Image of তানভীর হোসেন মাহমুদ

নাম: তানভীর হোসেন মাহমুদ

জন্ম তারিখ: ৩০ মার্চ, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : দিনমজুর, শাহাদাতের স্থান: সোনাইমুড়ী থানার সামনে

শহীদের জীবনী

“তোমরা তাকে না মেরে আমাকে মারোনি কেন, আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো” (শহীদের মা) শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি উপজেলার হোসেনপুর গ্রামে ৩০ মার্চ ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম গিয়াস উদ্দিন এবং মাতার নাম নার্গিস আক্তার। তার পিতা বেশ কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন এবং মা একজন গৃহিণী। ছোটবেলা থেকে অভাবের সংসারে কষ্ট করে বড় হন হোসেন মাহমুদ। দিনমজুর বাবা সারাদিন পরিশ্রম করে সন্ধ্যায় যে টাকা পেতো তা দিয়ে চলত তাদের সংসার। অর্থ কষ্টের কারণে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর মা অনেক কায়ক্লেশের ভিতরে বড় করেন তাকে। স্থানীয় হোসেনপুর রহমানিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। তানভীর পড়াশুনায় বেশ মেধাবী ও মনোযোগী থাকলেও পরিবারের অভাবের কারণে তার পড়াশুনার ইতি টানতে হয় অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। যেভাবে শহীদ হন ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল। দিনটি ছিল সোমবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিজয়ের দিন।এদিন বাংলাদেশের জনগণ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পায়। শেখ হাসিনা এদিন জনগণকে জুলুম নির্যাতনের ভিতরে রেখে হেলিকপ্টার যোগে ভারত পালিয়ে যায়। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ রাস্তায় বিজয় মিছিল করার জন্য নেমে পড়ল। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অলিগলিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। উৎসুক জনতা বিজয় মিছিল নিয়ে সোনাইমুড়ি থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আতঙ্কিত হয়ে জনসাধারণের উপর গুলি ছুড়ে। এই মিছিলে জনসাধারণের সাথে যুক্ত ছিলো শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ। পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে বুলেট বিদ্ধ হয়ে ঘটনা স্থলেই শাহাদাত বরণ করেন শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ। জানাজা ও দাফন পরবর্তীতে নিজ গ্রামে শহীদের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে এখানেই তাকে দাফন করা হয়। গগণবিদারী আহাজারি পরিবারের শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ শাহাদাত বরণের মাধ্যমে তার পরিবারেই অন্ধকারের শামিয়ানা নেমে আসে। তারা এক ভাই এক বোন; একমাত্র বোনটি বিবাহিত। বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা একমাত্র সন্তানকে নিয়ে একটি কুঁড়েঘরে থাকতেন। মায়ের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলেন শহীদ তানভীর হোসেন। মা তার সন্তানের দিকে তাকিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিয়েতে বসেনি। আজ তার সকল স্বপ্ন ঘাতক পুলিশের গুলিতে তছনছ হয়ে গেল। তার পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোন অবলম্বন বাকি থাকলো না। বাড়িতে থাকার মত একজন সঙ্গীও রইল না। সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে গিয়েছেন তিনি। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে তিনি গগন বিদারী আহাজারি করছেন আর বলছেন, আমার কি দোষ ছিল, তোমরা তাকে না মেরে আমাকে মারোনি কেন, আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো? একমাত্র বোনের একমাত্র ভাইকে হারিয়ে বোনটি এখন দিশেহারা অবস্থায়। ভাইয়ের কথা মনে পড়লেই কান্না করেন আর বলেন, আমার মায়ের বেঁচে থাকার স্বপ্ন আমার ভাইকে ঘিরেই ছিল। কিন্তু খুনি পুলিশ আমার মায়ের স্বপ্ন ভেঙে দিল। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম। শহীদ তানভীন হোসেন মাহমুদের বাবা মৃত । একমাত্র ছেলে তানভীন হোসেন মাহমুদ শহীদ হলেন। এখন মা ও বোন ছাড়া পরিবারটিতে আর কোন পুরুষ মানুষ নেই। অভিশাপ আসমান কাঁপে একটি পরিবার কিভাবে ক্ষত বিক্ষত হতে পারে শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ এর পরিবারকে দেখলেই বুঝা যায়। তিনি শহীদ হওয়ার সাথে সাথে তার পরিবার কত বিক্ষত হয়ে পড়ে। এমনিতেই অভাবের সংসার। সেখানে আবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির তিরধান। যারা শহীদ করেছে তাদের উপর যে অভিশাপ, সেই অভিশাপে আসমান কাপে। পৃথিবীতে মজলুম দুনিয়াবাসির উদাহরণ হয়ে থাকবে শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ। এক নজরে শহীদ তানভীর হোসেন মাহমুদ নাম : তানভীর হোসেন মাহমুদ জন্ম তারিখ : ৩০ মার্চ ২০০২, ২২ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের তারিখ, সময় ও স্থান : ০৫ আগস্ট ২০২৪ , সন্ধ্যা ৫.৩০ টা, সোনাইমুড়ী থানার সামনে দাফন করা হয় : নিজ গ্রামে বাবা : মৃত মাওলানা গিয়াস উদ্দীন মা : নারগিস ফাতেমা বাড়িঘর ও সম্পদের বিবরণ : একটি পাকা বাড়ি ও অল্প ভিটাজমি আছে ভাই বোনের বিবরণ : একমাত্র বোন বিবাহিত প্রস্তাবনা ১. পারিবারিক অর্থনৈতিক সমস্যা আছে। পরিবারটিকে দেখার মত কেউ নেই। তাই নিয়মিত সাহায্যের ব্যবস্থা করা ২. পরিবারটির জন্য স্থায়ী একটি আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে ভালো হয় মা ও বোনের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখতে হবে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of তানভীর হোসেন মাহমুদ
Image of তানভীর হোসেন মাহমুদ
Image of তানভীর হোসেন মাহমুদ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

জামসেদুর রহমান জুয়েল

মো: সাগর

ইউনুছ আলী শাওন

মো: ওয়াকিল আহমদ শিহাব

মো: জাকির হোসেন (শাকিব)

 কাউছার হোসেন

মো: আমিনুল ইসলাম সাব্বির

মো: জহিরুল ইসলাম

হাফেজ মাসুদুর রহমান

শাব্বির হোসেন

সৈকত চন্দ্র দে

ছাইদুল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo