জন্ম তারিখ: ৬ জুন, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা:টেকনিশিয়ান, শাহাদাতের স্থান: যাত্রাবাড়ি
মো: জুয়েল (৩৪) ছিলেন একজন টেকনিশিয়ান। তার বাবা সিরাজুল ইসলাম ও মাতা নিলুফা বেগম। তিনি স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকার ডেমরায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। যেভাবে শহীদ হলেন ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল। একবারের জন্যেও ভোট দিতে পারেননি জুয়েল। কথা বলার অধিকার থেকে বঞ্চিত জুয়েলের মতো তারুণেরা। ফেইসবুকে অধিকার আদায়ের জন্য সামান্য পোস্ট দেয়ার ফলে আটক-গুম-জেল-জুলুমের স্বীকার হতে হয়েছে প্রতিবাদকারীদের। সর্বত্র বৈষম্য। অদক্ষ লোকেরা চাটুকারিতা করে ক্ষমতার ভাগিদার হতে থাকে। দক্ষদের দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। লুটপাট-অর্থ পাচারের ফলে জনতার মাঝে নিরব দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। জুয়েল একজন সাধারণ টেকনেশিয়ান। ঘরে তার অসুস্থ বাবা। বাবা মা দুজনেই অসুস্থ। তাদের চিকিৎসা খরচ, পরিবারের মুখে দুবেলা খাবার তুলে দেয়া, আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নেয়া প্রভৃতি কাজ গুলো করতে যেয়ে তাকে রাত-দিন একাকার করে কাজ করতে হয়। তারপরেও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের চাঁদাবাজি, সর্বত্র অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির ফলে জুয়েল মাঝে মাঝে থমকে যায়। সর্বত্র অব্যবস্থাপনা দেখে প্রতিবাদ করার ইচ্ছে থাকলেও চুপ করে থাকেন। আর অপেক্ষায় থাকেন সুযোগের। ২০২৪ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে জুয়েল ভাবেন এইতো সুযোগ সর্বত্র বৈষম্যের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর। এসময় রুখে না দাঁড়ালে তার সন্তানদের আগামীদিনে কষ্ট করে যেতে হবে। গোলামী করতে হবে স্বৈরাচারী খুনি অবৈধ সরকারের। এসব চিন্তা থেকে জুয়েল স্বৈরাচারী সরকার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেন। প্রতিদিন বৈষম্য বিরোধী মিছিলে যুক্ত হতেন। ৪ আগস্ট ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। ছাত্র-জনতা বুঝে ফেলেছে ঘাতক বাহিনীকে কিভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। এদিন সারাদেশে বিক্ষোভ হয়। বিক্ষোভে অত্যাধুনিক অস্ত্রের বিপরীতে ছাত্ররা ইটের টুকরো দিয়ে প্রতিরোধ করে। বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হাতে কিছু আওয়ামী পুলিশ নিহত হয়। ছাত্র-জনতার মধ্য থেকে ১৩০ জন শহীদ হয়। আহত হয় কয়েক হাজার। জুয়েল ছিলেন এই ১৩০ জনের অন্যতম। তিনি সারাদিন রাজপথে সাহসিকতার সাথে আওয়ামী গুন্ডাবাহিনীকে মোকাবেলা করেন। সরকারী সন্ত্রাসীরা বুঝতে পেরেছিল জুয়েলকে নির্মূল করতে পারলে বিজয় তাদের নিশ্চিত। যদিও তারা এটা ভাবেনি যে, এক জুয়েল বিদায় নিলে হাজার জুয়েল রাজপথ কাঁপাতে এগিয়ে আসবে। ৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৬.১৮ মিনিটের দিকে যাত্রাবাড়ি এলাকায় বুকে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ছাত্র-জনতা ফুঁসে উঠে। ইটের আঘাতে পুলিশ ও যুবলীগের গুন্ডারা বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এমন অবস্থায় আহত জুয়েলকে রিকশায় ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে কয়েকটি কথা বলতে পারেন শুধু। তার নাম ও কাকে খবর দিতে হবে এতটুকুই। এরপরে অজ্ঞান হয়ে সন্ধ্যা ৭ টার সময় মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের নাম ও ঠিকানা বলে যেতে পেরেছিলেন বলে তাকে দ্রুত সনাক্ত করা সম্ভব হয়। পরদিন জানাজা শেষে ডগাইর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ৪ আগস্টের ছাত্র-জনতার সাহসীকতা স্বৈরাচারী সরকারের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। রাত থেকে হিসেব পালটে যেতে থাকে। আন্দোলনকারীদের ফেইসবুক প্রোফাইল লাল হয়ে যাওয়া দেখে খুনিরা ভাবতে থাকে তাদের পতন যেকোন সময়ে হতে পারে। সারারাত জেগে উপায় খুঁজতে থাকে। ছাত্রদের মধ্য থেকে ঢাকামুখি লং মার্চের ঘোষণায় অবৈধ সরকার আতংকিত হয়ে পড়ে। কেমন আছে তার পরিবার শহীদের বাবা সিরাজুল ইসলাম (৬৩) অসুস্থ। তার হার্টে রিং বসানো হয়েছে। মা নিলুফা বেগম গৃহিণী। বোন শারমিন সুলতানা হাসপাতালে কাজ করেন। ছোটভাই অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ে। শহীদের স্ত্রীর নাম সুমাইয়া আক্তার সুবর্ণা। তার সন্তানেরা যথাক্রমে আবদুল্লাহ ১ বছর বয়সী এবং সিদরাতুল মুনতাহা সাড়ে ৩ বছর বয়সী। মুনতাহা তার বাবাকে খুঁজে। ভাবে সন্ধ্যা হলে অবশ্যই বাসায় ফিরবে। দরজায় সামান্য আওয়াজ হলেই দৌড়ে যায়। কিন্তু বাবা আসেনা। একমাত্র বোন ছাড়া বর্তমানে তার পরিবারে কোন আয় নেই। আত্মীয়ের বক্তব্য বোন শারমিন সুলতানা বলেন, চঞ্চল ও হাসিখুশি ছিলেন। ব্যবহারে অমায়িক ও মিশুক ছিলেন। টেকনিশিয়ান কাজে খুব দক্ষ ছিলেন। বাবা ও মায়ের প্রতি যত্নশীল ছিলেন। প্রস্তাবনা ১. মাসিক ও এককালীন সহযোগিতা প্রদান করা ২. সন্তানদের লেখা-পড়ায় সহযোগিতা প্রদান করা এক নজরে শহীদ মো: জুয়েল নাম : মো: জুয়েল পেশা : টেকনিশিয়ান জন্ম তারিখ : ৬ জুন ১৯৯০ পিতা : মো: সিরাজ মাতা : নিলুফা বেগম আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৪ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের স্থান : যাত্রাবাড়ি আক্রমণকারী : পুলিশ দাফন করা হয় : ডগাইর কবরস্থানে বর্তমান ঠিকানা : ৬৬ নং ওয়ার্ড, ডগাইর নতুন পাড়া, ডেমরা, ঢাকা স্থায়ী ঠিকানা : জিয়ারকান্দি, গৌরিপুর, তিতাস, কুমিল্লা ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে ৬ শতাংশ জমি আছে