Image of আব্দুল্লাহ আল তাহির

নাম: আব্দুল্লাহ আল তাহির

জন্ম তারিখ: ১৭ এপ্রিল, ১৯৯৬

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : রংপুর

শহীদের জীবনী

তাহিরের শিক্ষা জীবনের হাতে খড়ি রংপুর শহরের আল হেরা স্কুলে। এর পাশাপাশি মায়ের হাত ধরে শিশু সংগঠন ফুলকুঁড়ি সহ প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন তাহির। আল হেরা স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর রংপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। মাধ্যমিকের পর রংপুর পলিটেকনিকে সিভিল বিষয়ে ১ বছর অধ্যয়ন করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার সিরামিকস ইনিস্টিটিউটে ( আর পি আই) সিভিল ডিপাটমেন্টে ভর্তি হন, উক্ত প্রতিষ্ঠানে শাহাদাতের পূর্ব পর্যন্ত ৮ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত ছিলেন। অনন্য তাহির: ধর্মভীরু আদর্শ পিতা-মাতা ছোটবেলা থেকেই তাহিরকে কোরআন হাদিসের আলোয় বড় করে তুলেছেন। তাহিরও ছিলেন পিতা-মাতার একান্ত বাধ্য সন্তান। পড়াশোনা ছাড়াও কো-কারিকুলারে ছিল তাহিরই সবার সেরা। ছোট থেকেই কবিতা রচনা, আবৃত্তি, গান চর্”া, বক্তব্যদানে পটু ছিলেন তাহির। যার ফলে যোগ্যতা দিয়ে ঢাকার নাম করা উচ্চারণ শিল্পীগোষ্ঠীর সহকারী পরিচালক হয়েছিলেন। রচনা করেছেন ছন্দের মাধুর্যে পরিপূর্ণ কবিতা, ছড়া ও গান। একাধারে তিনি ছিলেন কন্ঠ শিল্পী, আবৃত্তিকার এবং অভিনেতা। ইসলামের বাস্তব অনুসারী ছিলেন আব্দুল্লাহ আল তাহির। কর্মজীবন: তাহিরের বাবা স্ট্রোক করার পর থেকে পরিবারটি অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়ে যায়। কর্মক্ষম বাবা অসুস্থতার কারণে বেকার হয়ে পড়লে সংসারের হাল ধরেন তাহিরের মা। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ছেলে মেয়েদেরকে কোরআন শরীফ শিখিয়ে যা পেতেন তা দিয়েই সংসার চলতো। পরিবারের এমন দুরাবস্থায় তাহির সিদ্ধান্ত নেয় নিজের পড়াশোনার খরচটা নিজে জোগানোর। কখনও আতর বিক্রেতা হিসাবে আবার কখনো টুপি বা ইয়ার ফোন বিক্রি করে নিজের শিক্ষা জীবন চালাতে থাকে তাহির। কখনও কখনও নিজস্ব মেশিনে ক্রেষ্ট তৈরী করে তা বিক্রি করতেন। তবুও আত্নসম্মান নিয়ে বেড়ে ওঠা তাহির তার অভাব অনটনের কথা কাউকে বলতেন না। সংগ্রাম করেই অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন তিনি। আন্দোলনে তাহির: স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা অবৈধভাবে বার বার ক্ষমতায় থেকে দেশকে তলাবিহীন ঝুড়িতে রূপান্তরিত করেছিলেন। সাধারণ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যে, অন্যায়ের রিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই তাকে জেল জুলুম, হত্যা ও গুম করে ফেলতেন। দেশের শিক্ষাঙ্গনে মেধাবীরা বার বার বৈষম্যের শিকার হতো। কোটা প্রথার কারণে সাধারণ মেধাবী শিক্ষার্থীরা চাকরি থেকে হতো বঞ্চিত। এমতাবস্থায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে, উক্ত আন্দোলনে তাহির সক্রিয় ভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে সরকার বিরোধী মিছিলে অংশগ্রহণ করতেন। আন্দোলন যখন চরম আকার ধারণ করে, সরকার তখন দিশেহারা হয়ে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলন ঠেকাতে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে এবং সারাদেশে কারফিউ জারী করে। তাহির চলে যায় রংপুরে তার নিজ বাড়িতে। যে ছেলে বেড়ে ওঠেছে দ্বীনের আলোয়, ঈমানী চেতনা যার শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে সে কী আর বসে থাকতে পারে! রংপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচীতে নিজেকে যুক্ত রাখেন। শাহাদাত বরণ: ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ১৯ তারিখ শুক্রবার, আন্দোলনের অন্যান্য দিনের মতো তাহির নিজ বাসা থেকে সকাল ১১ টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে রংপুর সিটি কর্পোরেশন রাম মোহন রায় মার্কেটের সামনে যায়। সেখানে শিক্ষার্থীদের সাথে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে এবং মিছিলে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। জুমার নামাজ পড়ে বিকাল ৫ টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে বিক্ষোভে অংশ নেয়। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক এ আন্দোলনের অপরদিকে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসী নেতাকর্মীরা একত্রে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর বর্বরোচিত সশস্ত্র হামলা চালায়। পুলিশ নিরীহ সাধারণ নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের উপর টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও মুহুর্মুহু গুলি করতে থাকে। এরই মাঝে ঘাতক পুলিশের একটি বুলেট তাহিরের পেট দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বের হয়ে যায়। সাথে সাথে তাহির রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। সঙ্গে থাকা ২ জন সহযোগি তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। খবর পেয়ে তার মা হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে তাহিরের মতো আরো অনেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কাতরাতে থাকে। রংপুর মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে তখন স্বজনদেরে আহাজারি। প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাহির ৬-৭ ঘন্টার মতো সময় জীবিত থেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে। অবশেষে আনুমানিক রাত ১১ টার দিকে শাহাদাত বরণ করেন জাতির বীর সন্তান তাহির। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার শাহাদাতের মধ্যদিয়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দেশকে নতুন করে দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতার সোনালী সূর্য উপহার দিয়ে যান। তার মৃত্যুতে মুহুর্তেই নেমে আসে শোকের ছায়া। শহীদের পিতা-মাতার অনুভূতি: তাহিরের পিতা-মাতা দেশের জন্য, দেশের মানুষের মুক্তির জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রিয় সন্তান এর শাহাদাতে নিজেদেরকে গর্বিত পিতা-মাতা হিসেবে গৌরব বোধ করেছেন। শোকাহত পিতা তার কাঁধে একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানের কফিনটি বহন করেছেন। তাহিরের মা, শহীদ জননী বলেছেন, ঐ দিন তিনি নামাজের মধ্যে তার সন্তানের কফিন মাখা মুখ দেখতে পান। রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের প্রতি আহ্বান: নিরহংকারী বিনয়ী ও সৎ চরিত্রের আগামী দিনের উজ্জ্বল নক্ষত্র শহীদ আব্দুল্লাহ আল তাহিরকে নির্মমভাবে প্রকাশ্যে দিবালোকে আওয়ামী সন্ত্রাসী, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ আওয়ামী মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী গুলি করে হত্যা করে। এলাকাবাসী ও শহীদের পিতা মাতা এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেছেন। শহীদ তাহির আমাদেরকে করে গেছেন ঋণী। মহান আল্লাহ তার শাহাদাতকে কবুল করুন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য শহীদের পূর্ণ নাম : আব্দুল্লাহ আল তাহির জন্ম তারিখ : ১৭ এপ্রিল ১৯৯৬ পেশা : ছাত্র, ঢাকা সিরামিক ইন্সটিটিউট, ৮ম সেমিস্টার পিতা : ডাক্তার আব্দুর রহমান (৭১), হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার মাতা : মোসা: শিরিনা বেগম (৬০), গৃহিণী ভাই-বোনের সংখ্যা : ৪ জন, শহীদের অবস্থান ২য় সদস্যদের বিবরণ : ১. রেবেকা ইয়াসমিন (৩৬), গৃহিণী- সম্পর্কে বোন ২. আব্দুল্লাহ আল তায়্যিব (২৯), ছাত্র: সম্পর্কে ভাই ৩. আফসানা ফেরদৌসি আঁখি (২৪), গৃহিণী: সম্পর্কে বোন বর্তমান ঠিকানা : জুম্মাপাড়া, ২৩নং ওয়ার্ড, কতোয়ালী থানা, রংপুর স্থায়ী ঠিকানা : বকবান্ধা নামাপাড়া, যাদুরচর, রৌমারি, কুড়িগ্রাম

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of আব্দুল্লাহ আল তাহির
Image of আব্দুল্লাহ আল তাহির
Image of আব্দুল্লাহ আল তাহির
Image of আব্দুল্লাহ আল তাহির
Image of আব্দুল্লাহ আল তাহির

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: সুমন ইসলাম

মো: নুর আলম

মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

মো: ছমেছ উদ্দিন

মো: জাহিদুর রহমান

মো: রবিউল ইসলাম রাহুল

মো: সুজন হোসেন

মো: রুবেল ইসলাম

তাহির জামান প্রিয়

মো: শাহিনুর আলম

মো: আল মামুন

হাফেজ রিদওয়ান আলী

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo