জন্ম তারিখ: ৮ মে, ১৯৯৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ব্যবসা শাহাদাতের স্থান : টংগী বোর্ড বাজার, গাজীপুর
শহীদ পরিচিতি শহীদ আরিফন বেপারীর ডাক নাম রাজিব মিয়া। তিনি ১৯৯৫ সালে চাঁদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মৃত মো: রজব আলী ব্যাপারী এবং মাতার নাম আমেনা বেগম। তাঁর পিতা একজন কৃষক। কৃষি কাজ করেই সংসার চালান। দরিদ্রতার কারনে আরিফ পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। ছোট থেকেই কাজে নেমে পড়তে হয়েছে। কখনো টোকাইয়ের কাজ করতেন। এক সময় ভাঙ্গারির ব্যবসা শুরু করেন। স্বৈরাচার সরকারের পুলিশ বাহিনী তাঁকেও ছাড়ল না। বুলেটের আঘাতে অকালে ঝড়ে গেল শহীদ আরিফ ব্যাপারীর জীবন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ আরিফ বেপারীর পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ। সাত ভাইবোনের পরিবারে বটবৃক্ষ বাবা অনুপস্থিত। তাদের বাড়িতে একটা দুচালা ভাঙ্গা টিনের ঘর আছে। আরিফের একটি ছেলে সন্তান আছে। শহীদ আরিফ ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে। এতিম ছেলেকে দেখার কেউ নেই। যেভাবে শহীদ হলেন শহীদ আরিফ ছিলেন একজন সংগ্রামী মানুষ। জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত তাঁকে লড়াই করতে হয়েছে। কখনও করতে হয়েছে বোতল টোকানোর কাজ আবার কখনো বা করতে হয়েছে ভাঙ্গারির দোকানের কাজ। স্বৈরাচারের দোসররা এই নিরপরাধ মানুষটাকেও রেহায় দিল না। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরন করতে হয় তাঁকে। ২০২৪ সালের জুলাই মাস ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত মাস। স্বৈরাচার সরকার শেখ হাসিনা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। গুম, খুন, নির্যাতন,গ্রেফতার ইত্যাদির মাধ্যমে জনগনকে ভয় দেখানো হয়। সারাদেশে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন দেওয়া হয়। তাতেও আন্দোলন দমাতে না পেরে সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন প্রদানের মাধ্যমে জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাঙ্গা আরোপ করা হয়। ২০ জুলাই ২০২৪ জনগণ সরকারের দেওয়া কারফিউ ভঙ্গ করে রাস্তায় নেমে আসে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সাথে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ ঘটে। একদিকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা অপরদিকে নিরস্ত্র জনতা। এদিন টংগী বোর্ড বাজার ছিল আন্দোলনের হোস্ট পয়েন্ট। সাধারণ জনতা মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসলে পুলিশ সেখানে বাঁধা প্রদান করে। একপর্যায়ে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি টিয়ারশেল, গ্রেনেড, বোমা, বুলেট, ছররা গুলি নিক্ষেপ করে। এলোপাতাড়ি গুলি আর টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় সবাই দিগি¦দিক ছুটাছুটি শুরু করে। গুলি বিদ্ধ হয়ে একের পর এক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা। শহীদ আরিফ বেপারী এ সময় সেখানেই ছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি এসে তাঁর মাথায় লাগে। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। এভাবেই জালিম সরকার শহীদ আরিফের মত একজন নিষ্পাপ ছেলের প্রাণ কেড়ে নেয়। তাঁকে রাঢ়িকান্দি গোরস্থান চাঁদপুরে সমাহিত করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের চাচা বলেন, আরিফ খুব নম্র-ভদ্র স্বভাবের একজন মানুষ ছিল। ভাঙারির ব্যবসা করে সংসার চালাত। তাঁর কোন বসতভিটা নেই। দিন আনে দিন খায়। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি বিপাকে পড়েছে। একনজরে শহীদ মো: আরিফ বেপারী নাম : মো: আরিফ বেপারী পিতা : জনাব রজ্জব আলী মাতা : আমেনা বেগম জন্ম : ০৮-০৫-১৯৯৫ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: টরকী এওয়াজ, পোস্ট: গজরা বাজার, উপজেলা: মতলব উত্তর, জেলা: চাঁদপুর বর্তমান ঠিকানা : ঐ শাহাদাতের তারিখ ও স্থান : ২০ জুলাই ২০২৪, টংগী বোর্ড বাজার প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদ পরিবারে স্থায়ী বাসস্থান প্রয়োজন