জন্ম তারিখ: ২৭ জানুয়ারি, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৪ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ছাত্র ও কাজ শিখতেন, শাহাদাতের স্থান : রামপুর, মহিপাল, ফেনী
শহীদ ওয়াকিল আহমদ শিহাবের জীবন এক সাহসী সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি, যা দারিদ্র ও সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল ভেদ করে অনন্য উচ্চতায় ওঠার প্রতিজ্ঞায় পরিপূর্ণ। ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি ফেনীর পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার পিতা জনাব সিরাজুল ইসলাম একজন প্রবাসী, যিনি দেশের বাইরে কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। মা মাহফুজা আক্তার একজন গৃহিণী যিনি সংসারের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ ওয়াকিল দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় হয়ে তিনি পরিবারের প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার ছোট ভাই তখন মাদরাসায় অষ্টম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে আর শিহাবের স্বপ্ন ছিল ভাইকে পড়াশোনা করিয়ে জীবনে সফলতার পথে নিয়ে যাওয়া। তার অনুপ্রেরণামূলক ও দায়িত্বশীল আচরণ ছোট ভাইয়ের প্রতি ছিল অনুকরণীয়। অত্যন্ত বিনয়ী, পরিশ্রমী ও সহজ-সরল স্বভাবের অধিকারী শিহাব ছিলেন সকলের প্রিয়। বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা আর ছোটদের প্রতি স্নেহ তাকে সমাজে একজন মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দক্ষতা অর্জন করে পরিবারের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন। তিনি ২০২৩ সালে ফেনীর জয়লস্কর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন, যা ছিল তার শিক্ষাজীবনের একটি বড় অর্জন। কিন্তু শিহাবের সেই বড় স্বপ্নগুলো অসম্পূর্ণই থেকে যায়। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ফেনীতে যুবলীগের সহিংস আক্রমণে শিহাব প্রাণ হারান। তার মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্য নয়, গোটা সমাজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তার ত্যাগ, সাহস, ও স্বপ্ন আমাদের সকলের জন্য এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে চিরকাল বেঁচে থাকবে। যেভাবে শহীদ হলেন ২০২৪ সালের ছাত্র জনতার কোন অভ্যুত্থানের জন্য প্রাণ দিয়েছেন শহীদ ওয়াকিল আহমেদ। তিনি শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। ধারাবাহিকতায় চার তারিখে তার মায়ের কাছ থেকে চুল কাটানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। পরে তার বন্ধু মাসুদের সঙ্গে ছাত্র জনতার আন্দোলনে যোগ দেয়ার জন্য ফেনীর বহিপালে যান। তারা মহিপাল ফ্লাইওভারের নিচে অবস্থান গ্রহণ করেন। একপর্যায়ে বেলা বেলা ২ টার দিকে স্বৈরাচার সরকার আওয়ামী লীগের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ছাত্র জনতা কে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। তারপর তারা ছাত্র জনতা কে লক্ষ্য করে সরাসরি গুলি চালাতে থাকে। বালিগাউ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জিয়া উদ্দিন বাবলুর ছোঁড়া তিনটি গুলিবিদ্ধ হয় তার বুকে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পরেন। সেই মুহূর্তে সেখানকার পরিস্থিতি এত ভয়াবহ ছিল যে সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে হসপিটালে নেওয়ার কোন পরিস্থিতি ছিল না। সে কারণে মহিপাল সার্কিট হাউস রোডেই পড়েছিল তার নিথর দেহ।একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনও আন্দোলনকারীরা তাকে নিয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে রিকশা যোগে নিয়ে যান। কিন্তু হসপিটালে যাওয়ার পূর্বেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সন্তানকে হারিয়ে পিতা-মাতা এখন শোকে শোকাহত। খুনি হাসিনার ক্ষমতা থাকার অভিলাষে দিতে হয়েছে মেধাবী ও পরিশ্রমী শিক্ষার্থীর প্রাণ। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ ওয়াকিল আহমেদ এর পিতা প্রবাসে থাকেন। সেখান থেকেই তিনি পরিবারের ব্যবহার বহন করেন। তার পিতার স্বল্প আয়ে দুই ভাই পড়াশোনা করতেন। ছোট ভাই মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে বর্তমানে পড়াশুনা করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হলেও ভালোভাবেই দিন পার হচ্ছিল তাদের। তবে সন্তানের মৃত্যুর পর পিতা-মাতা শোকের বন্যায় নিমজ্জিত। যা তাদের পরিবার কোন ভাবেই বহন করতে পারছে না। স্নেহের ও ভালোবাসার সন্তান হারিয়ে পিতা-মাতা সহ তার ভাই প্রায় পাগলপ্রায় অবস্থা। নিকটাত্মিয়ের জবানীতে শহীদ শিহাব শিহাবের ভাতিজা ফারহান বাদন। তিনি ছিলেন খুব বিনয়ী। কারো সাথেই কখনো ঝগড়া করেনি। শিহাবের ছোট ভাই সায়েম বলেন- আমার ভাই খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন। পড়তেন। বড়দের সম্মান করতেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি পুরো নাম : শহীদ ওয়াকিল আহমদ শিহাব জন্মতারিখ : ২৭ জানুয়ারি, ২০০৫ জাতীয়তা : বাংলাদেশী পেশা : ছাত্র ও কাজ শিখতেন শিক্ষাগত যোগ্যতা : এইচএসসি পাস ২০২৩ প্রতিষ্ঠান : জয় লস্কর উচ্চ বিদ্যালয় কাজ শেখার স্থান : মহিপাল প্লাজা পিতার নাম, বয়স, অবস্থা : মো: সিরাজুল ইসলাম, ৫৪ বছর, প্রবাসী মায়ের নাম, পেশা : মাহফুজা আক্তার, গৃহিণী বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত পারিবারিক সদস্য : ৪ জন ভাই বোন সংখ্যা : ২ ভাই : ১.বড় ভাই: নিজেই শহীদ ওয়ািকল আহেমদ শিহাব : ২. ছোট ভাই: ওয়ািমদ আহেমদ সায়েম, বয়স: ১৫, তািমরুল উম্মাহ ৮ম স্থায়ী ঠিকানা : দক্ষিণ কাশিমপুর গ্রাম, পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন, ফেনী সদর থানা বর্তমান ঠিকানা : ফেনী সদর, ফেনী ঘটনার স্থান : রামপুর, মহিপাল, ফেনী আঘাতকারী : জিয়া উদ্দিন বাবলু, সভাপতি, বালিগাঁও ইউনিয়ন যুবলীগ নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ৪ আগস্ট ২০২৪, দুপুর ১:৪৫ মিনিট, রামপুর, মহিপাল, ফেনী শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : ২৩ক্ক০০'০৭.৮ঘ ৯১ক্ক২১'০২.৪"ঊ