Image of মো: আলাউদ্দিন

নাম: মো: আলাউদ্দিন

জন্ম তারিখ: ১৫ জুন, ১৯৮৯

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসা (পলিথিনের ব্যবসায়ী) শাহাদাতের স্থান : চিটাগাং রোড, নারায়ণগঞ্জ

শহীদের জীবনী

শহীদ পরিচিতি শহীদ আলাউদ্দিন ১৯৮৯ সালে চাঁদপুর জেলার এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জনাব মো: সিদ্দিকুর রহমান এবং মাতা মোসা: সালেহা বেগম। শহীদ আলাউদ্দিন অল্প বয়সেই পিতা-মাতা দুজনকেই হারিয়ে এতিম হয়ে যান। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই ছিলেন ছোট। বাবা-মাকে হারিয়ে ভাই-বোনদের কাছেই তিনি মানুষ হতে থাকেন। শুরু হয় সংগ্রামি পথ চলা। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন আর দায়িত্বও বাড়তে থাকেন। বড় ভাইরা সবাই বিয়ে করে আলাদা সংসার বাঁধে। এক সময় শহীদ আলাউদ্দিন জীবিকার উদ্দেশ্যে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় এসে পলিথিনের ব্যবসার শুরু করেন। যা আয় হয় তা দিয়ে নিজে চলেন। পাশাপাশি বাড়িতে অবিবাহিত ছোট বোনের কাছে পাঠান। সবে মাত্র স্বপ্ন দেখতেছিলেন কিছু টাকা জমিয়ে বিয়ে করে সংসার বাঁধবেন। তা আর হল না। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বৈরাচার সরকারের নির্মমতার বলি হতে হয় তাঁকে। আন্দোলনে সরকার ইজরাইলি কায়দায় হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালায় জনতাকে টার্গেট করে। এই গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরন করেন শহীদ আলাউদ্দিন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ আলাউদ্দিন এক দরিদ্র ঘরের সন্তান। তাঁর পিতা-মাতা দুজনেই মারা গেছেন অনেক আগেই। তার ৪ ভাই এক বোন। বড় ভাইরা সবাই বিবাহ করে আলাদা সংসার করছেন। আর ছোট বোনের এখনো বিয়ে হয়নি। ছোট বোনের দায়িত্ব আলাউদ্দিনের উপরেই এসে পড়েছিল। তাদের কোন জায়গা জমি নেই। থাকার জন্য ভালো কোন ঘর নেই। শহীদ আলাউদ্দিন ঢাকার নারায়ণগঞ্জে পলিথিনের ব্যবসা করে তাঁর নিজের এবং বোনের খরচ চালাতেন। বাকি ভাইদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো না। শহীদ আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে সকলেই শোকাহত। তাঁর ছোট বোনের দায়িত্ব এখন কে নিবে। ছোট বোনের বিয়ের ব্যবস্থা কে করবে? শহীদ হওয়ার ঘটনা ২০০৮ সালে এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামীলীগ। দলপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আগে সুশাসনের কথা বললেও ক্ষমতায় এসে রুপ বদলায়। ধীরে ধীরে ভালো মানুষের চাদরে ঢাকা স্বৈরাচারের আসল চেহারা বেরিয়ে আসতে থাকে। ক্রমেই দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। স্বৈরাচারি শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে মানুষের ভোটের অধিকার হরণ করে। দিনের ভোট রাতে, একজনের ভোট আরেকজন দেওয়ার ঘৃণ্য কালচার সৃষ্টি করে। শুধু তাই নয় দুর্নীতি, ঘুষ, মাদক, চোরাচালান, অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ, দলীয় লোকদের দিয়ে জনগনের সম্পদ লুট, দ্রব্য মূল্যের মাত্রাতিরিক্ত উর্দ্ধগতি ইত্যাদির মাধ্যমে দেশকে একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। সরকারি চাকরিতে দুর্নীতি, ঘোষের মাধ্যমে দলীয় অযোগ্য লোকদের নিয়োগ, কোটা প্রথার মাধ্যমে মেধাবীদের বঞ্চিত করাসহ নানাবিধ বৈষম্য তৈরি করা হয়। বৈষম্য চরম আকার ধারণ করলে জনমনে অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে। ২০১৮ সালে ছাত্ররা কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু করে। সেখানে আন্দোলনকারীদের উপর সরকার দলের ছাত্রলীগের ক্যাডার বাহিনী হামলা চালায়। তাতেও আন্দোলন থামাতে না পেরে এক নির্বাহী আদেশে কোটা প্রথা বাতিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কার্যত কোন বাস্তবায়ন দেখা যায় না। ২০২৪ সালে আবারও এই বিষয়টা সামনে চলে আসে। আদালতের এক আদেশে সরকারের নির্বাহী আদেশকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। শুরু হয় আন্দোলন। কোটার নামে চরম বৈষম্য এদেশের মুক্তিকামী মানুষ বরদাস্ত করতে পারে না। একদিকে বৈষম্য আর জনগনের মনে চেপে থাকা দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ আন্দোলনে ফেটে পড়ে। শুরুতে কোটা সংস্কার আন্দোলন থাকলেও তা ক্রমেই বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন এবং সর্বশেষ সরকারের পতনের এক দফা আন্দোলনে রুপান্তরিত হয়। আন্দোলন দমনে সরকার মরিয়া হয়ে উঠে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ডিবি, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সরকার আন্দোলনকারীদের উপর নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। গুলি করে মানুষ হত্যা করে। সরকারের বাহিনীদের সাথে যুক্ত হয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বন্দুকধারী হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বর্বরতা অতীতের সকল শাসককে ছাড়িয়ে যায়। রাতের আধারে ঘুমন্ত মানুষকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়। নিরপরাধ মানুষকে শুধুমাত্র বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য পিটিয়ে হত্যা করে মৃত লাশের উপর নৃত্য করে স্বৈরাচারের দোসররা। আন্দোলন দমনে হেলিকপ্টার থেকে ভারি অস্ত্র দিয়ে জনতাকে টার্গেট করে গুলি করা হয়। এমনি এক বর্বরতার শিকার শহীদ আলাউদ্দিন। ২০ জুলাই আন্দোলন চলাকালে আলাউদ্দিন যাত্রাবাড়ির চট্টগ্রাম রোডে অবস্থান করছিলেন। সেসময় সেখানে জনতা ও পুলিশ বাহিনীর মধ্যে চরম সংঘর্ষ চলছিল। হেলিকপ্টার থেকেও ভরি অস্ত্র দিয়ে গুলি চালাচ্ছিল। হঠাৎ একটি গুলি এসে আলাউদ্দিনের গায়ে লাগে। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আলাউদ্দিনের রক্তাক্ত দেহ। সেখানেই জীবন বায়ু ফুরিয়ে যায় শহীদ আলাউদ্দিনের। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের ভাবি বলেন, আলাউদ্দিন ছিল আমার ছোট দেবর। ওর কেউ নেই। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে আমাদের কাছেই মানুষ হয়েছে। আমরা কখনও তাঁকে পর ভাবতাম না। সবসময় আপন ভাইয়ের মত স্নেহ করতাম। সে খুব ভালো মানুষ ছিল। সবসময় আমাদেরকে সম্মান করতো। এক নজরে শহীদ আলাউদ্দিন নাম : শহীদ আলাউদ্দিন জন্ম : ১৫-০৬-১৯৮৯ পিতা : মরহুম মো: সিদ্দিকুর রহমান মাতা : মরহুম মোসা: সালেহা বেগম স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: শেখনগর ইউনিয়ন: ফরাজীকান্দি থানা: মতলবনগর, জেলা: চাঁদপুর আহত হওয়ার তারিখ ও স্থান: ২০ জুলাই ২০২৪, চিটাগাং রোড, নারায়ণগঞ্জ শাহাদাতের তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪ প্রস্তাবনা ১. শহীদের সহোদরকে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আলাউদ্দিন
Image of মো: আলাউদ্দিন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ফারুক

মোহাম্মদ সজিব

মো: ফয়সাল সরকার

মো: মাহবুবুল হাসান

মো: রাসেল বকাউল

 কাউছার হোসেন

মো: রোহান আহমেদ খান

শাহাদাত হোসেন শামীম

মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির

মো: আরিফ বেপারী

আওয়াল মিয়া

রবিন মিয়া মিঠু

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo