জন্ম তারিখ: ৩ এপ্রিল, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ভাঙারির দোকান , শাহাদাতের স্থান : ঢামেক
হাস্যোজ্জ্বল চেহারার মানুষ মো: রুবেল। ১৯৯০ সালের ৩ এপ্রিল এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মো: সেলিম এবং মাতা তইবা বেগম। পেশায় ভাঙারি ব্যবসায়ী রুবেলের পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার মীর ওয়ালীপুর গ্রামে। ফ্যাসিবাদ সরকারের দীর্ঘ ১৬ বছরের জুলুমের শিকার হয়েছিলো সর্বস্তরের জনগণ। অন্যায় -অবিচার, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে সারাদেশ। দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির। আর দিনমজুর ও শ্রমিক শ্রেণি করেছে মানবেতর জীবনযাপন। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এই দীর্ঘ সময় ধরে। তাই সরকারবিরোধী আন্দোলনে শরিক হয়ে জীবন উৎসর্গ করেছেন খেটে খাওয়া রুবেল। পারিবারিক আর্থিক অবস্থান জন্ম থেকে বেড়ে উঠেছেন দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে। জীবিকার তাগিদে ঢাকা শহরের সিদ্ধিরগঞ্জ এ করতেন ভাঙারির ব্যবসা। গ্রামে অসহায় বৃদ্ধ পিতামাতার খরচ, স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ নিজের বেঁচে থাকার সম্বল ছিলো এই ব্যবসাটুকু। তিনি শহীদ হওয়ার সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পড়ে যায় তার ব্যবসা। চারদিক থেকে অন্ধকার ঘিরে ধরে বিধবা রুপাকে। দুই সন্তান নিয়ে অসহায় রুপা যেন আবার নতুন করে জীবন সংগ্রামে লিপ্ত হলেন। দুই মেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে স্বামীর ব্যাবসা আবার দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন তিনি। ঘটনার বিবরণ ২১ জুলাই, ছাত্র আন্দোলন তখন তুঙ্গে। ১৫ জুলাই ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রদের উপর ব্যাপক হামলা চালায় পুলিশ ও ছাত্রলীগ, এতে তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী আহত হয়ে ঢামেকে চিকিৎসা নেন। ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হলে আন্দোলন স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তারই জের ধরে ১৯ জুলাই পর্যন্ত আওয়ামীলীগের সব অংগ সংগঠন, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হলে সরকার কারফিউ জারি করে। ২১ জুলাই বিকেলে ভাঙারির দোকান বন্ধ করে আন্দোলনে যোগ দেন রুবেল।মিছিল নিয়ে বের হলে স্থানীয় পুলিশ গুলি চালায় আন্দোলনরত ছাত্রজনতার উপর। পরপর ৫ টি গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে যান রুবেল। একটি গুলি হাঁটুর নিচে, আরেকটি গুলি লাগে উরুতে, বাকি ৩ টি গুলি মেরুদণ্ড ভেদ করে চলে যায়।গুলিবিদ্ধ স্থানের মাংস খুলে পড়ে যায়।অনবরত রক্ত ঝড়তে থাকে ক্ষতস্থান থেকে।সাথে থাকা ফুফাতো ভাই ও স্থানীয় লোকজন মিলে কাছাকাছি একটা ক্লিনিকে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে তার ভর্তি নেয়া হয় না। পরে ভ্যানে করে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করতে হয় তাদেরকে। অপেক্ষারত অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় মারা যান রুবেল। এখানেই শেষ নয়, লাশ আনার জন্য কোনো গাড়ি বা এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যায়নি সেদিন। অগত্যা ভ্যানে করে তাকে সিদ্ধিরগঞ্জে আনার সিদ্ধান্ত নেন তারা। লাশ আনার পথে জায়গায় জায়গায় পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন রুবেলের পরিবার। পরে কয়েকজন ছাত্রের সহযোগিতায় নিজ বাসায় আনা হয় তাকে। সেখানে তার জানাজা শেষে নিজবাড়িতে নেয়ার জন্য বহুকষ্টে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় একটি এ্যাম্বুলেন্স ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে নিজ গ্রামে আনতে আনতে লাশে গন্ধ হয়ে যায়। ক্ষতস্থানগুলো থেকে বাসি রক্ত ও ময়লা পানি ঝরা শুরু হয়। তাই তড়িঘড়ি করেই দাফন করা হয় শহীদ রুবেলের লাশ। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি শহীদের প্রতিবেশি চাচাতো ভাই মোজাম্মেল হোসেন সাদ্দাম জানান, রুবেল খুব ভাল মানুষ ছিলেন। ঢাকায় থাকার পরেও গ্রামে মা বাবা ও ভাইবোনদের খোঁজ নিতেন তিনি। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: রুবেল জন্ম তারিখ : ৩ এপ্রিল ১৯৯০, বয়স ২৪ পিতার নাম : মো: সেলিম মাতার নাম : তইবা বেগম গ্রাম : মীর ওয়ালীপুর থানা : বেগমগঞ্জ জেলা : নোয়াখালী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ : ১. স্ত্রী : ২. মোসা: রিমা (বয়স -৮, ২য় শ্রেণি) : ৩. মোসা: জান্নাত (বয়স-২) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ২১ জুলাই, ২০২৪, সিদ্ধিরগঞ্জ থানার সামনে আক্রমণকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ঢামেক, ২১/০৭/২০২৪ সমাধি : নিজ গ্রাম শহীদ পরিবারকে সাহায্যের প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান প্রয়োজন ২. মায়ের চোখের চিকিৎসা ও বাবার স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা ৩. ব্যাবসা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ৪. মেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালানো