জন্ম তারিখ: ১০ নভেম্বর, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: ছাত্র, ভিক্টোরিয়া কলেজ , শাহাদাতের স্থান : মাদাম ব্রিজ, ঝুমুর
শহীদ সাদ আল আফনান, একজন স্বপ্নের মূর্ত প্রতীক, যিনি ২০০৬ সালের ১০ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার বঞ্চানগর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই তার চোখে ছিল আকাশছোঁয়ার স্বপ্ন। যে স্বপ্নে মিশে ছিল শিক্ষার আলো এবং সমাজের জন্য কিছু করার সংকল্প। তার বাবা, সালেহ আহমদ, দীর্ঘ দিন প্রবাসে থেকে কর্মজীবনের সংগ্রামে নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু সেই সংগ্রামের শেষ দেখা হলো ২৭ এপ্রিল। যখন আরব আমিরাতে তার মৃত্যু হয়। বাবার এই অকাল প্রয়াণে সাদ এবং তার পরিবার যেন অন্ধকারে ডুবে গেল। মায়ের নাম নাছিমা আক্তার। একজন যোদ্ধা নারীর মত তিনি নিজের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে যে কঠিন সময় পার করছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। সংসারের দুঃখ-কষ্ট মাথায় নিয়ে তিনি প্রতিদিন নতুন করে জীবন চালাতে চেষ্টা করেন। সন্তানকে উচ্চ শিক্ষা দেওয়ার স্বপ্নে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন। শহীদ সাদ আল আফনান জীবনভর সংগ্রাম করেছিলেন লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরিয়া কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হয়ে। কলেজের সঙ্গী-সাথীদের মাঝে তিনি ছিলেন উদ্দীপনার প্রতীক। কিন্তু নির্মম পরিস্থিতির কারণে তার জীবন শেষ হয়ে যায়, যেন একটি অকাল বন্ধনের মতো। তার চলে যাওয়ায় শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, বরং তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কোণে। সাদ আল আফনানের স্বপ্ন ও আশা, আজ যেন একটি নিভৃতে হারিয়ে যাওয়া সুরের মতো, কিন্তু তার নামটি বাঁচিয়ে রাখবে তার মা, বন্ধু এবং সকলের হৃদয়ে। সাদ আজ এক মহান শহীদ, যিনি তার আদর্শ ও চেতনার মাধ্যমে জীবিত রয়েছেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভুতি সাদ আল আফনান ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত একজন প্রতিভাবান শিক্ষার্থী। যিনি তার সৎ চরিত্র এবং আদর্শের জন্য পরিচিত ছিলেন। সদালাপী, বিনয়ী, ভদ্র এবং নম্র এই তরুণের প্রতি সবার হৃদয়ে ছিল বিশেষ এক স্থান। তার হাস্যোজ্জ্বল মুখাবয়ব এবং বিনয়ের ঢঙে এলাকার সকলেই মুগ্ধ ছিল। সাদ যেখানেই যেত, সেখানেই তার স্নেহ এবং সততার আলো ছড়িয়ে পড়ত।কিন্তু হঠাৎ করেই সেই আলোকিত তরুণের জীবন এক নিষ্ঠুরতায় ভেঙে পড়ে। প্রতিবেশীরা তাকে হারিয়ে গভীর শোকের সাগরে ডুবে গেছে। রাজিব নামের একজন প্রতিবেশী বলেন, “এ রকম একজন ভদ্র ছেলে পাওয়া এই যুগে খুব কঠিন। জাতির সম্পদ, এমন ছেলের অকাল মৃত্যু আমাদেরকে গভীরভাবে আহত করেছে। সন্ত্রাসীরা তাকে কেন মারলো? কেমন করে তারা এ ধরনের নিষ্ঠুরতা করতে পারে?” রাজিবের কণ্ঠে উঠে আসে এক গাঢ় বেদনার সুর, যেন শোককে ছড়িয়ে দেয় সারা পাড়ায়। স্থানীয় মসজিদের ইমাম বলেন, “আমি প্রতিদিন এশার নামাজ শেষে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতাম, কিন্তু আফনানের নামাজ শেষ হতে কখনোই দেরি হত না। সে ছিল নামাজের প্রতি একাগ্রতার মূর্ত প্রতীক, নামাজের প্রতি তার এই গভীর মনোযোগ আমাকে ভীষণভাবে বিস্মিত করতো।”আফনানের নামাজে ধ্যানমগ্ন কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ইমামের চোখে জল এসে পড়ে। সে জানে, সাদ আল আফনানের সন্ন্যাসীপ্রতিম জীবন এবং নিষ্ঠা ছিল এক অনন্য উদাহরণ। আজ যখন সে আর আমাদের মাঝে নেই, তখন তার স্মৃতি যেন চিরকাল আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবে, তার ভালোবাসা ও নৈতিকতার আলোকবর্তিকা আমাদের পথ দেখাবে। শহীদ পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ সাদ আল আফনানের পরিবারে এখন ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হতাশার অন্ধকার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, সালেহ আহমদ, ২০২৪ সালের ২৭ এপ্রিল আরব আমিরাতে মৃত্যুবরণ করেন। যিনি ছিলেন এই পরিবারের ভরসা, সেই সালেহ আহমদের চলে যাওয়ার পর গৃহিণী মা এখন এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে জীবনের তীব্র কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। তাদের সকল স্বপ্নের মূল কেন্দ্র ছিল সেই একমাত্র ছেলে, যিনি এখন আর নেই। তার হাসিমুখে ভরা দিনগুলি এখন স্মৃতি মাত্র। এই মুহূর্তে, মা ও সন্তানদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে এক শূন্যতা, যা তাদের জীবনকে করেছে নিষ্প্রাণ। হতাশার গভীর অন্ধকারে তারা এখন পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, যখন তাদের অল্প ভিটে-জমির বাইরে কিছুই নেই। স্বপ্নগুলো এখন মাটির সাথে মিশে গেছে, আর তাদের চেষ্টার দিগন্তে কেবল অশান্তির ঝড় বইছে। শাহাদাতের বর্ণনা লক্ষ্মীপুর শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে গত রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে সাদ আল আফনান নিহত হন। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। তিনি সালেহ আহমদের ছেলে। শহরের ঝুমুর এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। ওই দিনই দাফন হয়েছে তাঁর মামার বাড়িতে। আফনানের মামা ষাটোর্ধ্ব হারুনুর রশিদ শোক ভুলতে পারছেন না। চোখের পানি মুছে তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ভাগনেকে কেন মরতে হইল। জোয়ান ছেলেডারে এইভাবে কবরে নামাইলাম। জীবনে ভাবতেও পারিনি। বোনটারে বাঁচানোই এখন কষ্ট হয়ে গেছে। ’হারুনুর রশিদ বলেন, দুই মাস আগে তাঁর বোন নাছিমা সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী স্বামীকে হারিয়েছেন। রোববার হারিয়েছেন একমাত্র ছেলেকে। দুই মাস আগে আফনানের বাবা সালেহ আহমদ সৌদি আরবে মারা গেলেও এক মাস আগে তাঁর লাশ দেশে এনে দাফন করা হয়েছে। আফনানকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রথমে মাথায় গুলি করেন এবং পরে পিটিয়ে হত্যা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসার জন্য নোয়াখালীতে নেওয়ার পথে বেলা তিনটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।লক্ষ্মীপুর শহরে সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচি ঘিরে রোববার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২। তাঁদের মধ্যে ছয়জন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী রয়েছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা চারজন। অন্য দুজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি। ওই দিন সংঘর্ষে পুরো শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয় পক্ষের শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। সংঘর্ষের একপর্যায়ে দুপুর ১২টার দিকে শত শত আন্দোলনকারী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম সালাহ উদ্দিনের বাসার সামনে অবস্থান নেন। এ সময় টিপুর বাসায় অবস্থান নেওয়া আওয়ামী নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় শতাধিক আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন। প্রস্তাবনা ১) পরিবারের নিয়মিত ইনকামের জন্য দুইটা সিএনজি কিনে দেয়া যেতে পারে। আনুমানিক খরচ ১০ লাখ টাকা। ২) বড় বোনের পড়াশোনার খরচ বহন করা। পড়াশোনা শেষ হলে তার চাকরি নিশ্চিত করা। এক নজরে শহীদ সাদ আল আফনান নাম : সাদ আল আফনান জন্মস্থান : বাস টার্মিনাল, মুন্সিবাড়ি, সদর, লক্ষ্মীপুর স্থায়ী ঠিকানা : বঞ্চানগর, সদর, লক্ষ্মীপুর জন্ম তারিখ ও বয়স : ১০ নভেম্বর ২০০৬ সাল পেশা : ছাত্র, ভিক্টোরিয়া কলেজ পিতা : সালেহ আহম্মেদ (মৃত মাতা : নাসিমা আক্তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা-৩ : ছোট বোন-জান্নাতুল মাওয়া (১৮), ছাত্রী, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা : শারমিন আক্তার (২৮), অবিবাহিত (পালিত) শাহাদাত বরণের স্থান : মাদাম ব্রিজ, ঝুমুর আক্রমণকারী : সালাহ উদ্দিন টিপু, বাচ্চু, সাইফুল, শাহাদাত, শাহীন মিজানুর রহমান ভুঁইয়া (ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগ নেতা) আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার দাফন করা হয় : সদর লক্ষ্মীপুর কবরের জিপিএস লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/শমবখলউতুৎজচ১ঢ়যযঋঅ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : একটি পাকা বাড়ি আছে। অল্প ভিটা জমি আছে