জন্ম তারিখ: ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৮ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: চাকরি, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মেডিকেল
ঘর্মাক্ত শরীর, কপালে লাল সবুজের পতাকা বাঁধা। দুই হাত উঁচু করে প্ল্যাকার্ড ধরে দাঁড়িয়ে আছেন মো: বেলাল হোসেন। যাতে লিখা ছিলো "Step Down Hasina" যে দেশে বাক স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয় সে দেশে এটাই বুঝি প্রতিবাদের ভাষা। ২৬ বছরের টগবগে যুবক শহীদ বেলাল হোসেন। দারিদ্রের কশাঘাত তাকে ছাড়পত্র দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। কিন্তু তার মন মনন জুড়ে ছিলো জ্ঞান পিপাসা। অন্যায়ের প্রতিবাদ দৃশ্যমান ছিলো তার দুচোখের চাহনিতে।ছাত্রলীগের গুলির আঘাত চিরতরে নিভিয়ে দেয় রাব্বির জীবন প্রদীপ। শহীদ বেলাল ১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মৃত কবির হোসেন এবং জেসমিন আক্তারের তিন সন্তানের মধ্যে বয়সে সবার বড়। পরিবারের আর্থিক অবস্থান বিধবা মা ও দুইবোন সহ ৪ জনের পরিবারের ছিলো শহীদ বেলাল হোসেন। তাই বড় ভাই হিসেবে বাবার দায়িত্ব পালন করতে হয় তাকেই। মিরপুর সরকারি বাংলা কলেজের মানবিক বিভাগ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছেন তিনি। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে লিফটম্যানের চাকরি নেন কাকরাইলের মুসাফির টাওয়ারে। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছোট দুইবোনের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ চলতো তার আয়েই। শহীদ বেলালের মৃত্যুতে একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন জেসমিন আক্তার। বিবাহ উপযুক্ত দুই মেয়েকে নিয়ে কোথায় যাবেন, কি করবেন ভেবে কূল পাচ্ছেন না বেলালের মা। বাবা হারানোর পর ভাই-ই ছিলেন দুইবোনের আশা ও ভরসার কেন্দ্র। ছাত্রলীগের নৃশংসতার শিকার হলেন তাদের প্রাণপ্রিয় ভাই। যেভাবে শহীদ হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা জুলাই মাসে প্রাণ হারায় হাজারো মানুষ। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতৃত্বে শিক্ষার্থী ও আন্দোলনকারীদের উপর রড, লাঠি, হকিস্টিক, রামদা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা করা হয়। অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। যার ফলশ্রুতিতে ৩ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল ও ৪ আগস্ট সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ৪ আগস্ট রাজধানীর বাংলামটর এলাকায় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন শহীদ বেলাল। আন্দোলনের শুরু থেকেই মায়ের নিষেধ উপেক্ষা করে রোজ রোজ আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। মা তাকে নিষেধ করলে তিনি বলেন, “অনেকের মায়েরাই তো আন্দোলন করতে মাঠে নামছে, আর তুমি আমাকে নিষেধ করো? আরে মা, তুমি একদম চিন্তা করো না।” মিছিলে থাকাকালীন পার্শ্ববর্তী একটি বহুতল ভবন থেকে ছাত্রলীগের গুলি বেলালের ঘাড়ের অংশ ছিন্নভিন্ন করে দেয়। উপস্থিত লোকজন ও তার বন্ধুরা বহুকষ্টে তাকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় বেলাল হোসেন আর নেই। কিন্তু তার বন্ধুদের বিশ্বাস না হওয়ায় তারা তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে ও ডাক্তার পাওয়া যাচ্ছিলো না। বেশ কিছু সময় পরে ডাক্তার জানান তাকে এই মুহুর্তে আইসিউতে না রাখলে বাঁচানো যাবে না। পরে তাকে দ্রুত আইসিউতে স্থানান্তর করা হয়। ডাক্তার স্বল্পতা, অবহেলা ও বেলালের শারীরিক কন্ডিশনের কারণে তার অপারেশন করা যাচ্ছিলো না। বুলেটের আঘাতে তার স্পাইনাল কর্ড ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। ফলে শরীরের বেশিরভাগ অংশই প্যারালাইজড হয়ে যায়। তার পরিবার তাকে প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়ার চিন্তা করেলেও কোনো হাসপাতাল তাকে ভর্তি নিচ্ছিলো না কারণ সে আন্দোলনরত ছিলো এবং গায়ে বুলেটের আঘাত ছিলো। এভাবেই সময় অতিবাহিত হতে থাকে। ফলে ঢাকা মেডিকেলে নামেমাত্র চিকিৎসাধীন থেকে ৮ আগস্ট সকাল ১১টায় তিনি মারা যান। মায়ের অনুভূতি শহীদের মা বলেন,আমার ছেলের কি দোষ ছিলো? সে তো দেশের পক্ষেই কাজ করছিলো? তাকে কেন মারা হলো? আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। এক নজরে শহীদ পরিচিতি পুরো নাম : মো: বেলাল হোসেন জন্মতারিখ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮, ২৬ বছর পেশা : চাকরি পিতার নাম : মৃত কবির হোসেন মাতার নাম : জেসমিন আক্তার ঠিকানা : গ্রাম: হাজীপুর থানা : বেগমগঞ্জ, জেলা : নোয়াখালী পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৩ : ১. মা : ২. বোন-লামিয়া সুলতানা পুতুল(বয়স-১৮, কলেজ) : ৩. বোন-তাহমিনা সুলতানা তিথি(বয়স-১৬, দশম শ্রেণি) আহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : বাংলামটর, ০৪/০৮/২০২৪ আক্রমণকারী : ছাত্রলীগ নিহত হওয়ার স্থান ও তারিখ : ঢাকা মেডিকেল, ৮ আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১ টা সমাধি : নিজ গ্রাম শহীদ পরিবারকে সহযোগিতা প্রস্তাবনা ১. বাসস্থান প্রয়োজন ২. শহীদের মায়ের চিকিৎসা সহযোগিতা ৩. স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা ৪. বোনদের পড়াশোনা ও বিয়ের ব্যবস্থা করা