Image of মাজহারুল ইসলাম

নাম: মাজহারুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ব্যবসায়ী শাহাদাতের স্থান : তাজ উদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুর

শহীদের জীবনী

শহীদ মাজহারুল ইসলাম ১ জানুয়ারি ১৯৯৫ সালে পশ্চিম চর ফলকন কমলনগর লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। শহীদের পিতার নাম আব্দুল খালেক মিজী। তিনি বয়সের কারণে এখন আর কোনো কাজ করতে পারেন না। মায়ের নাম শামসুন্নাহার। তার বয়সও সত্তর বছর। তিনিও তেমন কিছুই করতে পারেন না। শহীদ মাজহার তার নিজ গ্রামে বড় হন। এখানেই পড়াশোনা করেন গ্রামে। এলাকাবাসী সবার সাথে তার ভালো সম্পর্ক ছিল। সবাই তার প্রশংসা করেন। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট আলেম। সমাজ সেবায় তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। নিজ গ্রামেই তার পড়াশুনার হাতেকড়ি হয়। লক্ষ্মীপুর খায়েরহাট আলিম মাদ্রাসা থেকে তিনি আলিম পাস করেন; পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা থেকে সরে জামিয়া পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। কর্মজীবন পড়াশোনা শেষ করে তিনি দারুল আরকাম কওমি মাদ্রাসা নামে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। দীর্ঘদিন এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজে পড়তেন এবং শিক্ষার্থীদের পড়াতে ভালোবাসতেন। তার অনেক শিক্ষার্থী বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। পরিবারের সমৃদ্ধির জন্য তিনি একসময় মাদ্রাসার দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেন। বিসমিল্লাহ বাণিজ্যালয় নামক একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত ছিলেন। এটি গাজীপুর বিশ্বরোড শামসুদ্দিন সরকার সুপার মার্কেটে অবস্থিত। শাহাদাতে আগ পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতি, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয়। আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারীসহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। যেভাবে শাহাদাত বরণ করেন ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল। বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিজয়ের দিন। দীর্ঘ ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান হয় এই দিনে। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা এই দিন ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে পালিয়ে ভারত চলে যান। বিজয়ের দিন হলেও দিনটি ছিল মানুষের জন্য বেদনাদায়ক। শহীদ মাজহারুল ইসলাম এর মত অসংখ্য নিরপরাধ জনতা কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় এই দিনে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের ডাকা মার্চে দেখা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার জন্য সকালে বাসা থেকে বের হয়। ছাত্র-জনতার সাথে মিছিলে অংশগ্রহণ করে গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানার সামনে গেলে পুলিশ জনতার উপর উপর্যুপরি গুলি ছুঁড়ে। এতে ঘটনাস্থলে অনেকেই নিহত হয়। একটি গুলি এসে মাজহারুল ইসলামের গায়ে লাগে। ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পথচারীরা তাকে তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বিকাল চারটার দিকে তিনি ইন্তেকাল করেন। কেমন আছে শহীদের পরিবার শহীদ মাজহারুল ইসলামকে হারিয়ে তার পরিবার ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। তিন বছরের শিশু নাজিফা আক্তার তার বাবাকে না পেয়ে প্রতিদিন কান্না করে। তার স্ত্রী এখন ৮ মাসের সন্তান সম্ভবা। তার অনাগত সন্তানে জানে না তার বাবা নাই পৃথিবীতে। স্ত্রী বিবি সালমা বিরহ ব্যথা এবং প্রসব ব্যথা এই দুইটাতে একসাথে ভুগছেন। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। স্বামীর মৃত্যুর কথা স্মরণ করলেই কান্না করছেন আর বলছেন আমার কি হবে, আমার তিন বছর বয়সী সন্তানের কি হবে, আর অনাগত সন্তানের কি হবে! আমার স্বামী কোন দোষ করেনি। কেন তাকে মারা হলো? আমি আমার স্বামীকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। মাজহারুল ইসলামের ৭০ বছর বয়সী মা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে তার ছেলে দুনিয়াতে আর নাই। তিনি সন্তানকে হারিয়ে শারীরিকভাবে আরও বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। ৮০ বছর বয়সী বাবা ও সন্তানের জন্য কান্না করেন নিয়মিত। আমার ভাই মো: মাযহারুল ইসলাম। সে একজন সমাজসেবক ছিলেন। তিনি একজন মাদ্রাসার শিক্ষকও। তিনি দেশ ও জাতিকে অনেক ভালবাসতেন। তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। তার গুণ দেখে অত্র এলাকা ও বন্ধু সকলে তার প্রতি অনেক সন্তুষ্ট ছিলো। আমার ভাই আমাদেরকে অনেক ভালবাসতেন। আমরাও আমার ভাইকে ভালোবাসি; ভাইকে হারিয়ে আমরা আজ অনেক ব্যথিত। শোকাহত এলাকাবাসী একজন তরুণ উদীয়মান আলেমকে হারিয়ে এলাকাবাসী খুবই শোকাহত। প্রতিবেশীরা নিয়মিত তাকে স্মরণ করছেন। তার চরিত্রের প্রশংসা করছেন। তার ভাই হুমায়ুন কবির বলেন, আমার ভাই মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। নিরলসভাবে মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন। একই সাথে তিনি একজন আলেম ও মাদ্রাসা শিক্ষক ছিলেন। কেন তাকে গুলি করে মারা হলো? পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদ মাযহারুল ইসলামের বিসমিল্লাহ বাণিজ্যালয় নামে একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছিলো। এটি বাইপাল এলাকার বিশ্বরোডের ভোগড়া অঞ্চলের গাজীপুরের আলহাজ শামসুদ্দিন সরকার সুপার মার্কেটে অবস্থিত। মাযহারুলের শাহাদাতের পর পরিবারে উপার্জনক্ষম আর কেউ নেই। তার এক মেয়ে অসুস্থ। যার বয়স তিন বছর এবং স্ত্রী এখন সন্তান সম্ভবা আট মাস। শহীদের বৃদ্ধ বাবা মা আছেন। একনজরে শহীদ মাজহারুল ইসলাম নাম : মাজহারুল ইসলাম পেশা : ব্যবসায়ী জন্ম তারিখ ও বয়স : ০১-০১-১৯৯৫ আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগষ্ট ২০২৪ , সোমবার শাহাদাত বরণের স্থান : তাজ উদ্দিন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, গাজীপুর দাফন করা হয় : নিজগ্রামে, পশ্চিম চরফলকন, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর কবরের জিপিএস লোকেশন : যঃঃঢ়ং://সধঢ়ং.ধঢ়ঢ়.মড়ড়.মষ/নঋণতছঊগচপবঝ৫৫সইণ৮ স্থায়ী ঠিকানা : পশ্চিম চরফলকন, কমলনগর, লক্ষ্মীপুর পিতা : আব্দুল খালেক মিজি মাতা : শামসুন্নাহার ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : একটি টিনের বাড়ি আছে। অল্প ভিটা জমি আছে সন্তানাদির বিবরণ : তিন বছরের এক মেয়ে আছে। স্ত্রী এখন আট মাসের সন্তান সম্ভবা প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে জন্য বাসস্থান প্রয়োজন ২. শহীদের বাবার জন্য নিয়মিত মাসিক ভাতার ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মাজহারুল ইসলাম
Image of মাজহারুল ইসলাম
Image of মাজহারুল ইসলাম
Image of মাজহারুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: তানজিল মাহমুদ সুজয়

মো: রাব্বি আলম

মো: ওসমান পাটওয়ারী

আওয়াল মিয়া

মোহাম্মদ সজিব

হামিদুর রহমান

মো: ইউসুফ

মো: ইউসুফ

আমির হোসেন

মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

মো: হৃদয়

মো: রিপন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo