জন্ম তারিখ: ১০ জুলাই, ১৯৮৭
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৩ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : জুতার দোকানে চাকরি নেন, শাহাদাতের স্থান : বহদ্দারহাট
শহীদ শহীদুল ইসলাম ১০ জুলাই ১৯৮৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। দিনমজুর পিতার অভাবের সংসারে তিনি তেমন পড়াশোনার সুযোগ পাননি, তাই বেশ অল্প বয়স থেকেই জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হলে একটি জুতার দোকানে চাকরি নেন এবং পরিবারকে স্বচ্ছল করার লড়াই শুরু করেন। জীবনের এই সংগ্রামের মাঝে, বছরখানেক আগে শহীদুল বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। যদিও ভাইবোনেরা ছেড়ে চলে গিয়েছিল, বৃদ্ধা মা-বাবা আর স্ত্রীকে নিয়ে তার ছোট্ট সুখের সংসার ছিল। যখন তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হন, তখন তাদের সংসারে খুশির বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু এই খুশি দীর্ঘস্থায়ী হলো না। ৩ আগস্ট ২০২৪ সালে পুলিশের বুলেট শহীদুল ইসলামের জীবন কেড়ে নেয়, আর সেই সাথে তার পরিবারে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা চট্টগ্রাম নগরীর বাকলীয়ার এক কোলাহলপূর্ণ বস্তির কুঁড়ে ঘরে বাস করতেন শহীদ শহীদুল ইসলাম। তার সংসারটি ছিল যেমন ছোট, তেমনই ছিল দুঃখ-সুখের এক মিশ্র রূপ। বৃদ্ধ মা-বাবা আর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নিয়ে তিনি সামান্য আয়ের সংসারে টিকে থাকার চেষ্টা করছিলেন, জীবন যেন চলছিল এক অনিশ্চিত স্রোতে ভাসতে ভাসতে। জুতার দোকানে কাজ করে যা সামান্য আয় করতেন, তা দিয়ে কোনোমতে চলত সংসারের দিন। অভাবের কষাঘাত যেমন ছিল নিত্যসঙ্গী, তেমনি ছিল সংসারে নতুন অতিথির আগমনের এক আলোড়ন, যা তাদের জীবনে সামান্য হলেও আশার আলোর রেখা টেনে দিয়েছিল। এই ছোট্ট সুখের ঘরে একদিন আনন্দের ঢেউ উঠেছিল—শহীদুলের স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। কিন্তু সেই আনন্দ যেন স্থায়ী হলো না, এক মর্মান্তিক সত্য তাদের জীবনের সব স্বপ্ন চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। ৩ আগস্ট ২০২৪, এক নির্মম দিনে পুলিশের বুলেট কেড়ে নিল শহীদুল ইসলামের জীবন। সেই সঙ্গে ভেঙে গেল পরিবারটির একমাত্র অবলম্বন। বিধবা স্ত্রী, বৃদ্ধ মা-বাবা—এখন সবাই যেন সময়ের কড়াল গ্রাসে হারিয়ে গেছে এক অন্ধকারময় ভবিষ্যতের দিকে। শহীদুলের মা-বাবা, যাদের জীবনের শেষ দিনগুলোতে সন্তানের ছায়ায় আশ্রয় পাওয়ার কথা ছিল, আজ তারা সম্পূর্ণ একাকিত্বের মুখোমুখি। আর তার স্ত্রী, যার গর্ভে বেড়ে ওঠা অনাগত শিশুটি এখন পৃথিবীতে আসার আগেই হয়ে গেল অনাথ। এই শিশুটির জীবনের পথ যেন অন্ধকারে মোড়ানো, যার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিবারের এই অচলাবস্থা, এই দারিদ্রের শেকল তাদের গলা জড়িয়ে ধরেছে, আর মুক্তির কোনো উপায় নেই। শহীদুল ছিলেন তাদের জীবনের একমাত্র ভরসা, যার পরিশ্রম আর ভালোবাসার ছায়ায় তারা এতদিন বেঁচে ছিল। এখন সেই ছায়া সরে গেছে, আর তাদের জীবনে এসেছে কেবল দুঃখের অবিরাম বৃষ্টি। বস্তির নোংরা গলিতে তাদের ঘরবাড়ি আর খাদ্যসংস্থানের অনিশ্চয়তা এখন তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। শহীদুলের পরিবারের সামনে এখন শুধুই অনিশ্চিত এক ভবিষ্যৎ, যেখানে কোনোরকম সাহায্য বা সমর্থন ছাড়া টিকে থাকার পথ নেই। তার স্ত্রী আর অনাগত সন্তান যেন এক অসমাপ্ত অপেক্ষার প্রতীক, যার জন্মের আগেই সব আশা নিভে গেছে, আর তার মা-বাবা যেন এক নিঃসঙ্গ বটবৃক্ষ, যার সব পাতা ঝরে গেছে, রেখে গেছে শুধুই শূন্যতার নিঃশ্বাস। শহীদ শহিদুল ইসলামের স্বপ্ন ও বাস্তবতা শহিদ শহিদুল ইসলামের জীবনের গল্প একটি মহৎ স্বপ্ন এবং কঠিন বাস্তবতার সংমিশ্রণ। তার স্বপ্ন ছিল একটি সুখী ও সচ্ছল ভবিষ্যৎ, কিন্তু বাস্তবতা তাকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি দাঁড় করায়। তাঁর জীবন ও আত্মত্যাগ আমাদের শেখায় যে, স্বপ্ন দেখা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, বাস্তবতার কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাও তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। শহিদুল ইসলামের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা, যা স্বপ্ন এবং বাস্তবতার মাঝে ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়। শাহাদাতের বর্ণনা ৩ আগস্ট ২০২৪, দেশজুড়ে আন্দোলনের উত্তাপ যখন তুঙ্গে, চট্টগ্রাম শহরও তখন সেই উত্তাল পরিস্থিতির অঙ্গীভূত। সেদিনের আলোচনায় ছিল সাহসী ছাত্রদের প্রতিবাদ, তাদের দাবি যেন আকাশে চিরকালের মতো প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল। তৎকালীন সরকারের নির্দেশনায় পুলিশকে আন্দোলন দমনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল, আর তাদের সহযোগী হিসেবে ছিলেন বিপদজ্জনক অস্ত্রধারী আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী। দিনটি এগিয়ে চলছিল, ছাত্ররা যখন তাদের কর্মসূচির শেষ পর্যায়ে বহদ্দারহাটের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখনই হঠাৎ করে পুলিশের হামলা ঘটল। আতঙ্কের মধ্যে পড়া শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খল হয়ে গেল, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত শহীদুল