Image of মো: আরাফাত হোসেন আকাশ

নাম: মো: আরাফাত হোসেন আকাশ

জন্ম তারিখ: ১ মার্চ, ২০০৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২১ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: চট্টগ্রাম

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ফলের ব্যবসা করত, শাহাদাতের স্থান: প্রো-একটিভ মেডিক্যাল হাসপাতাল

শহীদের জীবনী

গ্রামের বাকি কিশোরের মতোই প্রাণবন্ত ছিল মো: আরাফাত হোসেন আকাশ (১৬)। স্কুল শেষে বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলা, পুকুরে ডুব সাঁতার, বাজারের দোকানে ওয়াইফাই সংযোগ নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে মোবাইল গেমস ছিল নিত্যদিনের রুটিন। জীবিকার তাগিদে ক’মাস আগে বাবার সঙ্গে নোয়াখালী থেকে নারায়ণগঞ্জে আসে। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে হাল ধরার যাত্রা শুরু করতেই শেষ হয়েছে আকাশের জীবনের পথচলা। আন্দোলনের প্রেক্ষাপট দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী দুঃশাসন, ভোটচুরি, দুর্নীতিন, খুন, অন্যায়, অত্যাচার জনমনে ফেলেছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। কোটা প্রথা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আবার ষড়যন্ত্র শুরু করে আওয়ামী সরকার। ২০১৮ সালে ছাত্রছাত্রীদের প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সকল দাবী মেনে নিলেও তার অন্তরে ছিল হিংসার অগ্নিগিরি। তাই ২০২৪ তালে একটি বিরোধী দলহীন নির্বাচনে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পর আবার কোটা ফিরিয়ে আনতে চাইল হাসিনা সরকার। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে টানা আন্দোলন শুরু হয়েছিল গত ১ জুলাই থেকে। অহিংস এই আন্দোলন ১৫ জুলাই থেকে সহিংস হয় । আন্দলোনে নিরস্ত্র ছাত্র জনতার ওপর সশস্ত্র ঘাতক ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও পুলিশ, জঅই সদস্যরা হামলা চালাতে থাকে। রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাতের পর থেকেই আন্দোলন গণমানুষের আন্দোলনে পরিণত হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই জনসাধারণের আন্দোলনে রূপ নেয়। এটি বৈষম্যবিরধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে সাধারণ ছাত্রদের অহিংস আন্দোলন ধীরে ধীরে ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী অভ্যুত্থানের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে এ আন্দোলন শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না; হয়ে উঠে দেশের আপামর জনতার এক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে এ অভ্যুত্থানে একাত্মতা প্রকাশ করে রাজপথে বেরিয়ে আসে। ক্ষুব্ধ জনতার তোপের মুখে স্বৈরাচার সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু পদত্যাগের পূর্বে তিনি রেখে যান তার ঘৃণ্য ও বিকৃত মস্তিষ্কের অজস্র কুকীর্তি। এরই অংশ হিসেবে আন্দোলনকারী সহ অনেক নিরীহ জনতার উপর লেলিয়ে দেয়া হয় সশস্ত্র বাহিনী। তাদের গুলিতে শহীদ হয় নিরস্ত্র নিপীড়িত জনতা। যেভাবে শহীদ হন ২১ জুলাই বেলা ১১ টায় ছোট ভাই আদনান (৬) আবদার করে দোকান থেকে নাশতা এনে দিতে। ছোট ভাইয়ের আবদার পূরণে বাসা থেকে বের হয় আকাশ। নাশতার সন্ধানে মহাসড়কের কাছাকাছি আসতেই হঠাৎ মুহুর্মুহু গুলির মাঝখানে পরে সে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুটি গুলি বিদ্ধ হয় আকাশের শরীরে। চিৎকার করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। আহত আকাশকে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় উদ্ধার করে বাবা আকরাম ছুটে যান এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজে (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে আকাশ। আকাশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড় এলাকায় বাবার সঙ্গে ফলের ব্যবসা করত। গুলিবিদ্ধও হয়েছে একই স্থানে। জানাযা ও দাফন ঘটনার দিনই লাশ নিয়ে যাওয়া হয় নিজ গ্রাম নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার ওয়াসিতপুর এলাকায়। দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। নিকট আত্মীয়ের বক্তব্য নিহতের চাচাতো ভাই পাভেল পুরো ঘটনার বর্ণনা, পারিবারিক অবস্থান ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন। আকাশ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ওয়াসিতপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। টেস্ট পরীক্ষায় রেজাল্ট ভালো না হওয়ায় স্কুল থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় ১০ হাজার টাকা দিলে অনুমতি মিলবে পরীক্ষার। কিন্তু আর্থিক অনটন থাকায় টাকা জোগাড় করা যায়নি। পরের বছর ফের পরীক্ষা দেবে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে চলে আসে সিদ্ধিরগঞ্জের নয়ায়াটি মুক্তিনগর এলাকায়। এখানে বাবার সঙ্গে থেকে ফলের ব্যবসা করত ফুটপাতে। পাভেল বলেন, ‘দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে আকাশ সবার বড়। ৫-৬ মাস আগে সিদ্ধিরগঞ্জ চলে আসে। আমার চাচা আকরাম হোসেন একটি গোডাউন ভাড়া নিয়ে সেখানে ফল রাখেন এবং গোডাউনেই বসবাস করেন। এক সপ্তাহ আগে আকাশের ছোট ভাই আদনানকে ডাক্তার দেখানোর জন্য গ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় ভাইকে ডাক্তার দেখাতে পারছিল না কেউ।’ ঘটনার দিন সকালে ছোট ভাইয়ের জন্য নাশতা আনতে বের হতেই চিটাগাং রোডের খানকা মসজিদের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপর তাকে সাইন বোর্ড প্রো-একটিভ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন তার বাম ঊরু ও মূত্রথলিতে গুলি লেগেছে। তারা সিরিয়াস রোগী রাখতে পারবে না বলে ঢাকা মেডিকেলে নিতে বলে। পথিমধ্যে চিরতরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে চলে যায় আকাশ। রাতেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে লাশ নোয়াখালীতে এনে দাফন করা হয়। আক্ষেপ করে পাভেল বলেন, ‘আমি আর আকাশ এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব কল্পনাতেও ভাবি নাই। আকাশের মৃত্যুতে আমার চাচা-চাচি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আকাশ তো কোনো রাজনীতি করত না। কোনো আন্দোলনেও যায় নাই তাহলে মরতে হইলো কেন? কোন অপরাধ না কইরা গুলি খাইতে হইসে আকাশের। এলাকায় খোঁজ নিয়া দেখেন কারও সঙ্গে কখনো মারামারি করে নাই। অনেক ভালো ছিল আমার ভাইটা। এই বয়সে পরিবারের কথা চিন্তা কয়জনে করে?’ আরাফাত হোসেন আকাশ এর পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তিনি ফুটপাতে ব্যবসা করেন। শহীদ হওয়ার কিছুদিন আগে আকাশ বাবার সাথে ফুটপাতে ফল বিক্রি শুরু করেন। তার মাসিক আয় অত্যন্ত কম ছিল। একনজরে শহীদ মো: আরাফাত হোসেন আকাশ নাম : মো: আরাফাত হোসেন আকাশ বাবা : মো: আকরাম মা : লাইলী বেগম জন্ম তারিখ ও বয়স : ১ মার্চ ২০০৮ সাল, ১৬ বছর আহত হওয়ার তারিখ : ২১ জুলাই ২০২৪ সাল, চিটাগাং রোড,বেলা ১১.৩০ টা শাহাদাত বরণের তারিখ, সময় ও স্থান : ২১ জুলাই ২০২৪ সাল, প্রো-একটিভ মেডিক্যাল হাসপাতাল দাফন করা হয় : নিজ গ্রামে কবরের লোকেশন : https://maps.app.goo.gl/GyBvotnxZxVzaoVB6 বাড়িঘর ও সম্পদের বিবরণ : একটি টিনের বাড়ি ও অল্প ভিটা জমি আছে ভাই বোনের বিবরণ : তার একজন বোন ও একজন ভাই আছে। দুজনই শিক্ষার্থী প্রস্তাবনা ১. পরিবারকে এককালিন আর্থিক সহায়তা প্রদান করা জরুরী কারণ দরিদ্র পরিবার ২. বাবার ব্যবসায় আর্থিক সহযোগীতা দেওয়া প্রয়োজন ৩. যোহেতু সরাসরি কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগদান করেন তাই সকল সময়ে শহীদের পরিবারের সথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলা দরকার ৪. ছোট ভাই বোনের পড়াশুনার সমস্ত খরচ চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: আরাফাত হোসেন আকাশ
Image of মো: আরাফাত হোসেন আকাশ
Image of মো: আরাফাত হোসেন আকাশ
Image of মো: আরাফাত হোসেন আকাশ
Image of মো: আরাফাত হোসেন আকাশ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: ইয়াছিন

 কাউছার হোসেন

মো: আহসান হাবিব

হাফেজ মাসুদুর রহমান

মো: বেলাল হোসেন

মো: ফয়েজ

মো: তানভীর ছিদ্দিকী

আলমগীর হোসেন

 কাজী আশরাফ আহমেদ রিয়াজের

মো: আশিক মিয়া

মো: আরিফ বেপারী

মো: নিজাম উদ্দিন ইমন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo