জন্ম তারিখ: ১৫ মার্চ, ২০০৩
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: থাইগ্লাস মিস্ত্রি, শাহাদাতের স্থান: ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে
পারভেজ ১৫ মার্চ ২০০৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। পারভেজ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউপি'র ধন্যপুর গ্রামের মিন্নত হাজী বাড়ির নবী উল্যার বড় ছেলে। পারভেজ ৩ ভাই ২ বোনের মধ্যেও বড় ছিলেন। মায়ের নাম ফাতেমা বেগম, তিনি গৃহিণী। পারভেজের বাবা মানসিক রোগী। এজন্য চতুর্থ শ্রেণিতেই তার পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়। এরপর এলাকায় বিভিন্ন কাজকর্ম করে পরিবারের হাল ধরেন। ৭ বছর ধরে মিরপুরে থাই গ্লাসের কাজ করে আসছিল। তার উপার্জনের টাকায় সংসার চলত। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি মিরপুর এলাকায় ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট 'রাতে আটক দিনে নাটক' এবং নাটক কম করো পিও- এমন কিছু ডায়লগ জুলাই মাস জুড়ে আন্দোলনকারী ছাত্রদের মুখে মুখে এবং দেয়াল লিখনে উঠে এসেছিল। মূলত ডায়লগের মতোই ছিল শেখ হাসিনার মুখের কথা। ভয়ংকর অপরাধ করেও নব্য ফেরাউন হাসিনা কিছুই ঘটেনি এমন ভাব নিতেন। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে খুন করে তার লাশ পানিতে ডুবিয়ে ইলিয়াসের কান্নারত পরিবারের সাথে শান্তনাবানীর অভিনয়ের ছবি ভাইরাল করেন। দেশপ্রেমিক জনতা হাসিনার সমস্ত অন্যায়কে মুখ বুজে সহ্য করেছেন। শুরু হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। এই আন্দোলনে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিল। জুলাইতে আরম্ভ হওয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পারভেজ শুরু থেকেই অংশগ্রহণ করে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা যায়। আন্দোলনের শেষের দিকে ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকা মিরপুর ১০ নাম্বার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পারভেজ মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। মূলত আন্দোলন থামাতে তৎকালীন সরকারের দলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে পারভেজ গুরুতরভাবে আহত হয়। পরে উপস্থিত ছাত্র জনতা তাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাকে উন্নত চিকিৎকার জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে তার মাথায় অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করা হয়। হাসপাতালের বিছানায় ১ মাস ৮ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে পারভেজ। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে মৃত্যুবরণ করেন। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় তাকে গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুরের ধন্যপুর গ্রামের পারিবারিক করবস্থানে দাফন করা হয়। অর্থনৈতিক অবস্থা মানসিক ভারসাম্যহীন পারভেজের বাবা একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা। সন্তানের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে শুধু সবার দিকে নিরবে তাকিয়ে থাকে। পাঁচ ভাই বোন, সবাই একমাত্র পারভেজের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। পারভেজের মা ফাতেমা বেগম বলেন, 'আমার কলিজার টুকরা মানিক আমাকে ছেড়ে চলে গেল। এখন আমি আমার অন্য ছেলে মেয়ে এবং তার মানসিক ভারসাম্যহীন বাবাকে নিয়ে কি করব? আমার পারভেজই শুধু ইনকাম করতো। যারা আমার ছেলেকে মেরেছে আমি সরকারের কাছে এর বিচার চাই।' পরিবার ও এলাকাবাসীর বক্তব্য চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, পারভেজের মারা যাওয়ার খবরটি পেয়েছি। আমি সাথে সাথে স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বারকে তাদের বাড়িতে পাঠিয়েছি খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য। নিহত পারভেজের চাচা মহিন উদ্দিন বলেন, পারভেজ কর্মঠ ছিল। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে বড় ছিল। তার বাবা মানসিক রোগী। এজন্য চতুর্থ শ্রেণিতেই তার পড়ালেখা শেষ হয়ে যায়। এরপর এলাকায় বিভিন্ন কাজকর্ম করে পরিবারের হাল ধরে। ৭বছর ধরে মিরপুরে গিয়ে সে থাই গ্লাসের কাজ করতো। তার উপার্জনের টাকায় তাদের সংসার চলতো। পারভেজের মৃত্যুতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে পরিবারটি। থানার বক্তব্য ঢাকার কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী গোলাম মোস্তফা বলেন, পারভেজের মাথার বাম পাশে গুলি লেগেছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। শহীদ সোহরাওয়দী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে তার মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। পারভেজের মরদেহটি পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিউজ লিংক https://dailyinqilab.com/motropolis/news/685928 নাম পারভেজ হোসেন জন্ম : ১৫/০৩/২০০৩ পেশা : থাইগ্লাস মিস্ত্রি পিতা নবী উল্যা মাতা : ফাতেমা বেগম বোন : আফসানা আকতার স্থায়ী ঠিকানা : ধন্যপুর, ওয়ার্ড-০৮, বড়ইতলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : মিন্নাত আলী হাজী বাড়ি, চন্দ্রগঞ্জ সদর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী আক্রমণকারী পুলিশ আহত হওয়ার সময় : ৪ আগস্ট ২০২৪, সোমবার, সময়: সন্ধ্যা ৫.৩০টা আঘাতের ধরন : মাথায় গুলিবিদ্ধ মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ভোরের দিকে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালে
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। (সুরা তাওবা ৯:১১১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “শহীদদের জন্য জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।” (সহীহ বুখারী ২৮০০)