জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : সিএনজি চালক, শাহাদাতের স্থান : কুমিল্লার দেবিদ্বার নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকা
শহীদ মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির জন্মগ্রহণ করেন ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি। তাঁর জন্মস্থান কুমিল্লা। শহীদ পিতা আলমগীর হোসেন অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন। মাতা মোছা: রিনা আক্তার একজন গৃহিণী। সাব্বির পেশায় একজন সিএনজি চালক ছিলেন। সিএনজি চালিয়ে যা উপার্জন করতেন তা দিয়েই সংসার চলত। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একজন সাহসী যোদ্ধা ছিলেন তিনি। আন্দোলন চলাকালে কুমিল্লার দেবিদ্বারে পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তেজস্বী মহাবীর শহীদ আমিনুল ইসলাম সাব্বির। পারিবারিক অবস্থা শহীদ আমিনুল ইসলাম সাব্বিরের ৩ ভাই-বোন। তাঁর ছোট ভাই মো: সিয়াম দক্ষিণ ডিংলাবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শেণিতে অধ্যয়নরত। তাঁর ছোট বোন সামিয়ার বয়স ৬ বছর। পরিবারে বাবা না থাকায় সকল দায়-দায়িত্ব শহীদ সাব্বিরকেই পালন করতে হয়েছে। সিএনজি চালিয়ে তিনি পরিবারের ব্যয় চালাতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে সবাই মর্মাহত। বর্তমানে শোকাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মত কেউ নেই! শহীদ হওয়ার ঘটনা ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে আন্দোলন শুরু হয় তা পুরো জুলাই মাস জুড়ে চলতে থাকে। কোটা সংস্কারের দাবি দিয়ে শুরু হলেও ফ্যাসিস্ট সরকারের পৈশাচিক আচরণের জন্য তা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে পরিণত হয়। হামলা-মামলা, গুম, খুন, হত্যা, নির্যাতন, অত্যাচার উপেক্ষা করে আন্দোলন দুর্বার রুপ লাভ করে। আন্দোলন দমনে সরকার গুলি চালায়,কারফিউ জারি করে জনগণের ঘরের বাহিরে বের হতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের বাড়ি থেকে তুলে এনে ডিবি হেফাজতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়। ঢাকা শহরের ছাত্র মেসগুলোতে চিরুনি অভিযান চালিয়ে সাধারণ ছাত্রদের গণহারে গ্রেফতার করে। এতকিছুর পরেও সাহসী যোদ্ধারা পিছু হটেনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই করে যায়। সারাদেশে ডিজিটাল ক্র্যাকডাউন প্রদান করে ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। ষড়যন্ত্র ছিল ছাত্রদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে আন্দোলনকে দমন করা। আন্দোলনের এক পর্যায়ে ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতা লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করে। এই ডাকে সারা দিয়ে সমগ্র বাংলাদেশ থেকে ছাত্র-জনতা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। ছাত্র-জনতার সাথে যুক্ত হয় সকল শ্রেণি পেশার মানুষ। জেলায় জেলায় সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়, আহত হয় হাজার হাজার মানুষ। এদিন কুমিল্লার দেবিদ্বার নিউমার্কেট এরিয়ায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সকাল থেকেই আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট এরিয়ায় জড়ো হতে থাকে। শহীদ আমিনুল ইসলাম ও আন্দোলকারীদের সাথে যুক্ত হয়। এক দফা এক দাবি স্বৈরাচারের পদত্যাগ, বৈষম্যের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট একশন, তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার” ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে। আওয়ামী সরকারের দোসররা আন্দোলনে বাঁধা প্রদান করে। পুলিশ,র্যাব,বিজিবি,আনসার,ও সরকারের পোষা গুণ্ডারা আন্দোলনকারীদের বিপক্ষে অবস্থান করে। এসময় তারা আন্দোলনকারীদের টার্গেট করে এলোপাতারি গুলি নিক্ষেপ করে। পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে একের পর এক আন্দোলনকারীরা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এরপর পুলিশ টিয়ারশেল ও গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এর মাঝেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে শহীদ আমিনুল ইসলামের মাথায় দুটি গুলি বিদ্ধ হয়ে মাথা ভেদ করে পিছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফিনকি দিয়ে মাথার মগজ বেরিয়ে যায় তাঁর। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মাটিতে পড়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অবস্থা এমন ভয়াবহ ছিল যে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্যও কেউ এগিয়ে আসতে পারেননি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে লোকজন এসে গুলিবিদ্ধ আমিনুল ইসলাম কে হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তখনো রক্ত পড়া বন্ধ হয়নি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাতে থাকেন তিনি। এদিকে আমিনুলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন দৌড়িয়ে আসেন। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন আত্মীয় স্বজন ও পরিবার। দীর্ঘ ৩৯ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে তিনি মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবী থেকে চিরতরে পাড়ি জমান। পরবর্তীতে তাঁর নিজ গ্রামে দাফন-কাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বর্ণনা শহীদের প্রতিবেশী আবু সাইদ বলেন, শহীদ আমিনুল ইসলাম সাব্বির অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিল। সবসময় সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করত। শহীদের বন্ধু রায়হান বলেন, আমিনুল ছিল আমার দেখা সবচেয়ে ভালো মানুষ। আল্লাহ তাঁকে জান্নাত নসিব করুন। এক নজরে শহীদ মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির নাম : শহীদ মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির পিতা : মরহুম আলমগীর হোসেন মাতা : মোসা: রিনা আক্তার জন্ম তারিখ : ০১/০১/২০০৬ জন্ম স্থান : কুমিল্লা পেশা : সিএনজি চালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: দক্ষিণ ডিংলাবাড়ি, ইউনিয়ন: দেবিদ্বার পৌরসভা, থানা: দেবিদ্বার, জেলা: কুমিল্লা বর্তমান ঠিকানা : ঐ গুলিবিদ্ধ হওয়ার তারিখ ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, কুমিল্লার দেবিদ্বার নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকা শাহাদাত বরনের তারিখ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ দাফন : ডিংলাবাড়ি পুকুরপাড় ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদ সহোদরদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে