জন্ম তারিখ: ৩ ডিসেম্বর, ২০১০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : দিনমজুর শাহাদাতের স্থান : সোনাইমুড়ী থানার সামনে
শিশু শহীদ ইয়াছিন ৩ ডিসেম্বর ২০১০ সালে নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডে জন্মগ্রহণ করে। তার বাবার নাম মোহাম্মদ হানিফ। তিনি একজন খেটে খাওয়া দিনমজুর। মায়ের নাম লাকি বেগম। তিনি একজন গৃহিণী। তিনজন মেয়ে জন্মগ্রহণ করবার পরে ইয়াছিন একমাত্র ছেলে জন্মগ্রহণ করায় মা বাবা অনেক খুশি হন। পাশাপাশি খুশি হন তার আগে পৃথিবীতে আসা তিন বোন। কিন্তু খুব অল্প বয়সেই সবাইকে রেখে পরপারে পাড়ি জমায় সে। ছোটবেলা থেকে অভাব অনটনের সংসারে বড় হন ইয়াছিন। বাবা তাদের চার মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে নিদারুণ কষ্টে সংসার চালায়। ইয়াসিন অর্থাভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেনি। স্থানীয় সোনাইমুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অক্ষর জ্ঞান অর্জন করে নেমে পড়ে সংসারের ঘানি টানার কাজে বাবাকে সহযোগিতা করতে। বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে দিনশেষে বাবাকে নগদ টাকা দিতো সে। দিনমজুর হিসেবে কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের হাল ধরার চেষ্টা করছিল ছোটবেলায়। যেভাবে শহীদ হলেন তিনি ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল। দিনটি ছিল সোমবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিজয়ের দিন। এদিন বাংলাদেশের জনগণ ১৫ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনার স্বৈরশাসন থেকে মুক্তি পায়। খুনি শেখ হাসিনা এদিন জনগণকে জুলুম নির্যাতনের ভিতরে রেখে হেলিকপ্টার যোগে ভারত পালিয়ে যায়। ফ্যাসিস্ট হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ রাস্তায় বিজয় মিছিল করার জন্য নেমে পড়ল। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অলিতে গলিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। উৎসুক জনতা বিজয় মিছিল নিয়ে সোনাইমুড়ি থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ঘাতক পুলিশ আতঙ্কিত হয়ে জনসাধারণের উপর গুলি ছুঁড়ে। এই মিছিলে জনসাধারণের সাথে যুক্ত ছিলো শহীদ ইয়াছিন। ঘাতক পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে বুলেট বিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন শহীদ ইয়াছিন। কেমন আছে শহীদের পরিবার শহীদ ইয়াছিনকে হারিয়ে তার পরিবার এখন বিপর্যস্ত। চার বোনের এক ভাই ছিলো শহীদ ইয়াছিন। ছোটবেলায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বাবার সংসার পরিচালনায় সহযোগিতা করার জন্য দিনমজুরের কাজ করতো। একটি পরিবার কতটুকু অভাব অনটনের মধ্যে থাকলে একটি চৌদ্দ বছরের শিশুকে দিনমজুরের কাজ করতে পাঠায়। এই পরিবার তার জ্বলন্ত নমুনা। শহীদের মা লাকি বেগমের গগণ বিদারী আহাজারি সবাইকে আবেগাপ্লুত করছে। তিনি বলেন, “আমার ছোট যাদু, সে কার কি দোষ করেছে, কেন তাকে মারতে হলো, কেন আমার বুক খালি করল? তোমরা আমার ছেলেরে এনে দাও ” শহীদের বাবা ছেলের মৃত্যু শোকে কোন কথাই বলতে চায়না। অপলক চেয়ে থাকে আর কান্না করে। জান্নাতের পাখি শহীদ ইয়াছিন নিঃসন্দেহে শহীদ ইয়াছিন জান্নাতের পাখি। সে জান্নাতে পাখি হয়ে উড়ে বেড়াবে। তার কোন দোষ ছিল না। সে একজন নিষ্পাপ নাবালক ছেলে ছিল। আওয়ামী পুলিশ তাকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। অকালে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। শহীদ ইয়াছিন এই জাতির মুক্তির জন্য ছোট বয়সে তার জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এদেশের মুক্তিকামী মানুষের ইতিহাস যেখানে লেখা থাকবে, সেখানে শহীদ ইয়াছিন এর নাম জ্বল জ্বল করবে। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা শহীদ ইয়াছিনের বাবা একজন দিনমজুর। শহীদ ইয়াছিনও দিনমজুরি করে তার বাবাকে সহযোগিতা করতো। পরিবারটি একটি নিম্নবিত্ত পরিবার। একটি ছোট টিনের বাড়ি ও অল্প ভিটা জমি আছে। এক নজরে শহীদ ইয়াছিন নাম : ইয়াছিন পেশা : দিনমজুর জন্ম তারিখ ও বয়স : ০৩ ডিসেম্বর ২০১০ সাল, ১৩ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট ২০২৪ সাল, সোমবার, সন্ধ্যা ৫.৩০ টা শহীদ হওয়ার তারিখ সময় ও স্থান : ০৫ আগস্ট ২০২৪ সাল, সোমবার, সন্ধ্যা ৫.৩০ টা, সোনাইমুড়ী থানার সামনে দাফন করা হয় : নিজগ্রাম কবরের জিপিএস লোকেশন : https://maps.app.goo.gl/W9viGMh63UVZ4BNS7 স্থায়ী ঠিকানা : সোনাইমুড়ি পৌরসভা, ৫নং ওয়ার্ড, নোয়াখালী পিতা : মো : হানিফ মাতা : লাখি বেগম ভাইবোনের বিবরণ : ৪ বোন। এখন কোন ভাই নেই। বোনদের মধ্যে একজন ছাড়া সবাই বিবাহিত প্রস্তাবনা-১ : বাসস্থান প্রয়োজন। প্রস্তাবনা-২ : পরিবার চালানোর জন্য নিয়মিত অনুদান এর ব্যবস্থা করলে ভালো হয় অথবা শহীদের বাবাকে একটা অটো গাড়ি কিনে দেওয়া যেতে পারে।