জন্ম তারিখ: ২৫ জুন, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : গাড়ি চালাতেন, শাহাদাতের স্থান : সোনাইমুড়ী থানার সামনে
শহীদ মাঈন উদ্দিন নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী পৌরসভার ফুলিয়া গ্রামে ১৯৯০ সালের ২৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মৃত আবদুল রাজ্জাক। তিনি বেশ কয়েক বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। তার মায়ের নাম আলেয়া বেগম। মাঈন উদ্দিন বেড়ে ওঠেন তার গ্রামেই। গ্রামের সবুজ শ্যামল প্রাকৃতিক পরিবেশ তার আচার আচরণে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। তিনি স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে অক্ষর জ্ঞান লাভ করেন। পরে পরিবারের হাল ধরার জন্য গাড়ি চালানোর দক্ষতা অর্জন করেন। শাহাদাত বরণের আগ পর্যন্ত তিনি গাড়ি চালানো পেশায় যুক্ত ছিলেন। যেভাবে শহীদ হন ৫ আগস্ট ২০২৪ সাল। দিনটি ছিল সোমবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বিজয়ের দিন। এদিন বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘ দেড় যুগেরো বেশী সময় ধরে চলতে থাকা স্বৈরাচারী হাসিনার দুঃশাসন থেকে মুক্তি পায়। ধূর্ত শেখ হাসিনা এদিন জনগণকে জুলুম নির্যাতনের ভিতরে রেখে হেলিকপ্টার যোগে ভারত পালিয়ে যায়। খুনি হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে এদেশের আপামর জনসাধারণ রাস্তায় বিজয় মিছিল করার জন্য নেমে পড়ে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটা অলিতে গলিতে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, পালিয়ে গেছে। ক্ষুব্ধ মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার বারংবার বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয় ‘খুনি হাসিনা দেইখা যা, ছাত্র-জনতার ক্ষমতা’, ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার; কে বলেছে, কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’, ‘চাইলাম অধিকার হয়ে, হয়ে গেলাম রাজাকার’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘আমার খায়, আমার পরে, আমার বুকেই গুলি করে’, ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাই ফিরিয়ে দে’, ‘বন্দুকের নলের সাথে ঝাঁজালো বুকের সংলাপ হয় না’ এবং ‘লাশের ভেতর জীবন দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে ওঠো আরেকবার’; ‘যে হাত গুলি করে, সে হাত ভেঙে দাও’ এবং ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ছাত্র-জনতার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘জ্বালো রে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ এবং ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘বুকের ভেতর অনেক ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’ এর মত বিপ্লবী স্লোগান সমূহ। যা রাজপথকে করে তুলেছিলো আরও মুখরিত। উৎসুক জনতা বিজয় মিছিল নিয়ে সোনাইমুড়ি থানার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আতঙ্কিত হয়ে জনসাধারণের উপর নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ে। এই মিছিলে জনসাধারণের সাথে যুক্ত ছিলো শহীদ মাঈন উদ্দিন। পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলিতে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। এতে বুলেট বিদ্ধ হয়ে ঘটনা স্থলেই শাহাদাত বরণ করেন শহীদ মাঈন উদ্দিন। জানাজা ও দাফন পরবর্তীতে নিজ গ্রামে শহীদ মাঈন উদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। পরিবারে শোকের মাতম শহীদ মাঈন উদ্দিনের এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে সিফাত উদ্দিন এর বয়স এগার বছর। ছোট মেয়ে ইসপিয়া আক্তার এর বয়স পাঁচ বছর। তারা দুজনেই পড়াশোনা করে। বাবার মৃত্যুতে তাদের পরিবারে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। শহীদের স্ত্রী পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় জীবন পার করছে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে পরিবারটি এখন সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। স্ত্রী বলেন, আমার স্বামীর কী দোষ ছিল, আমার স্বামীকে কেন মারা হলো, এখন আমি আমার দুই সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাব? আমার স্বামীকে যারা মেরেছে আমি তাদের ফাঁসি চাই। বাবার অনুপস্থিতিতে তার ছেলেমেয়েগুলো বাবাকে খুঁজে চলেছে প্রতিদিন। নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদ মাঈন উদ্দিনের নিকট আত্মীয় বলেন, সবার সাথে ভালো সম্পর্ক ছিল মাঈন উদ্দিনের। সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিল এবং ৫ তারিখ বিকেল ৫ টায় সোনাইমুড়ী থানার গেটে গুলিবিদ্ধ হন এবং সোনাইমুড়ী হাসপাতালে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সত্যপন্থী শহীদ মাইন উদ্দীন শহীদ মাঈন উদ্দিন ছিলেন আন্দোলন সংগ্রামের অগ্র সেনানী। স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে শহীদ মাইনুদ্দিন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাহসিকতার সাথে। বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত তিনি জীবন বাজি রেখে বাতিলের বিরুদ্ধে লড়েছেন। অবশেষে বিজয় অর্জনের দিনেই ঘাতকের বুলেটে শাহাদাতের সুধা পান করে পরকালে পাড়ি দেন তিনি। এক নজরে শহীদ মাঈন উদ্দিন নাম : মাঈন উদ্দিন জন্ম তারিখ : ২৫ জুন ১৯৯০ সাল আহত হওয়ার তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাত বরণের তারিখ, সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪ , সন্ধ্যা ৫:৩০ টা, সোনাইমুড়ী থানার সামনে দাফন করা হয় : নিজ গ্রাম কবরের লোকেশন : যঃঃঢ়ং : https://maps.app.goo.gl/rYne9ynU3wZ5n6cc9 বাবা : মৃত আব্দুর রাজ্জাক মা : আলেয়া বেগম বাড়িঘর ও সম্পদের বিবরণ : একটি টিনের বাড়ি ও অল্প ভিটাজমি আছে সন্তানাদির বিবরণ : এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের বয়স এগারো। মেয়ের বয়স পাঁচ বছর। দুজনেই পড়াশোনা করে প্রস্তাবনা ১.শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান করা ২. সন্তানের সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণ ৩. পরিবারের সব রকম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণ