদের দরুন নানা নানীর কাছেই বড় হয় সে। অভাবের সংসারে জীবিকার তাগিদে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করত। নানা কৃষি কাজ করেন। পরিবার বলতে এই নানা নানিই ছিলো। তারা অভাবের কারণে ছোটভাইকে দত্তক দিয়ে দেয় নানি। অবশেষে সবাই দুনিয়াতে থাকলো, সন্ত্রাসী পুলিশের গুলিতে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো। অনেকেই হয়তো ভাবছে ছেলেটা অনেক কষ্ট করেছিল আবার কষ্টের মধ্যেই মরতে হলো কিন্তু না শাহাদাতের মৃত্যু কষ্টের না শাহাদাতের মৃত্যু সৌভাগ্যের। আর সেই মৃত্যুই তিনি পেয়েছেন। যেভাবে শহীদ হলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলছেন, ''এই ১৫ বছরে বেশিরভাগ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তারা নিজেরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের যে ক্ষমতার ভিত্তি, তার কোনটাই টেকসই ছিল না। কারণ তারা জনগণ থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন।''ফলে মানুষের একটা ক্যাটালিস্ট বা স্ফুলিংগের দরকার ছিল। সেটাই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দিয়ে শুরু হয়েছে, তিনি বলছেন।ফলে সরকার বিরোধী একটা আন্দোলন যখন জোরালো হয়ে ওঠে, সেই আন্দোলন ঘিরেও মানুষের ক্ষোভের জন্ম হয়, তখন সেনাবাহিনী, কারফিউ বা পুলিশের পরোয়া না করে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার হাজার হাজার মানুষ গণভবনের উদ্দেশ্যে পথে নেমে এসেছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, “১৫ বছরের একটা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ, জিনিসপত্রের দাম, গণপরিবহনের অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, ব্যাংকিংয়ের অনিয়ম সব কিছু নিয়ে ক্ষুব্ধ মানুষ কোটা আন্দোলনের একটা উপলক্ষ্য করে একটা পরিবর্তনের আশায় নেমে এসেছে।” সেই আন্দোলনে অংশ নেয়া তাহমিনা আক্তার বিবিসিকে বলেছিলেন, “আমার সরকারি চাকরির দরকার নেই, চাকরির আবেদন করার মতো বয়সও নেই। কিন্তু আমাদের সাথে যে মিথ্যাচার করা হচ্ছে, নির্যাতন করা হচ্ছে, আমাদের যে ভয়ভীতির মধ্যে রাখা হচ্ছে, সেটার অবসান চাই। সেটার জন্যই আজ আমি পথে নেমে এসেছি।” অবশেষে আন্দোলন সফল হল কিন্তু কিছু নিষ্পাপ সাধারণ মানুষের জীবন কেড়ে নিল আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন ও তার দোসররা। আগস্টের ৫ তারিখে খুনি হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাবার পর যখন পুরো দেশ আনন্দ উল্লাসে ব্যস্ত তখন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থানার সামনে রেস্টুরেন্টের কর্মচারী সাহাদাত কপালে গুলিবিদ্ধ হয়। সে প্রতিদিনের মত দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিল। সে দেখতেছিল দীর্ঘ ১৫ বছর জোর করে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার কিভাবে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে, ভারত থেকে ভাড়া করে নিয়ে আসা সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে গণহত্যা চালিয়েও মানুষের আন্দোলনকে নস্যাৎ করা গেল না। সে ভেবেছিল নিমিষেই আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে কাউকে রাজা থেকে ফকির বানাতে পারেন এবং ফকির থেকে রাজা বান পারেন, শেখ হাসিনার পতন সেটাই প্রমাণ করে। উন্মত্ত জনগণ থানার সামনে গেলে খুনি পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালায়। বিজয়ের পরেও সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী এভাবে গুলি করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করবে সেটা কেউ কল্পনা করেনি। পুলিশ যখন সাধারণ মানুষের উপর গুলি চালিয়েছিল ছিল হঠাৎ একটা বুলেট এসে বিদ্ধ হয় সাহাদাতের কপালে। ওখানেই শাহাদাত বরন করে সে।পুলিশের ঘাতক বুলেট কপাল ভেদ করে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। মৃত্যুর কাছে হেরে যান সাহাদাত। অকালে ঝরে পড়ে তাজা প্রাণ। কেমন আছে সাহাদাতকে হারিয়ে তার পরিবার পরিবার বলতে তার নানীর পরিবার। নানা কৃষিকাজ করেন। সে নিজে একটা রেস্টুরেন্টে কাজ করতো। ছোটবেলায় মা-বাবার বিচ্ছেদ ঘটে। নানীর কাছেই মানুষ হয়। আন্দোলনে শহীদ হবার পর তার পরিবারে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যায়। অভাবে দিনাতিপাত করছেন তার বৃদ্ধা নানা-নানী। একমাত্র নাতিকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েন তারা। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় অনুভূতি মামার বক্তব্য : শাহাদাতের মত ছেলেই হয় না। সে নামাজ-কালাম পড়তো মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করত এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। সত্যের পথে থাকার চেষ্টা করত। ছোটবেলায় বাবা মায়ের বিচ্ছেদ ঘটে। তারা দুই ভাই ছিলো। অভাবের তাড়নায় ছোটভাইকে দত্তক দিয়ে দেন নানী। সে নিজে বড় হয় নানীর কাছে। মামা একটা গ্যারেজে কাজ করে। তার বাবা বরিশালে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে ছেলেদের সাথে তার কোনো যোগাযোগ নাই। যে কারণে বাবা জানেও না যে তার সন্তান শহীদ হয়েছে। শাহাদাতকে হারিয়ে নানী বলেন, আমার নাতি ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে মানুষ হয়েছে। মা-বাবার ভালোবাসা পায়নি কখনো। আমি কষ্ট করে বড় করেছি। সে খুবই শান্ত প্রকৃতির, সে নিয়মিত নামাজ পড়ত। নানি শোকাহত হয়ে ভারাক্রান্ত কণ্ঠে কেঁদে কেঁদে বলেন "সবাই আসে শুধু আমার নানাভাই আসে না" একনজরে শহীদ সাহাদাত হোসেন শহীদের পূর্ণ নাম : সাহাদাত হোসেন জন্ম তারিখ : ২৫-০২-২০০৮ জন্মস্থান : বালিথুবা, ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর পেশা : হোটেল কর্মচারী বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: বালিথুবা ইউনিয়ন, বালিথুবা, থানা: ফরিদগঞ্জ, জেলা: চাঁদপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: বালিথুবা ইউনিয়ন, বালিথুবা, থানা: ফরিদগঞ্জ, জেলা: চাঁদপুর পরিবার : পিতার নাম- : খলিলুর রহমান : মাতার নাম- : মোসা: শিরতাজ : নানা ও নানী আঘাতকারী : আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী পুলিশ আহত হওয়ার স্থান ও সময় : ফরিদগঞ্জ থানার সামনে ০৫-০৮-২০২৪ সন্ধ্যা ৭ টায় মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ০৫-০৮-২০২৪, সন্ধ্যা ৭ টায়, ফরিদগঞ্জ থানার সামনে জানাজা : ০৬-০৮-২০২৪, সকাল ১০ টায় কবরস্থান : নিজে গ্রামের কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাহাদাত হোসেন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

 মো: জাফর আহাম্মদ

মো: নাজমুল কাজী

মো: ইউসুফ

মো: মাহমুদুল হাসান

মো: রফিকুল ইসলাম

মো: ইয়াছিন

হাফেজ মাসুদুর রহমান

মো: ওয়াকিল আহমদ শিহাব

মো: ইমন গাজী

শাহিনুর বেগম

সাইফুল ইসলাম আলিফ

মো: কামরুল মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo