জন্ম তারিখ: ২০ আগস্ট, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : কাজলা, যাত্রাবাড়ী
শহীদ ইফাত হাসান খন্দকার ২০০৮ সালের ২০ আগস্ট ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক ঠিকানা নোয়াখালি জেলার বেগমগঞ্জ থানার রাজগঞ্জ ইউনিয়নের আলমপুর গ্রাম। তিনি যাত্রাবাড়ি এ.কে.আইডিয়াল স্কুলের ক্লাস নাইনের শিক্ষার্থী ছিলেন। পিতা রবিউল আমিন খন্দকার, মাতা কামরুন নাহার। শহীদের বাবা বেঁচে নেই, দুই বছর হল মারা গিয়েছেন। বর্তমানে শহীদ ইফাতের পরিবারে তার মা ও দুজন বোন রয়েছে। শহীদের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ ইফাতের পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তার বাবা রবিউল আমিন। কিন্তু দুই বছর পূর্বে বাবার মৃত্যু হয়। এতে পুরো পরিবারটি মানসিকভাবে তো বটেই আর্থিকভাবেও ভেঙ্গে পড়ে। মাথার উপর থেকে বাবা নামক ছায়া সরে গেলে বোঝা যায় জীবন কত বিচিত্র আর কষ্টকর। এরপর ইফাত এর মা তার তিন সন্তান নিয়ে ইফাতের নানাবাড়িতে আশ্রয় নেন। তার চাচা- মামারা আর্থিকভাবে সহায়তা করতে চেষ্টা করতেন। যদিও দুই বছর আগেই পরিবারটির আর্থিক ভিত্তি নড়বড়ে হয়ে পড়ে, তাও একমাত্র ছেলে ইফাতকে নিয়ে তার মায়ের ছিল অনেক স্বপ্ন- ছেলে বড় হবে, বড় চাকুরি করবে, মায়ের আর কোন কষ্ট থাকবেনা, বাব-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু ইফাতের মৃত্যুতে সেই স্বপ্নও ভেঙে তছনছ হয়ে গেল। উল্লেখ্য, ইফাতের বড় বোন উম্মে সালমা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মান প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোট বোন তাজরিয়ানের বয়স মাত্র চার বছর ছোট তাজরিয়ান কিছু বুঝে উঠার আগেই বাবা-ভাই দুজনকে হারিয়ে ফেলল। বাবা আর ভাইয়ের আদর কেমন হয় সে হয়ত ঠিকভাবে আর কখনো জানতেও পারবেনা। নিকটাত্মীয়/ প্রতিবেশীর মন্তব্য ইফাতের নানা জানান, “ইফাত অনেক শান্ত ও ভদ্র বাচ্চা ছিল। বাবা মায়ের অনেক আদরের সন্তান ছিল। কর্মঠ ইফাত পড়ালেখা ছাড়াও কোন না কোন কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখত। আমরা আমাদের সোনার টুকরা ইফাত হত্যার বিচার চাই।” শহীদী মৃত্যুর প্রেক্ষাপট শহীদ ইফাত বয়সে ছোট হলেও এতটুকু বুঝতেন যে অন্যায়ের সাথে কখনো আপোষ করা উচিত না। তাই সবাইকে যার যার জায়গা থেকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা উচিত। আর তার এই চিন্তাই তাকে ২০২৪ এর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগদান করার সাহস জুগিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই যাত্রাবাড়ীর কাজলাতে আন্দোলনে যোগ দিতেন তিনি। তখন আন্দোলনের প্রধান কয়টি স্পটের মধ্যে যাত্রাবাড়ী ছিল অন্যতম। প্রায় প্রতিদিনই এখানে ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হত। ২০ জুলাই ২০২৪ দুপুর তিনটা। আন্দোলনে পুলিশ গুলিবর্ষণ শুরু করে। হঠাৎ একটি গুলি ইফাতের বুকে এসে লাগে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। মৃত্যুবরণ করেন। সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় এসব খবর আর আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন। শহীদকে তার নিজ পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালির বেগমগঞ্জে নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি নাম : ইফাত হাসান খন্দকার জন্ম তারিখ : ২০/০৮/২০০৮ পেশা : ছাত্র স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: আলমপুর, ইউনিয়ন: রাজগঞ্জ থানা: বেগমগঞ্জ, জেলা: নোয়াখালি বর্তমান ঠিকানা : বাসা: ১/৩১,৬১,রসুলপুর, এলাকা: দনিয়া থানা: যাত্রাবাড়ী, জেলা: ঢাকা পিতার নাম : রবিউল আমিন খন্দকার মাতার নাম : কামরুন নাহার পরিবারের সদস্য : ৩ জন বড় বোন : উম্মে সালমা, ছাত্রী ছোট বোন : তাজরিয়ান ঘটনার স্থান : কাজলা, যাত্রাবাড়ী আক্রমনকারী : পুলিশ মৃত্যুর তারিখ ও সময় : তারিখ : ২০/০৭/২০২৪, দুপুর ৩ টা কবরস্থান : নিজ গ্রাম