Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী

নাম: মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী

জন্ম তারিখ: ৩ জুন, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল

শহীদের জীবনী

শহীদ মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী ৩ জুন ২০০৪ সালে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চর কৈলাশ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মুহাম্মদ জামাল উদ্দীন তিনি পেশায় একজন চাকরিজীবী। মায়ের নাম মুসা: ফরিদা ইয়াসমিন তিনি একজন গৃহিণী। পরিবারের বড় ছেলে রিজভী ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তার পড়াশুনার হাতে খড়ি হয় নিজ গ্রামেই। শিক্ষিত বাবা-মায়ের কাছে শিখেছেন অক্ষর জ্ঞান। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করার পর ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী উচ্চ বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক স্তর পাশের পর ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ভর্তি হন লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তিনি এই প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজির অষ্টম পর্বের ছাত্র ছিলেন। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ধুলিস্যাৎ হয়ে গেলো শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর স্বপ্ন ছিল একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়ে দেশের সেবা করা। পাশাপাশি বড় ছেলে হিসেবে পরিবারের হাল ধরা। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন লক্ষ্মীপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে। কিন্তু জালিমের বুলেট তার স্বপ্ন থামিয়ে দিল। তাকে পাঠিয়ে দিল জান্নাত গাহে। তার বাবা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, আমার বড় ছেলে, তাকে আমরা ছোটবেলা থেকে বড় করেছি। স্বপ্ন ছিল ছেলে বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবে। দেশের সেবা করবে। আমাদের সেবা করবে। কিন্তু অকালেই প্রাণ দিতে হলো আমার ছেলেটাকে। যেভাবে শহীদ হলেন তিনি ১৮ জুলাই ২০২৪ সাল। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বর্বরতম দিন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ আগের দিন রাতে সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে। ঢাকা নিকুঞ্জ এলাকায় বাসায় থাকতেন শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভী। সকালে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার জন্য উত্তরা বিএনএস সেন্টারে আসেন তিনি। সহপাঠীদের সাথে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে দুপুরে খাবার খেতে যান বাসায়। খাবার খেয়ে আবারও আন্দোলনে যোগ দেন তিনি এবং তার বন্ধুরা। সেদিন সারাদেশে পুলিশ হায়েনার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। নির্বিচারে গুলি চালানো হয় নিরপরাধ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর। ঢাকার উত্তরা আজমপুর এলাকায় ছাত্ররা অবস্থান গ্রহণ করলে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের ঘাতক পুলিশ তাদের উপর নির্বিচারে হামলা চালায়। পুলিশের সাথে যোগ দেয় বিভিন্ন স্তরের সন্ত্রাসী বাহিনী। অসংখ্য ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান অনেকে। একটি বুলেট এসে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর শরীর বিদ্ধ করে। সহপাঠীরা তাকে ধরাধরি করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে দীর্ঘ ছয় ঘন্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ার পর রাত ১১ টায় আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে শাহাদাতের সুধা পান করেন তিনি। জানাজা ও দাফন পরবর্তীতে শহীদ মাহমুদুল হাসানের মরদেহ নিজ গ্রাম হাতিয়া পৌরসভার চর কৈলাশে নিয়ে আসা হয়। এখানে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে এখানেই তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। কেমন আছে শহীদের পরিবার পরিবারে যিনি বড় ছেলে সন্তান থাকে তাকে নিয়ে পরিবারের অনেক স্বপ্ন থাকে। ঠিক তেমনি রিজভীকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন বুনে ছিলেন তার পরিবার। একজন প্রকৌশলী হয়ে দেশের সেবা করবেন এবং পরিবারের হাল ধরবেন। সেই স্বপ্ন লালন করতেন তিনি এবং তার পরিবার। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তেই বাতিলের বুলেট সেই স্বপ্ন তছনছ করে দিল। শহীদের পরিবারে এখন হতাশার বন্যা বয়ে চলছে। মা তার বড় ছেলেকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান হয়ে রয়েছে। বাবা তার সন্তানের জন্য হাহাকার করছে। একমাত্র বোন ফাইজা তার বড় ভাইয়ের আদর থেকে বঞ্চিত হয়ে গেল চিরদিনের জন্য। ফাইজা বলেন, আমার ভাইয়া আমাকে খুব আদর করতেন। আমার সকল আবদার পূরণ করতেন। আমার বন্ধুর মত ছিলেন। আমি ভাইয়াকে হারিয়ে খুবই শোকাহত। আমার ভাইয়াকে যারা মেরেছে আমি তাদের বিচার চাই। লড়াকু শহীদ মাহমুদুল হাসান রাজপথের লড়াকু সৈনিক ছিলেন শহীদ মাহমুদুল হাসান। ১৮ তারিখ বন্ধুদেরকে আন্দোলনে যাওয়ার জন্য সে নিজেই উদ্বুদ্ধ করে। সাহসিকতার সাথে উত্তরা এলাকায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। জালিমের বিরুদ্ধে বজ্রকণ্ঠে স্লোগান দিয়ে আন্দোলিত করে আকাশ বাতাস সহ রাজপথ; কম্পন ধরায় হায়েনার মনে, কাঁপুনি ধরায় ঘাতকের বিষাক্ত হৃদয়। মাঝখানে দুপুরে শুধুমাত্র খাবারের বিরতির পর আবারো অবিরত ঝাঁপিয়ে পড়ে। আন্দোলনের প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাই বাতিলের বুলেট তাকে টার্গেট করে হত্যা করে। বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনতা যতদিন বেঁচে থাকবে শহীদ মাহমুদুল হাসানদেরকে স্মরণ করবে ততদিন । শহীদ সম্পর্কে স্বজনদের অনুভূতি শহীদের ছোট ভাই রিমন জানায়, ছোট ভাই কখনও কিছু চাইলে না করতো না, সাথে সাথে দিয়ে দিতো। শহীদের বাবা নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্র সম্পর্কে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, কখনও বকা দিলে কোন উত্তর দিতোনা; শুধু হাসতো। শহীদের মামাতো ভাই আসিফ বলেন, হাসান সবার সাথে মিশতো। সবাইকে সম্মান করতো। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা শহীদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস তার পিতার চাকুরী। বেতনের টাকায় কোনরকম চলে সংসার। কোনো সঞ্চয় করা সম্ভব হয়না বিধায় নিজে ঘর করতে পারেনি। শ্বশুর বাড়িতে থাকেন পরিবার নিয়ে। এক নজরে শহীদ মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী নাম : মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী পেশা : ছাত্র জন্ম তারিখ ও বয়স : ৩ জুন ২০০৪, ২০ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ১৮ জুলাই ২০২৪ শহীদ হওয়ার তারিখ সময় ও স্থান : ১৮ জুলাই ২০২৪, রাত ১১ টা, উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল শাহাদাত বরণের স্থান : উত্তরা ক্রিসেন্ট হসপিটাল দাফন করা হয় : নিজগ্রামে কবরের জিপিএস লোকেশন : https://maps.app.goo.gl/SaPAg4QnD4kw4rCEA স্থায়ী ঠিকানা : চর কৈলাশ, হাতিয়া পৌরসভা, নেয়াখালী পিতা : মো: জামাল উদ্দীন মাতা : ফরিদা ইয়াসমিন ভাইবোনের বিবরণ : এক ভাই ও একবোন (শহীদ ছাড়া) । দুজনই পড়াশোনা করেন প্রস্তাবনা ১. বসবাসের জন্য একটি ঘর করে দিলে ভালো হয় ২. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান করা ৩. শহীদের ছোট ভাই-বোনের পড়াশুনা সহ ভবিষ্যতের সকল খরচ যোগানোর ব্যবস্থা করা

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী
Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী
Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী
Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী
Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী
Image of মো: মাহমুদুল হাসান রিজভী

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

হাফেজ মাসুদুর রহমান

আলমগীর হোসেন

মো: মিজানুর রহমান

মো: হাসান

মো: ওয়াকিল আহমদ শিহাব

মো: ফয়েজ

মোহাম্মদ সজিব

মো: বাবু

মাজহারুল ইসলাম

মো: হাসান (হাফেজ হাসান)

সৈকত চন্দ্র দে

মো: আশিক মিয়া

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo