জন্ম তারিখ: ১ অক্টোবর, ২০০৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : হার্ডওয়্যারে কাজ করতেন, শাহাদাতের স্থান : চিটাগং রোড
২০০৬ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন সুমন ও বিবি কুলসুমের অভাবের ঘরে প্রথম সন্তান হিসেবে জন্ম সজিবের। একদিকে প্রানপ্রিয় সন্তানের আহার চিন্তা অন্যদিকে ভবিষ্যতের সচ্ছলতার আশায় এক মিশ্র অনুভুতির সৃষ্টি হয় হতদরিদ্র এই দম্পতির মনে। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া সজিবের পড়ালেখা বেশিদূর যেতে পারেনি। অল্প বয়েসেই ধরতে হয়েছে পরিবারের হাল। দিনমজুরি করেই পরিবারকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছেন। সজিবের জন্ম নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রসুলপুর ইউনিয়নের লাউতলী গ্রামে। পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ সজিবের বাবা রিকশা চালক। মা গৃহিণী। নিজেদের ঘরবাড়ি ও জমিজমা না থাকায় নানাবাড়িতে থাকেন তারা। সজিব নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডে বিক্রমপুর হার্ডওয়্যারে কাজ করতেন। একমাত্র ছোট ভাই আশরাফুলের বয়স মাত্র আট। সে একটি প্রাইমারী স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয়। তারমধ্যে প্রাণপ্রিয় সন্তান এবং একটু আশার আলো সজিবকে অপ্রত্যাশিতভাবে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছে তার হতদরিদ্র পরিবার। “দেখিনু সেদিন রে কুলি বলে এক বাবুসাব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে! চোখ ফেটে এল জল এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল? “ না, এ আমরা হতে দিতে পারি না। শহীদ সজিবের অসহায় পরিবারের পাশে দাড়ানো এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। ঘটনার বিবরণ বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে,তখন ছাত্রজনতাকে নৃশংস কায়দায় দমন করার চেষ্টা করে অবৈধ সরকার ও তার বাহিনী। সারাদেশে পুলিশ, বিজিব, র্যাব মোতায়েন করে। সাজোয়া যানে টহলরত সেনাবাহিনী শুরু করে তল্লাশী। ইন্টারনেট সেবা তখন বন্ধ, আর দেশজুড়ে জারি করা হয় কারফিউ। তাতেও ক্ষান্ত হয়নি ফ্যাসিবাদ সরকার। হেলিকপ্টারযোগে গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল ছোঁড়া হয় আন্দোলনরত ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর। অনেক শিশুও নিহত হয় সেই গুলিতে। ২০ জুলাই নারায়ণগঞ্জের চিটাগং রোডে ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনের ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে সজিবও যোগ দেন মিছিলে। হঠাৎ করেই সেই মিছিলে হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ করা হয় অঝোর ধারায়। ছুটে আসা ২ টি বুলেট বিদ্ধ হয় সজিবের গায়ে। জায়গায় লুটিয়ে পড়েন সজিব। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় পিচঢালা কালো পথ। তার নিথর দেহ কালের সাক্ষী হয়ে পড়ে থাকে রাজপথে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখান থেকে তার লাশ উদ্ধার করে আনে তার বন্ধুরা। পরে পরিবারের লোকজন এসে তাকে নিয়ে যায় নিজ বাড়িতে এবং সেখানেই দাফন করা হয় শহীদ সজীবকে। এক নজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মোহাম্মদ সজিব পিতার নাম : সালাউদ্দিন সুমন মাতার নাম : বিবি কুলসুম ঠিকানা : লাউতলী, রসুলপুর, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : তিন জন : ১. বাবা : ২. মা : ৩. ভাই (আশরাফুল, বয়স-৮, ৩য় শ্রেণি) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪, চিটাগং রোড আক্রমণকারী : পুলিশ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪, চিটাগং রোড সমাধি : নিজ গ্রাম সহযোগিতা প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান প্রয়োজন ২. বাবার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করে দিয়ে স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করা ৩. ছোট ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ চালানোর দায়িত্ব নেয়া
তাদের প্রতিদান তাদের রবের কাছে রয়েছে, জান্নাত, যার নিচ দিয়ে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। (সুরা আল-ইমরান ৩:১৪৭)
হজরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৮)
.jpg)
.jpg)
.jpg)
.jpg)