জন্ম তারিখ: ২ জানুয়ারি, ২০০২
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: চট্টগ্রাম
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : ঢাকার উত্তরা
ওমর বিন নুরুল আবছার ২ জানুয়ারি ২০০২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নুরুল আবছার ও রুবী আকতারের বড় সন্তান। তার বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল, তাদের ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে এবং সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে তাকে গড়ে তোলা হয়েছিল। তিনি ছিলেন মেধাবী, দেশপ্রেমিক এবং চট্টগ্রামের সন্তান। পড়াশোনা করতে ঢাকায় থাকতেন। তার স্থায়ী ঠিকানা বোয়ালখালি থানার ৬ নং ইউনিয়নের পোপদিয়া গ্রামে, যা তার পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি জুলাই বিপ্লবের গর্বিত শহীদ হিসেবে চিহ্নিত হন, যা তার পরিবারের জন্য এক গর্ব ও শোকের সংমিশ্রণ। ওমরের জীবন দেশের প্রতি তার অবদানের মাধ্যমে চিরকাল মনে রাখার যোগ্য। শাহাদাত বরণ করেন যেভাবে ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু তার খুনি বাহিনী তখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত খুন করে নির্বিচারে। ঢাকার উত্তরা, সাভার, যাত্রাবাড়িতে অসংখ্য মানুষ খুন করে পতিত সরকারের খুনি বাহিনী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে গণ বিস্ফোরণের উপলক্ষ মাত্র। জনতা দীর্ঘ পনের ষোল বছরের দুঃশাসনে বিক্ষুব্ধ হয়েছিল। গুম, খুন, নির্যাতন করে স্তব্ধ করে রেখেছিল জনতার কণ্ঠ। বাধ্য করে রেখেছিল চুপ থাকতে। মামলা, হামলা, হয়রানি করে চেপে রেখেছিল দ্রোহের আগুন। তবু চাপা থাকেনি। পনের বছরই বিভিন্ন সময় আন্দোলনে ফুঁসে ওঠেছে সর্বসাধারণ। সরকার দমন করেছে রাজপথের অহিংস আন্দোলন পুলিশ আর দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা আন্দোলনের সফলতার আগেই আন্দোলনকারীরা বাধ্য হয়েছে ঘরে ফিরতে। ফিরেছে বটে থেমে যায়নি। জুলাই চব্বিশে হয়েছে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণের ফলেই রাস্তায় নেমেছে ছাত্র। তার সাথে তার অভিভাবক। হাতে হাত রেখে নেমেছে সকল পেশাজীবি। ছাত্রদের কোটা বিরোধী আন্দোলন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন থেকে হয়ে গেল সরকার পতন আন্দোলন। সরকার সহিংসতা চালায়। খালি হাতে আন্দোলনে সরব থাকেন আন্দোলনকারীরা। দেশে চলে কারফিউ। বন্ধ করে দেওয়া হয় সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী বেসরকারি সব অফিস,কলকারখানা। দেশে চলে জরুরি অবস্থা। ছাত্রদের ক্যাম্পাস বন্ধ। অনেকেই চলে যান নিজ নিজ বাসায়। ওমর বিন নুরুল আবছার পরিবারের আদেশ উপেক্ষা করে থেকে যান ঢাকায়। আন্দোলনে থাকেন সক্রিয়। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক, সচেতন নাগরিক। নিয়মিত আন্দোলনে অংশ নিতেন। আন্দেলনে তাদের জয় হয়। পরাজিত ফ্যাসিস্ট পালিয়ে যায়। দেশ ব্যাপী বয়ে যায় আনন্দের ঢেউ। আন্দোলনের মিছিল বিজয় মিছিলে রূপ নেয়। ঢাকায় যারা ছিল তার ঘেরাও করে পতিত সরকারের গণভবন। উল্লাস করে ঢাকাবাসী। ওমররাও উল্লসিত হয়। তারা বিজয় মিছিল করে। সহসা বিজয় মিছিলে নেমে আসে বিষাদ অন্ধকার। মিছিলে অতর্কিতে হামলা করে পতিত সরকারের খুনি পুলিশ। লাশ পড়তে থাকে নিরস্ত্র জনতার। তখন বিকাল প্রায় ৪:৩০ মিনিট। তখনও লাইভ করতে থাকেন ওমর। হঠাৎ পুলিশের একটি গুলিতে তিনি আক্রান্ত হন। মূহুর্তে তিনি লুটিয়ে পড়েন। সাথীরা তাকে উদ্ধার করতে মরিয়া। সেখানেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। ধারণা করা হয় সময় তখন বিকাল ৫ টা। বিজয়ের দিনে বিজয়ের মিছিলে শাহাদাত বরণ করেন ওমর বিন নুরুল আবছার। তাকে গ্রামের বাড়িতে নেওয়া হলে নিজ গ্রামেই চির শায়িত হন ওমর বিন নুরুল আবছার। পারিবারিক অবস্থা শহীদ ওমর বিন নুরুল আবছার তার বাবার বড় সন্তান। প্রতিবন্ধী এক ভাই সহ তার আরো এক বোন ও এক ভাই আছে। তার বাবা প্রবাসী। ওমর বিন নুরুল আবছারের পরিবার সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। পিতা প্রবাসে থাকেন। তাদের স্বপ্ন ছিল বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ার হবে কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ধূলায় মিশে গেছে। সচ্ছল হলেও বড় সন্তানকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে গড়ে তুলতে আয়ের বেশিরভাগ অংশই তার পিছনে ব্যায় করেন। বড় সন্তান নিহত হওয়ায় স্বপ্ন ভেঙে গেছে। পরিবারটিও বিধ্বস্ত। এলাকাবাসীর অনুভূতি শহীদ ওমর বিন নুরুল আবছার একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বাবা মার স্বপ্ন ছিল তাকে ইঞ্জিনায়ার বানাবেন। সে লক্ষে তাকে গড়ে তুলতে চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন তার পরিবার। এলাকাবাসীও স্বপ্ন দেখতেন তাকে নিয়ে। ভালো ছাত্র ও ভালো মানুষ হিসেবে সকলের প্রিয় ছিলেন। স্বৈরশাসকের হাতে নিহত হওয়ায় সে স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়। বাবা, মা ও এলাকাবাসী তার মৃত্যুতে শোকে কাতর। ওমর বিন নুরুল আবছার ছিলেন মেধাবী ও দেশপ্রেমিক তরুণ। সহজ সরল ছিল জীবনাচার। এলাকাবাসী তার হত্যাকারীদের বিচারের দাবী জানান। নাম : ওমর বিন নুরুল আবছার জন্ম তারিখ : ০২-০১-২০০২ পিতা : নুরুল আবছার মাতা : রুবী আকতার স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম : পোপাদিয়া ইউনিয়ন: ৬ নং থানা : বোয়ালখালী, জেলা চট্টগ্রাম বর্তমান ঠিকানা গ্রাম : পোপাদিয়া, ইউনিয়ন: ৬ নং থানা : বোয়ালখালী, জেলা চট্টগ্রাম পরিবারের সদস্য : ৭ জন পেশা : ছাত্র প্রস্তাবনা এককালীন বড় অনুদান দিয়ে পরিবারকে সহায়তা করা ২. ভাইবোনদের উচ্চশিক্ষার সমস্ত খরচ ফ্রি করে দেওয়াএক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলি