জন্ম তারিখ: ৪ এপ্রিল, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা: চাকরীজীবি, শাহাদাতের স্থান : দশঘরিয়া বাজার ,চাটখিল ,নোয়াখালী
শহীদ মো: ইমতিয়াজ হোসেন ৪ এপ্রিল ২০০২ সালে জনন্মগ্রহণ করেন। তিনি সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। কুরিয়ার সার্ভিসে ছোট একটি চাকরী করতেন। সারা দিন পথেই থাকতেন। আন্দোলনের দৃশ্যগুলো তার চোখের সামনেই ঘটত। জুলাই মাসে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের বুকে পুলিশের গুলি, তরতাজা রক্ত দেখে ইমতিয়াজ হোসেন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তার মতো অসংখ্য সচেতন নাগরিক হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনিও এক সময় আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ইমতিয়াজ হোসেন নিয়মিত শরীক হতেন। শহীদ হওয়ার প্রেক্ষাপট দীর্ঘ ১৬ বছরের অত্যাচার, জুলুম, খুন, গুমের ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশের আপামর জনতা জুলাই বিপ্লবে রাজপথে নেমে আসেন। সর্বস্তরের জনতার অংশগ্রহণে আন্দোলন বেগবান হয় আন্দোলন ধাপে ধাপে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনে পরিণত হয়। ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায় শতাব্দীর সেরা ফ্যাসিস্ট। জনগণ উল্লসিত হয়। দাবীর মিছিল তখন বিজয় মিছিল। হাসিনা পালিয়ে গেলেও দেশের অলিতে গলিতে রয়ে যায় হাসিনার খুনি পুলিশ, লাঠিয়াল আওয়ামী বাহিনী। ইমতিয়াজ হোসেনরা বিজয় মিছিল নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। ওঁৎপেতে থাকা খুনি হাসিনার বর্বর পুলিশ নির্বিচারে মিছিলে গুলি করে ইমতিয়াজদের বিজয় মিছিলে। মিছিল দশঘরিয়া বাজারে পৌছাতেই মুহুর্মুহু গুলি করে ঘাতক বাহিনী। একটি গুলিতে ইমতিয়াজ আহত হন। তিনি লুটিয়ে পড়েন। মিছিলের সাথীরা তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। ৫ আগস্ট দিবাগত রাত প্রায় ৩:৩০ টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিজয়ের দিনে নেমে আসে ইমতিয়াজের পরিবারে শোকের ছায়া। বিধবা হন সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। বাবা মা হারান তার প্রিয় পুত্র, ভাই বোন হারান তার আদরের ভাইকে। দ্বিতীয় স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনের মিছিলকে খুনি হাসিনার খুনি পুলিশ, আওয়ামী গুন্ডারা বিষাদ মিছিলে পরিণত করে। শুধু নোয়াখালী না, দেশের আরও বিভিন্ন স্থানে বিজয়ের দিনে নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বুলেটে বুলেটে শহীদ হন বিজয়ী জনতা। এই খুনি চক্রের বিচার হওয়া উচিত। হাসপাতাল থেকে শহীদের লাশ বাড়িতে আনা হয়। জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। পারিবারিক অবস্থা শহীদ মো: ইমতিয়াজ হোসেনের পরিবার একটি নিম্নবিত্ত পরিবার। তার বাবা অন্যের জমিতে দিন মজুরির কাজ করেন। অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই নাজুক। ইমতিয়াজ হোসেন একটি কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি করতেন। তাদের নিজস্ব কোন জায়গা জমি নাই। অভাব অনটন নিত্য সঙ্গী। একদম নিয়ে একটি পরিবার। ছেলের মৃত্যুতে আরও বিপর্যন্ত তারা। ইমতিয়াজ অল্প কিছুদিন আগে বিবাহ করেন। নববধুর দু'চোখে ঘন আঁধার। এলাকাবাসীর অনুভূতি প্রতিবেশী মো: সোহেল বাপ্পি তার প্রতিক্রিয়ায় পেশ করেন। তিনি বলেন মো: ইমতিয়াজ হোসেন একজন সজ্জন মানুষ ছিলেন। সবার সাথে মিলে মিশে থাকতেন। কারও সাথে কটু কথা বলতেন না। তিনি অমায়িক ব্যবহার করতেন সবার সাথে। তার কন্ঠে কোন রূঢ় কথা বলতে শোনা যায়নি। এলাকার সবার প্রিয় ছিল ইমতিয়াজ। মাওঃ ওমর ফারুক বলেন, ইমতিয়াজ মানবিক লোক ছিলেন। আন্দোলনের প্রতি ছিলেন আন্তরিক। বড়দের সম্মান দিতেন তিনি। এলাকাবাসী তাকে ভালো মানুষ হিসেবেই জানত। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। নাম : মো: ইমতিয়াজ হোসেন পিতা : মো: হাবিবুর রহমান মাতা : মনোয়ারা বেগম জন্ম তারিখ :৪-০৪-২০০২ স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: গোবিন্দপুর, ইউনিয়ন: হাটপুকুরিয়া ঘটেলবাগ, থানা: চাটখিল জেলা: নোয়াখালী বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: ওয়ারী মিয়া ব্যাপারিবাড়ি ইউনিয়ন: গোবিন্দপুর, থানা: চাটখিল জেলা: নোয়াখালী শহীদ হওয়া সময়: ৫ আগস্ট ২০২৪ কবর : দশঘরিয়া কবরস্থান নিজ এলাকায় প্রস্তাবনা ১. তার পরিবারকে এককালীন অনুদান দেওয়া যেতে পারে মাসিক ভাতা যোগ করা যায় ২. তাদের একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া শহীদের পিতাকে কান ব্যবসা কিংবা ফসলি জমি কিনে দেওয়া ৩. তার ভাইদের চাকরি অথবা ব্যবসার পুঁজি দেওয়া নববধুকে এককালীন অনুদান দেওয়া।