জন্ম তারিখ: ৩ জুলাই, ১৯৯০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : বাস ড্রাইভার, শাহাদাতের স্থান : রাজলক্ষ্মী
শহীদ আলমগীর হোসেন ১৯৯০ সালে নোয়াখালীর এক দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম শাহাজাহান এবং মাতার নাম আলেয়া বেগম। তিনি পেশায় ছিলেন একজন বাস ড্রাইভার ছিলেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের ঘাতকদের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেছেন। পারিবারিক অবস্থা শহীদ আলমগীর হোসেনের বয়স যখন অনেক কম তখন তার পিতা-মাতার বিচ্ছেদ ঘটে। মৃত্যুকালে শহীদ দুই ছেলেকে রেখে গিয়েছে। বড় ছেলের বয়স ৭ বছর এবং ছোট ছেলের বয়স মাত্র ৩ বছর। তিনি ছিলেন একজন বাস চালক। ঢাকার রাস্তায় রাইদা কোম্পানির বাস চালাতেন। তাঁর সীমিত আয় দিয়েই তিন সদস্যের সংসার চলত। মৃত্যুকালে শহীদ স্ত্রী ৯ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। মৃত্যুর কয়েকদিন পর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে। আলমগীরের ভীষণ ইচ্ছে ছিল একটি কন্যা সন্তানের। কন্যা ঠিকই হয়েছে তবে তিনি আর দেখে যেতে পারলেন না। স্বামীর এমন মৃত্যুতে শহীদ পত্নী খুবই মর্মাহত এবং দিশেহারা। ছোট ছোট ছেলে মেয়েকে নিয়ে কি করবেন কোথায় যাবেন যেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। প্রেক্ষাপট ২০০৮ সালে এক প্রহসণের নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন আওয়ামীলীগ সরকার। এসেই দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। এক তরফা নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন করে। গুম, খুন, হত্যা, মিথ্যা মামলা দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার মাধ্যমে বিরোধী দল মতকে দমনের ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম করে জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে। কালোবাজারি, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দ্রব্য মূল্যের মাত্রাতিরিক্ত উর্দ্ধগতি জনগণের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, কালোবাজারি, বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংক লুট, উন্নয়নের নামে সরকারি আমলাদের পকেট ভারি, মাদক, চোরাচালান ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। দুঃশাসন চলতে থাকে টানা ১৬ বছর। দীর্ঘ দিনের দুঃশাসন জনমনে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি করে। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ২০২৪ সালে আন্দোলন শুরু হয়। জুলাই বিপ্লবের দীর্ঘ ৩৬ দিনের রক্ত ক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। অবসান ঘটে দীর্ঘ ১৬ বছরের দুঃশাসনের। ৫ আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতা লং মার্চ টু গণভবন কর্মসূচির ডাক দেয়। এ ডাকে সারা দিয়ে সারা দেশ থেকে সাধাণ মানুষ ও ছাত্রজনতা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার, সবাই একত্রিত হয়ে সারাদেশে জনতার উপর নির্বিচারে গুলি চালায়। গুলির আঘাতে মৃত্যুবরণ করে শত শত মানুষ। আহত হয় সহস্র মানুষ। অবস্থা বেগতিক দেখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালায়। খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে বিজয় মিছিল বের হয়। পুলিশ, র্যাব বিজয় মিছিলেও গুলি চালায়। শহীদ আলমগীর হোসেন বিজয় মিছিলের সাথে গণভবনের দিকে আসছিলেন। মিছিল একপর্যায়ে উত্তরাতে পৌছায়। চারিদিকে তখন তুমুল গুলাগুলি চলতে থাকে। গুলির মুখে পড়েন শহীদ আলমগীর। উত্তরার র্যাব ব্যাটেলিয়ন থেকে অনবরত গুলি চালানো হয়। হঠাৎ একটা গুলি এসে আলমগীরের মাথায় লাগে। মুহুর্তেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। গুলির মুখে কেউ সামনে অগ্রসর হতে পারে না। গুলাগুলি কিছুটা কমলে লোকজন তাঁকে ধরে কুয়েত বাংলাদেশ সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শহীদ সম্পের্কে নিকটাত্মীয়দের বক্তব্য শহীদের স্বজনরা বলেন, আলমগীর হোসেন অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর সাথে কারও কোন বিরোধ ছিল না। সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন। তাঁর স্ত্রী বলেন, “আমাদের কোন কন্যা সন্তান নেই। তাই পরিবারের সবার ইচ্ছে ছিল একটা কন্যা সন্তানের। এবার যখন আমার গর্ভে সন্তান আসে আমার স্বামী বলেছিল কন্যা সন্তান হবে। তাঁর মৃত্যুর পর ঠিকই আমার কন্যা সন্তান হয়েছে। তবে যে মানুষটি দেখতে চেয়েছিল আজ সে নেই। আমার মেয়ে মাতৃগর্ভে এতিম হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।” এক নজরে শহীদ আলমগীর হোসেন নাম : আলমগীর হোসেন পিতা : শাহাজাহান মাতা : আলেয়া বেগম জন্ম তারিখ : ০৩-০৭-১৯৯০ বয়স : ৩৪ শহীদ হওয়ার তারিখ ও স্থান : ৫ আগস্ট ২০২৪, উত্তরা, রাজলক্ষ্মী দাফন করার স্থান : কাজিরখিল পারিবারিক কবরস্থান দাফনের তারিখ : ৬-০৮-২০২৪, সকাল: ১০টা ঠিকানা : নুরু মিয়া সর্দার বাড়ি, কাজিরখিল, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারে মাসিক সহযোগিতা করা যেতে পারে ২. শহীদ সন্তানদেরকে এতিম প্রতিপালন প্রকল্পের আওতাধীন করা যেতে পারে ৩. শহীদ স্ত্রীকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে