জন্ম তারিখ: ১ মার্চ, ১৯৮৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : দিনমজুর শাহাদাতের স্থান : খিলগাঁও, ঢাকা
শহীদ পরিচিতি জরুন মিয়া ও জাহেরা খাতুন দম্পতি সংসার পেতেছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার পাইকা গ্রামের উত্তর পাড়ায়। কিছুদিন পর তাঁদের ঘর আলোকিত করে ১৯৮৮ সালের ১ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শহীদ জসিম উদ্দিন। বাল্যকাল থেকে সংসারে অভাব অনটন দেখে বড় হন তিনি। বাবা মায়ের টানাপড়েনের সংসারে ইচ্ছে থাকলেও লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি। কৈশোরেই সংসারের দায়িত্ব বর্তায় শহীদের উপর। শুরু হয় জীবন যুদ্ধের অবিরত সংগ্রাম। রাজধানীর জীবন কিছুদিন পর নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানী শহরে আসেন শহীদ জসিম উদ্দিন। দিনমজুরীর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে সংসারের হাল ধরা শুরু করেন তিনি। নতুন শহরের জনজীবনে বিশাল অট্টালিকার ভিড়ে পরিবারের সুখ খুঁজতে মরিয়া এক যুবক। দিনরাত পরিশ্রম করে বাবা-মা’কে নিজের ঘাম ঝরানো অর্থ পাঠাতে দেরী করে না জসিম। ধীরেধীরে পরিবারের বুভুক্ষ জীবনের অবসান ঘটে। এভাবেই চলতে থাকে উদ্যমী এক যুবকের পরিশ্রমী জীবন। ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ধীরেধীরে পরিবারের দায়িত্ব পালনে যেন এক অদম্য অভিভাবক হয়ে ওঠেন জসীম উদ্দিন। রঙিন জীবনে পদার্পণ নিজের একাকীত্বকে দূর করতে সোনালী জীবনে পদার্পণ করেন শহীদ জসীম উদ্দিন। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে রাজধানীর খিলগাঁও শহরে সংসার পাতেন। সেখানেই একে একে জন্ম নেয় কাউসার (১২), তামান্না (৭), সুমাইয়া (৫), সুরাইয়া (৩), ও ফাতেমা (২)। সংসার যেন চাঁদের হাট হয়ে ওঠে। স্ত্রী ও সন্তানদেরকে নিয়ে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করতে থাকে জসীম। হঠাৎ তাঁর জীবনে ছন্দ পতন ঘটে। চিরদিনের জন্য তাঁর পিতা জনাব জরুন মিয়া মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে পাড়ি জমান। পিতার শোকে একপ্রকার ভেঙ্গে পড়েন তিনি। ধীরে ধীরে শোক কেটে ওঠে জসীমের। আবারও কর্ম জীবনে পদার্পণ করেন তিনি। বড় ছেলে ও মেয়েকে মাদ্রাসায় ভর্তি করেন। এভাবেই রঙ্গিন জীবন কাটতে থাকে শহীদ দম্পতির। শাহাদতের প্রেক্ষাপট ১৯ জুলাই ২০২৪, রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় শিক্ষার্থীদের মিছিল চলাকালীন পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। আন্দোলনকারীদের উপর হঠাৎ গুলি বর্ষণে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হঠাৎ একটি গুলি জসিম উদ্দিনের পেটে বিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। তখন সময় দুপুর ৩:৩০ টা। গোলাগুলির মাত্রা এতটাই তীব্র ছিল যে পথচারী বা শিক্ষার্থীদের কেউ তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেনি। ঘটনা স্থলে শাহাদত বরণ করেন শহীদ জসীম উদ্দিন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ জসিম উদ্দিনের পরিবার বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে পরিবারের আয় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়েছে। আর্থিক অসঙ্গতির কারণে শহীদ সন্তানদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যৎ এই মুহূর্তে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শহীদের ছোট মেয়ে প্রতিবন্ধি। তার চিকিৎসা ও বিশেষ যত্ন প্রয়োজন হয়। শহীদ স্ত্রীর স্থায়ী কোন আয় না থাকায় দৈনন্দিন জীবন এবং শিশুদের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানো তাঁর পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অভিমত শহীদ জসিম উদ্দিন সম্পর্কে তার পরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যদের বক্তব্য অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তাঁর বড় মেয়ে তামান্না বলেন, “আমার আব্বুর কথা খুব মনে পড়ে। আব্বু আমাদের সবার জন্য অনেক কষ্ট করতো।” শহীদের বন্ধু বলেন, “জসিম ছিলেন একজন নীতিবান ও ধার্মিক মানুষ, যিনি নিয়মিত নামাজ পড়তেন এবং সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন।” শহীদের প্রতিবেশী বলেন, “জসিম ছিলেন একজন পরিশ্রমী ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি পরিবারের সব দায়িত্ব নিজের হাতে বহন করতেন।” একনজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : শহীদ জসীম উদ্দিন পিতা : মৃত জরুন মিয়া মাতা : জাহেরা খাতুন শাহাদতের তারিখ ও স্থান : ১৯/০৭/২০২৪ বিকাল ৪.০০ টা, খিলগাঁও, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া, উপজেলা সরাইল, গ্রাম: পাইকা, উত্তর পাড়া সন্তানদের বিবরণ : ১. মো: কাউসার, বয়স: ১২ বছর, মাদরাসা শিক্ষার্থী : ২. মোসা: তামান্না, বয়স: ০৭ বছর, মাদরাসা শিক্ষার্থী : ৩. মোসা: সুমাইয়া, বয়স: ০৫ বছর : ৪. মোসা: সুরাইয়া, বয়স: ০৩ বছর : ৫. মোসা: ফাতেমা, বয়স: ০২ বছর, (প্রতিবন্ধী) প্রস্তাবনা ১. শহীদ জসিম উদ্দিনের পরিবারের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। দৈনন্দিন জীবনের খরচ এবং শিশুদের প্রয়োজন মেটাতে আর্থিক অনুদান জরুরি হয়ে পড়েছে ২. শহীদ পরিবারের জন্য মাসিক বা এককালীন ভাতা প্রদান এবং শহীদ কন্যা ফাতেমার বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন।