Image of মো: সাইফুল ইসলাম আরিফ

নাম: মো: সাইফুল ইসলাম আরিফ

জন্ম তারিখ: ৬ নভেম্বর, ২০০৩

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : ঢাকার সিএমএইচ হসপিটালে

শহীদের জীবনী

শহীদ সাইফুল ইসলাম আরিফ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের অন্যতম শহীদ। তাঁর পিতা জনাব আলতাপ হোসেন একজন কৃষক এবং মাতা কামরুন নাহার একজন গৃহিণী। আরিফ ২০০৬ সালের ৬ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর জন্মস্থান ফেনী।তিনি ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তাঁর অমায়িক ব্যবহার মানুষকে বিমোহিত করত। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। তিনি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় দাখিলে অধ্যয়নরত ছিলেন। দারিদ্রতার কারনে তাকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবার। বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা পয়সাও জমা দেন। তাঁর ভিসার কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। শুধু উড়াল দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। জালিমের রক্তচক্ষুর হাত থেকে রেহাই মেলেনি এই নিষ্পাপ কিশোরটিরও। জালিম সরকারের ঘাতকের আঘাতে আহত হয়ে প্রাণ যায় তাঁর। পারিবারিক অবস্থা শহীদ সাইফুল ইসলাম আরিফ এর বাবা একজন কৃষক। তার একমাত্র আয়েই সংসার চলে। স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। বৃদ্ধ বয়সে ছেলের উপর ভরসা করে বাকি দিনগুলো শান্তিতে কাটিয়ে দিবেন।এজন্য ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা আর হল না। অকালে ছেলেকে হারিয়ে নিঃস্ব হলেন শহীদের পিতা জনাব আলতাপ হোসেন। আলতাপ হোসেনের ৪ ছেলে মেয়ের মধ্যে আরিফ বড়। আরিফের ছোট ৩ মেয়ে। সবাই পড়াশোনা করে। আলতাপ হোসেনের একক আয়ে পরিবারের ব্যয়ভার বহন খুবই কষ্টকর। অভাবের সংসারে কোনমতে ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে আছেন। আলতাপ হোসেন নিজেও অসুস্থ। বাড়ির আঙ্গিনায় পড়ে গিয়ে তাঁর আঙ্গুল উঠে গেছে। এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাড়ানোর কেউ নেই। জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট জানতে হলে আমাদেরকে অনেক পিছনে ফিরে তাকাতে হবে। এ বিপ্লবের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। একদিনে এ বিপ্লব সংঘটিত হয়নি। আওয়ামী সরকারের দীর্ঘদিনের দুঃশাসনের ফলাফল ছিল এ বিপ্লব। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের (মইন উদ্দীন আহমেদ) পাতানো নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে শেখ হাসিনা। ভারতের মধ্যস্থতায় শেখ হাসিনা এই নিশ্চয়তা দেয় যে, মইন ইউ আহমেদ ও তার দোসরদের দুই বছরের সকল অপরাধের দায়মুক্তি দেওয়া হবে। হলোও তাই। ২০০৭-২০০৮ এই দুই বছরের সেনাশাসনের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা অনেক বিষোদগার করলেও কুশীলবদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ভারতের মধ্যস্থতায় বিনা ভোটে ক্ষমতায় এসে সাধারণ মানুষের জনজীবন বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। পিলখানার হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সেনাবাহিনীকে পোষা বিড়ালে পরিণত করা হয়েছে। হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের মাথার ওপর চেপে বসেছে জগদ্দল পাথরের মতো। এ যেন রূপকথার ভয়ংকর ডাইনি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় মুক্তিকামী জনতা। জুলাইয়ের শুরু থেকেই কোটা সংস্কার আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। প্রতিদিনই ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে অবস্থান করে। ১৪ জুলাই রাতে স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা এক সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে ছাত্র-জনতাকে রাজাকার বলে গালি দেয়। মুহুর্তেই ছাত্র-জনতা প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। মধ্যরাতে ঢাবির হলগুলো থেকে ভেসে আসে,তুমি কে আমি কে?-রাজাকার, রাজাকার। মুহুর্তেই ‘৭র ঘৃণিত শব্দ ২৪ এ এসে মুক্তির স্লোগানে পরিণত হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলের মেয়েরা মধ্য রাতে রাজপথে নেমে আসে। ঢাকা সহ সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একযোগে প্রতিবাদ জানায়। ১৫ জুলাই সাধারণ ছাত্ররা ফ্যাসিস্ট সরকারের এমন বাজে মন্তব্যের প্রতিবাদে শাহাবাগ ও ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে। স্বৈরাচার সরকার ছাত্রদের নায্য দাবী আদায়ের আন্দোলনকে প্রতিরোধ করার জন্য অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে। ছাত্রদের দমন করতে সরকার তার দলীয় পোষা গুণ্ডা ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনানের নির্দেশে ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী লোহার রড, হকিস্টিক, স্ট্যাম্প, রামদা, চাপাতি ও দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে নিরীহ ছাত্র-জনতার উপর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী অতর্কিত হামলা চালায়। ছাত্রলীগের পোষা গুণ্ডা এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাড়া করে আনা গুণ্ডাদের নিয়ে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর হায়েনার মত ঝাপিয়ে পড়ে। তাদের হামলার হাত থেকে নিরস্ত্র বোনদেরও রক্ষা মিলেনা। রাস্তায় আটকিয়ে বোনদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। চতুর্দিক থেকে ঘিরে ধরে তাদেরকে নির্বিচারে পিটাতে থাকে। ৫ আগস্ট সোমবার ছাত্র-জনতা লং মার্চ টু গণভবন ঘোষণা করে। সারাদেশ থেকে মুক্তিকামী জনতা গণভবনের দিকে রওনা করে। স্বৈরাচারের ঘাতক-দালাল আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও বিপথগামী পুলিশ সদস্যরা একত্রিতভাবে ছাত্র-জনতার উপর টিয়ারশেল, ছররা গুলি, গ্রেনেড, বোমা, সাজোয়াজান ও আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে থাকে। অসংখ্য মানুষ হামলায় আক্রান্ত হয়ে শাহাদাত বরণ করেন। আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করে আরও অনেকে। তবু ছাত্র-জনতা জুলুমের সাথে আপোষ করেননা। জালিমের বুলেটকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। পুলিশের গুলিতে অনেক মানুষ মারা যায়। এসব মৃত্যু সাধারণ মানুষের মনে পীড়া দেয়। যার ফলে মানুষ আর ঘরে থাকতে পারে না। শহীদের আর্তনাদ তাদেরকে রাজপথে নিয়ে আসে। অবশেষে তুমুল আন্দোলনের মুখে নরখেকো ডাকু রানী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। শহীদ সাইফুল ইসলাম আরিফ যেভাবে শহীদ হলেন শহীদ সাইফুল ইসলাম আরিফ ছিলেন এই আন্দোলনের একজন সম্মুখ যোদ্ধা। বৈষম্যবিরোধী স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৪ আগস্ট শহীদ আরিফ বাড়ি থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রাম শহেরের দিকে যায়। সেখানে স্বৈরাচারের ঘাতকরা শহীদ আরিফের উপর পৈশাচিক হামলা চালায়।তাঁকে হকিস্টিক এবং লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। রাতে তাঁর পরিবারের লোকজন খবর পায় যে, আরিফ হাসপাতালে ভর্তি আছে। তারপর তাঁরা হাসপাতালে গিয়ে দেখে আরিফের অবস্থা খুবই খারাপ। এরপর তাঁকে ঢাকার সিএমএইচ হসপিটালে নিয়ে আসা হয়। দীর্ঘ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তিনি শাহাদাত বরন করেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের পিতা আলতাপ হোসেন বলেন, আমার ছেলেটার খুব সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ ছিল। বিদেশে পৌঁছাতে পারলেই ৬০/৭০ হাজার টাকা বেতন পেতেন। এখন আমার পাশে দাড়ানোর মত কেউ নাই। আপনারা সবাই দু’আ করবেন আল্লাহ যেন আমার ছেলেকে জান্নাত দান করেন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : সাইফুল ইসলাম আরিফ পিতা : আলতাপ হোসেন মাতা : কামরুন নাহার জন্ম : ৬ নভেম্বর ২০০৩ জন্ম স্থান : চট্টগ্রাম পেশা : ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা : ২নং কৌশল্যা, দাগনভূঁঞা, ফেনী,চট্টগ্রাম আহত হওয়ার তারিখ : ৪ আগস্ট ২০২৪ শহীদ হওয়ার তারিখ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. ছোট বোনদের পড়াশুনাসহ ভবিষ্যতের যাবতীয় খরচের নিশ্চয়তা প্রদান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাইফুল ইসলাম আরিফ
Image of মো: সাইফুল ইসলাম আরিফ
Image of মো: সাইফুল ইসলাম আরিফ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: আশিক মিয়া

মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী

ইউনুছ আলী শাওন

ইশতিয়াক আহমেদ

মো: জিহাদ হাসান মাহিম

সৈকত চন্দ্র দে

মোহাম্মদ সজিব

আল আমিন

সোহাগ মিয়া

মোহাম্মদ সবুজ

সাদ আল আফনান

পারভেজ বেপারী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo