জন্ম তারিখ: ১০ জানুয়ারি, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: ছাত্র, লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজ, শাহাদাতের স্থান : লক্ষ্মীপুর সালাহ উদ্দীন টিপুর বাড়ির সামনে
১০ জানুয়ারি ২০০১ সাল। লক্ষীপুর জেলার চন্দ্রগঞ্জ উপজেলার উত্তর জয়পুর গ্রামের ইসমাইল হোসেন ও জোসনা আক্তারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন কাউসার হোসেন। শহীদ পিতা পেশায় দিনমজুর এবং জননী গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে জনয়িতার অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন শহীদ ইসমাইল হোসেন। পরিবারে দুই ভাই এক বোন রয়েছে। সন্তানদেরকে টানাপড়েনের সংসারে ভীষণ কষ্টে লেখাপড়া করিয়েছেন জনাব ইসমাইল। তিনি স্বপ্ন দেখতেন একদিন তাঁর বড় ছেলে লেখাপড়া করে মানুষের মত মানুষ হবে। সংসারের হাল ধরবে। বড় চাকরি করে পরিবারের অর্থ কষ্ট দূর করবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন হঠাৎ মাটির সাথে মিশিয়ে দিল আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীরা। শহীদ কাউসার হোসেন ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। লেখাপড়ায় ছিলেন খুবই মনোযোগী। নিজ উপজেলার বিদ্যাপীঠ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাস করে মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি। এইচএসসি পরীক্ষায়ও সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। তারপর নিজের স্বপ্নকে মেলে ধরার জন্য তিনি ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে। শাহাদাত বরণের আগ পর্যন্ত তিনি এই কলেজের সম্মান তৃতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন। যেভাবে শহীদ হলেন ০৪ আগস্ট ২০২৪ রবিবার। সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে গণঅবস্থান এবং বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। ছাত্র-জনতা এবং সাধারণ জনতা মিলেমিশে একাকার হয়ে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। লক্ষ্মীপুরে সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতা সদর থানার পাশে বিক্ষোভ মিছিল করে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে সেদিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র-জনতার ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। নিরপরাধ, নিষ্পাপ, শান্তিকামী ছাত্র জনতার উপর লক্ষ্মীপুর যুবলীগের সভাপতি সালাউদ্দিন টিপুর নেতৃত্বে সাইফুদ্দিন আফলু, হুমায়ুন কবির পাটোয়ারীসহ অসংখ্য সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন অসংখ্য নিরপরাধ ছাত্র-জনতা। হঠাৎ ঘাতকের একটি বুলেট কাউছার হোসেনের শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। মুহূর্তে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন তিনি। রক্তাক্ত জখম শরীরে রাজপথে অচেতন হয়ে পড়ে থাকেন। রাজপথের সহযোদ্ধারা হামলা এবং গুলি উপেক্ষা করে পার্শ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানায়- তিনি আর নেই। ইতিমধ্যে মহান আল্লাহর দরবারে পাড়ি জমিয়েছেন। এভাবেই জালিমের বিরুদ্ধে লড়াই করে শাহাদাতের সুধা পান করেন শহীদ কাউছার হোসেন। কেমন আছে শহীদের পরিবার শহীদকে হারিয়ে এই মুহূর্তে তাঁর পরিবার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পরিবারের সবচেয়ে দায়িত্ববান ছেলে ছিলেন কাউছার হোসেন। শহীদ পিতার বর্তমানে বয়স হয়েছে। একপ্রকার অক্ষম হয়ে পড়েছেন তিনি। শহীদ লেখাপড়ার পাশাপাশি টিউশন করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। সাহসী তরুণ কাউসার হোসেন শহীদ কাউছার হোসেন এদেশের তরুণ সমাজের রোল মডেল। সেদিন শত শত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের বুলেটের সামনে নিজের বুক চিতিয়ে দিয়ে এদেশের মানুষকে মুক্ত করেছেন। নিয়ে এসেছেন স্বাধীনতার ঝলমল সূর্য। ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি সাহসিকতার সাথে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্লোগান দিয়েছেন। সাহস যুগিয়েছেন ছাত্র জনতাকে। নিজে শাহাদাতবরণ করার মাধ্যমে তিনি সাক্ষী দিয়ে গেলেন, সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী এবং মিথ্যা অপসারিত। সত্যের পতাকাবাহী কাউছার কাউছার হোসেন ছিলেন সব সময় সত্যপন্থী। সত্যের পথে চলতেন। সত্য কথা বলতেন। মানুষকে সত্যের আহবান জানাতেন। তিনি ইসলামী আন্দোলনের একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন। ছাত্র জনতার মাঝে ইসলামে দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে গিয়েছেন। তিনি আজীবন এদেশের মানুষের জন্য সত্যের পতাকাবাহী হয়ে বেঁচে থাকবেন। অভিমত শহীদ জননী অবিরত ছেলের জন্য কেঁদে চলেছেন। কাউছারের কথা মনে পড়তেই দরজার কাছে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, “আমার বড় ছেলে, আমার কলিজার টুকরা। আমার ছেলেটাকে কেন মারলো? যারা আমার ছেলেকে মেরেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই।” শহীদের একমাত্র বোন ফিরোজা আফরোজ বলেন, “আমার ভাই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। পরিবারের দায়িত্ব পালন করা কালীন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে মারলো। এখন আমার বৃদ্ধ মা-বাবার কি হবে? কে আমার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়াবে”। এক নজরে শহীদ কাউছার হোসেন নাম : কাউছার হোসেন পেশা : ছাত্র, লক্ষ্মীপুর সরকারী কলেজ, শ্রেণি: সম্মান তৃতীয় বর্ষ, বিভাগ: পদার্থ বিজ্ঞান জন্ম তারিখ ও বয়স : ১০ জানুয়ারি ২০০১, ২৩ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৪ আগষ্ট ২০২৪, রবিবার শাহাদাত বরণের স্থান : লক্ষ্মীপুর সালাহ উদ্দীন টিপুর বাড়ির সামনে দাফন করা হয় : নিজগ্রাম, জয়পুর, চন্দ্রগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর কবরের জিপিএস লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/ছযঁধুবট৫উ৬ড়৮৯ঁতু৯ স্থায়ী ঠিকানা : জয়পুর, চন্দ্রগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর পিতা : ইসমাইল হোসেন মাতা : জোসনা আক্তার ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : একটি টিনের বাড়ি আছে। অল্প বসতি জমি রয়েছে। ভাই বোনের বিবরণ: ১. ফিরোজা আফরোজ, বয়স : ২৮, সম্পর্ক: বোন (বিবাহিতা) ২. কাদের আমিন বিপুল বয়স, বয়স : ১৯, পেশা: ছাত্র, সম্পর্ক: ভাই প্রস্তাবনা ১. শহীদের ভাইয়ের লেখা পড়ার দায়িত্ব নেয়া যেতে পারে ২. শহীদের বাসস্থানকে থাকার উপযোগী করে দেয়া যেতে পারে ৩. শহীদ পরিবারে মাসিক বা এককালীন সহায়তা দেয়া যেতে পারে