জন্ম তারিখ: ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান :মহিপাল, ফেনী
শহীদ ছাইদুল ইসলাম ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে ফেনী সদর থানার ফাজিলপুরের ৫ নং ওয়ার্ডের কলাতলী মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মো: রফিকুল ইসলাম এবং মাতা রাহেনা বেগম। ছাইদুল একটি দরিদ্র পরিবারের সন্তান, যেখানে তার বাবা কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারতেন না এবং তার মা ছিলেন একজন গৃহিণী। পাঁচ সদস্যের এই পরিবারে তার বড় ভাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন, যিনি ডেন্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। ছাইদুলের পরিবারে তার বাবা-মা ও তিন ভাই ছিলেন, যেখানে ছাইদুল ছিলেন দ্বিতীয় সন্তান। ছাইদুল ইসলাম ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি ফাজিলপুর ডাব্লিউ-বি কাদরি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। তার মেধা, মনন ও অধ্যবসায় তাকে সহপাঠীদের মাঝে অন্যতম করে তোলে। এসএসসি পাশ করার পর তিনি বারিয়ারহাট ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হন এবং ২০২৪ সালে তার এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তিনি তার পরিবার এবং গ্রামের জন্য একটি আলোকিত ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতেন এবং সেই অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ছাইদুল ছিলেন একজন অত্যন্ত বিনয়ী, দেশপ্রেমিক ও সচেতন তরুণ। তিনি ছোটবেলা থেকেই সমাজের বৈষম্য, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং বৈষম্যহীন একটি সমাজ গঠনের জন্য তার প্রবল আগ্রহ ছিল। তার চিন্তাধারা ছিল সমাজের জন্য কিছু করা এবং দেশের উন্নতির জন্য নিজেকে নিবেদিত করা। তরুণ বয়স থেকেই তিনি বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন, যা তার সমাজ সচেতন ও দেশপ্রেমিক মনোভাবের প্রকাশ।দেশের নানা অন্যায়-দুর্নীতি নিয়ে সে সব সময় সরব ছিল। খেলাধুলায় ছিল তার প্রবল আগ্রহ। পরিবারের একমাত্র সদস্য যিনি শিক্ষার আলোয় আলোকিত হচ্ছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি সমৃদ্ধ ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠন করা, কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি অল্প বয়সেই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মাসে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান। যেভাবে শহীদ হলেন ২০২৪ সালে জুলাই মাসের শুরুতেই মূলত শুরু হয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোটার সংস্কার আন্দোলন। মেধার ভিত্তিতে দেশকে গড়ার সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করে সারা দেশের ছাত্রসমাজ। শহীদ ছাইদুল ইসলাম নিয়মিতই আন্দোলনে যোগদান করতেন। শুরুতে ছাত্র-সমাজের আন্দোলন হলেও ১৫ জুলাই এরপরে একটি রূপ নেয় ছাত্র জনতার আন্দোলনে। সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে ও কারফিউ জারি করে সরকার। স্বৈরাচার হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ,যুবলীগ ও দলীয় সন্ত্রীরা নির্মম্ভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায় ছাত্র-মাজের উপর। দেশের ক্লান্তি লগ্নে আন্দোলনকারীদের বুকে সাহস যোগানো এই তরুণ। বরাবরের ন্যায় ৪ তারিখে মায়ের কাছে থেকে দোয়া নিয়ে ১২ টার দিকে বের হন বাড়ি থেকে। সে সময় ফেনীর মহিপালে ছাত্র জনতার আন্দোলন চলছিল। তিনিও তাদের সাথে যুক্ত হলেন। অন্যদিকে খুনি হাসিনার লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী,যুবলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র জনতার উপর আক্রমণ চালায়। রাবার বুলেট, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড ইত্যাদির বৃষ্টি বর্ষণ করতে থাকে পুলিশ বাহিনী ও সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে তিনি আন্দোলনকারীদের সাথে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। হঠাৎ যুবলীগের ছোড়া দুইটা গুলি এসে তার ঘাড় ও বুকে বিদ্ধ হয়। সঙ্গে সঙ্গে লুটিয়ে পরেন মাটিতে। পাশে থাকা আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা শহীদের পরিবার খুবই অসচ্ছল। বাবা সাধারণ ড্রাইভার। যিনি তেমন উপার্জন করতে সক্ষম নয়। পরিবারের বড় ছেলে ডেন্টাল ক্লিনিকে অল্প বেতনে চাকরি করে। ছোট ছেলে ৮ম পাশ করে বর্তমানে বেকারত্বের মধ্যে পার করছেন। সন্তানকে হারিয়ে বাবা মা দুজনই পাগলপ্রায় অবস্থা। পরিবার ও নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি শহীদ ছাইদুলের বন্ধু মীর আসাদ বলেন- ছাইদুল খুবই বিনয়ী ছিলেন। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক সে। শহীদের বড় ভাই সহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই ছিল আমাদের সবার থেকে আলাদা। কথাবার্তা কম বলতেন, অন্তরে দেশের জন্য ভালোবাসা লালন করতেন। রাজনৈতিকভাবে সে কখনো কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিল না। শহীদের মা জানান আমার একমাত্র শিক্ষিত ছেলে, যাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছি। দেশের জন্যে সে শহীদ হয়ে গেল। আমি তাঁর বিচার চাই,খুনিদের ফাঁসি চাই। পত্রিকার লিংক যঃঃঢ়ং://ংযড়ৎঃঁৎষ.ধঃ/পখটঘউ এক নজরে শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি নাম : ছাইদুল ইসলাম পেশা : ছাত্র শ্রেণি : দ্বাদশ, প্রতিষ্ঠান: বারইয়ারহাট ডিগ্রি কলেজ, ফেনী পিতা : মো: রফিকুল ইসলাম, বয়স: ৫৪, পেশা: ড্রাইভার মাতা : রাহেনা বেগম, বয়স: ৪৫, পেশা: গৃহিণী জন্ম তারিখ ও বয়স : ২৩.০৯.২০০৪, বয়স: ২০ বছর বর্তমান ঠিকানা : মহল্লা: কলাতলি, ওয়ার্ড: ফাজিলপুর ৫ নং, থানা/উপজেলা: সদর, জেলা: ফেনী স্থায়ী ঠিকানা : মহল্লা: কলাতলি, ওয়ার্ড: ফাজিলপুর ৫ নং, থানা/উপজেলা: সদর, জেলা: ফেনী পরিবারের সদস্য : ৪ ভাইবোনের বিবরণ : দুই ভাই রয়েছে : ১. বড় ভাই: শহীদুল ইসলাম, বয়স: ২৫, পেশা: ডেন্টাল এসিস্ট্যান্ট : ২. নিজ: শহীদ ছাইদুল ইসলাম : ৩. সাকিবুল ইসলাম, বয়স: ১৭, পেশা: বেকার, শিক্ষাগত যোগ্যতা: ৮ম শ্রেণি পাশ ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : অসচ্ছল পরিবার। ঘটনার স্থান : মহিপাল, ফেনী আক্রমণকারী : জিয়া উদ্দিন বাবলু, স্থানীয় যুবলীগ নেতা আহত হওয়ার সময়, তারিখ ও স্থান : ০৪ আগস্ট ২০২৪, রবিবার, আনুমানিক দুপুর ১:৫৫ টা, ফেনী নিহত/শাহাদাত বরণের তারিখ, সময় ও স্থান : ৪/৮/২৪, ১টা ৫৫ মি, মহীপাল, ফেনী কবরের জিপিএস লোকেশন : ২২ক্ক৫৮'০২.১"ঘ ৯১ক্ক২৯২৮.৭"ঊ