জন্ম তারিখ: ১ জুলাই, ১৯৯৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ফার্নিচার কর্মী, শাহাদাতের স্থান : মিরপুর ১০
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অদূরে নবীনগর উপজেলার নদী ঘেঁষা একটি গ্রাম গৌড়নগর। এখানে একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে ১ জুলাই ১৯৯৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন কামরুল মিয়া। তার পিতা জনাব নান্নু মিয়া এবং মাতা মৃত শিরিনা বেগম। জনয়িতার বয়স হয়েছে। শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন তিনি। শহীদের পরিবারে চার ভাই-বোন রয়েছে। সকলের বড় মো: মাসুম মৃত্যুবরণ করেছেন। সেলিম টাইলস মিস্ত্রি। হামিম মাদরাসা শিক্ষার্থী। জোসনা ও তাকিয়া বিবাহিতা। সাদিয়া ও ঈষা বেগম গৌড়নগর মহিলা মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত রয়েছেন। কামরুল গৌড়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। এরপর ভর্তি হন স্থানীয় হাই-স্কুলে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ায় পরিবারে যেন টানাপড়েন লেগেই থাকে। স্কুলের ফিস প্রায় বকেয়া থাকায় শিক্ষকদের কাছে পরিবারের আর্থিক দীনতা তুলে ধরতে প্রায় লজ্জায় পড়তেন শহীদ কামরুল। অদম্য প্রচেষ্টায় ষষ্ট ও সপ্তম শ্রেণি পার করে ৮ম শ্রেণিতে উপনীত হন তিনি। তবে এবার আর অদম্য ইচ্ছে শক্তি বহমান রইলো না। একদিন আকস্মিক শহীদের বড় ভাই মাসুম ইন্তেকাল করলেন। একমাত্র উপার্জনকারীর হঠাৎ মৃত্যুতে পরিবারে অর্থ কষ্ট শুরু হয়। দেখা দেয় বুভুক্ষ জীবন। অনিয়মিত ভাবে কিছুদিন স্কুলে যাওয়া আসা করলেও থেমে যেতে হয় শহীদকে। পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর উপর। প্রিয় স্কুলকে ছেড়ে ফার্নিচার এর কাজ শিখতে ঢাকায় পাড়ি জমান। শুরু হয় নতুন যুদ্ধ। ভঙ্গুর পরিবারের হাল ধরতে মিরপুরের একটি ফার্নিচার কারখানায় স্বল্প বেতনে নিযুক্ত হন তিনি। মনে মনে স্বপ্ন দেখতেন এই কাজ শিখে দেশের বাইরে গিয়ে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন। সে হাসি আর ফোটাতে পারলেন না কামরুল। তাঁকে ঘাতক শেখ হাসিনার লেলিয়া দেয়া পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করলো। পরিবারকে চিরদিনের জন্য সন্তান হারা করে দিল নরপিশাচ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা ও তার দলবল। যেভাবে শহীদ হলেন তিনি ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার। শহীদ কামরুল মিয়ার কর্মক্ষেত্র বন্ধ ছিল সেদিন। সারাদেশে ২য় দিনের মত কমপ্লিট শাট ডাউন চলছিল। আগের দিনও ছাত্রজনতার সাথে আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন কামরুল। বিকেলে সহকর্মীদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণের জন্য মিরপুর ১০ এলাকায় যায়। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত পুলিশ ও ছাত্রলীগের সাথে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যম মারফত জানা যায়, সন্ধ্যার পর আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসী ও পুলিশের চরিত্র পাল্টাতে থাকে। এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ছাত্র জনতার উপর। এতে অনেক ছাত্র, সাধারণ জনতা এবং পথচারীরা গুলিবিদ্ধ হয়। পার্শ্ববর্তী ডা: আজমল হাসপাতাল ও অন্যান্য হাসপাতালে একের পর এক গুলিবিদ্ধ জনতাকে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা অনেককেই মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় কামরুলও সেদিন গুলিবিদ্ধ হয়। পথচারীরা তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। দোকানের মালিক শহীদকে ফোনে না পেয়ে এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে। পরিবারে ফোন করলে তাঁরা জানায়- ‘আমাদের সাথে কথা হয়নি।’ সকলে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজির পরও কামরুলকে না পেয়ে পরদিন ঢাকা মেডিকেলে খুঁজতে যায় শহীদের মহাজন। সেখানে মর্গে কামরুলের লাশ দেখতে পেয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মহাজন। তবে লাশ নিতে চাইলে বাঁধে বিপত্তি। পুলিশি রোষানলে পড়েন তিনি। লাশ গুম করার চেষ্টা করে পুলিশ ও আওয়ামী দোসররা। কোনভাবেই লাশ গ্রামে নিয়ে যেতে দেয়না। অনেক জোরাজোরি করার পর মৃত্যু সনদে বেওয়ারিশ উল্লেখ করে লাশ হস্তান্তর করা হয়। মৃত্যু সময় উল্লেখ করা হয় ‘২০ জুলাই বিকাল ৪:১৫ মিনিট।’ সেদিন মিরপুর ১০ এলাকায় যা ঘটেছিল- যঃঃঢ়ং://িি.িনধহমষধঃৎরনঁহব.পড়স/ড়ঃযবৎং/৮৫৫৫৯১ শহীদ কামরুল একটি অনুপম চরিত্র সাদামাটা ছিলেন শহীদ কামরুল। এলাকায় ছোট বড় সবার সাথে মিলেমিশে থাকতেন। নিয়মিত সালাত আদায় করতেন। অন্যকে সালাত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করতেন। শহীদের ছোট ভাই সেলিম বলেন, ‘আমার ভাই অনেক ভালো মানুষ ছিল। নামাজি ছিল আমার ভাই। ভাইয়ের মুখে দাঁড়ি আছে তাই পুলিশ মেরে ফেলেছে। সবসময় টুপি পাঞ্জাবী পড়তে পছন্দ করত আমার ভাই। কামরুলকে মিয়াকে হারিয়ে তাঁর পরিবার এখন দিশেহারা। শাহাদাতের দুদিন আগে বৃদ্ধ বাবার সাথে ফোনে কথা বলেছিলেন শহীদ। জানিয়েছিলেন- ‘দুইদিন পর বেতন পেয়ে টাকা পাঠাব।’ এক নজরে শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি নাম : কামরুল মিয়া পেশা : ফার্নিচার কর্মী জন্ম তারিখ ও বয়স : ০১ জুলাই ১৯৯৯ (২৫ বছর) আহত হওয়ার তারিখ : ১৯ জুলাই ২০২৪, সোমবার, আনুমানিক সনধ্যা ৭ টা শহীদ হওয়ার তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪, শনিবার, আনুমানিক বিকাল ৪: ১৫ টা দাফন করা হয় : ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নবীনগর, বিটঘর, বায়তুল মামুর মসজিদ কবরস্থান কবরের জিপিএস লোকেশন : ২৩ক্ক৫৭'৪৭.৪"ঘ ৯০ক্ক৫৯'৪৯.২"ঊ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গৌড়নগর, ইউনিয়ন: কৃষ্ণনগর, থানা/উপজেলা: নবীনগর, জেলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়া পিতা : মো. নান্নু মিয়া (৭০) মাতা : শিরিনা বেগম, মৃত ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : গ্রামে ভিটাজমিতে একটি টিনের বাড়ি আছে ভাইবোনের বিবরণ : শহীদের পরিবারে চার ভাই-বোন রয়েছে। সকলের বড় মো: মাসুম মৃত্যুবরণ করেছেন। সেলিম টাইলস মিস্ত্রি। হামিম মাদরাসা শিক্ষার্থী। জোসনা ও তাকিয়া বিবাহিতা। সাদিয়া ও ঈষা বেগম গৌড়নগর মহিলা মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত রয়েছেন সমাহিত : গৌরনগর বড় কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদের ভাই বোন কে লেখাপড়ায় সহযোগিতা করা যেতে পারে