জন্ম তারিখ: ২ নভেম্বর, ১৯৮৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান : রংপুর
শহীদ মেরাজুল ইসলাম জীবনযুদ্ধে হার না মানা এক সংগ্রামী নাম। তিনি ১৯৮৮ সালের ২ নভেম্বর রংপুর শহরের নিউ জুম্মাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলাতেই বাবার ইন্তেকালে পরিবারের হাল ধরতে হয় তাঁকে। বাবা ছিলেন একজন কলা ব্যবসায়ী। সে ব্যবসার হাল ধরেন মেরাজ। এই ব্যবসা দিয়ে তার মায়ের ঔষধ এর খরচ, ভাই বোনদের খরচ সব একাই চালাতেন। পাশের মহল্লার নাজনিন আক্তারকে বিয়ে করেন মেরাজ। শুরু হয় সুন্দর একটি সংসার। সংসার জীবনে ২ সন্তানের জনক মিরাজুল ইসলাম। ১ম সন্তানের বয়স ১৫ বছর আর ২য় সন্তানের বয়স ৩ বছর। পরিশ্রম আর ব্যবসায়িক দক্ষতায় অল্পদিনেই সবার আস্থা অর্জন করেন। তিনি ছিলেন একজন পরোপকারী মানুষ। যে ভাবে ঘটনা ঘটলো দিনটি ছিল শুক্রবার প্রতিদিনের ন্যায় মেরাজ কলার ব্যবসার জন্য জারজেজ মার্কেটে যান। বাসায় এসে জুমার নামাজ পড়ে আবারো ব্যবসায়িক কাজে মার্কেটের দিকে যান, যাবার সময় তার শিশু সন্তান বায়না ধরে, সে কেক খাবে, তাঁর স্ত্রী জানান আজ তাদের বিবাহ বার্ষিকী । রাতের খাবার অবশ্যই একসাতে খেতে হবে। মিরাজুল ১৯ জুলাই ২০২৪ রাস্তায় এসেই দেখতে পান পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ সমন্বয়ে, কোটা আন্দোলনকারী ছাত্র ও জনতার উপর একের পর এক গুলি ছুঁড়তে থাকে। সন্ত্রাসী ও পুলিশদের সাথে নিরীহ জনতার মারামারির এই দৃশ্য দূর থেকে দেখে খুবেই আফসোস করছিলেন। এক সময় দূর থেকে দেখেন ১ জন লোক পুলিশের গুলিতে মাটিতে ঢলে পড়ছে। তিনি গুলিতে আহত ব্যক্তিকে উদ্ধারের জন্য সব কিছু ফেলে ছুটে যান তার কাছে। কিন্তু সেখানে আবারো পুলিশ গুলি চালালে সন্ধা ৬ টার দিকে গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন একজন জীবন যোদ্ধা মেরাজুল ইসলাম। সেখান থেকে তাঁকে স্থানীয়দের সহায়তায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে তিনি শাহাদাত বরণ করেন। গুলি ৩টি এমন ভাবে ঢুকেছিল যে, এক পাশ দিয়ে ঢুকে শরীরের ভেতরের নাড়ি ভূড়ি অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। একজন অমায়িক চরিত্রের মানুষকে খুনি হাসিনার পেটুয়া বাহিনীরা পৃথিবী থেকে চিরবিদায় করে দিল। ২টি সন্তান এতিম হয়ে গেল। বিধবা স্ত্রী এতিম সন্তানের পড়াশোনা, খাবার খরচ ও মায়ের ঔষধ কিনে দেবার আর কেউ রইল না। ছোট্ট সন্তানকে তার বাবা সম্পর্কে বললে বলে, আমার বাবা ঢাকা গিয়েছে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। এতিম সন্তানের আহাজারী, বুকফাটা স্ত্রীর কান্না, মায়ের আর্তনাদের কে জবাব দেবে? কে দেবে তাদের সান্ত্বনা। শহীদ সম্পর্কে বক্তব্য/অনুভূতি শহীদ সম্পর্কে তাঁর স্ত্রী বলেন তিনি অত্যন্ত ভালো মনের মানুষ ছিলেন। এলাকার ছোটখাট সমস্যায় তিনি এগিয়ে যেতেন। তিনি ছিলেন নমনীয় প্রকৃতির । বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে তাঁর ছোট সন্তান কে বলেছিলেন তুমি কি খাবে? ছেলে বলেছিল কেক খাবে। তার ছোট ছেলের আবদার হয়তো আর কখনো পুরণ হবে না। ছেলে কে জিজ্ঞেস করলে বলে বাবা ঢাকা গিয়েছে চলে আসবে। জনাব মেরাজুলের স্ত্রী স্বামীর কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং বলেন, রাতের খাবার একসাথে খাবে এবং খুব ভালো রান্না করে রাখতে কারণ সেদিন ছিল তাদের বিবাহ বার্ষিকী। কিন্তু বুলেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল তাদের সাজানো সংসার। মা তার সন্তানকে কি বলে সান্ত্বনা দেবেন জানেন না। ছোট শিশুটিকে প্রতিদিন বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতো যে পিতা সে আজ কবরে শুয়ে আছে। পারিবারিক অবস্থা টিনের ঘেরা ৩ কক্ষ বিশিষ্ট বাড়িতে ৫ জন সদস্যের বসবাস। নিদারুন কষ্টের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তারা দিনাতিপাত করছেন। সঞ্চিত কোনো অর্থ নাই। আর্থিক সংকটের কারণে পরিবারের ব্যয়ভার বহন করা দূরহ হয়ে পড়ছে। সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা এতিম সন্তানদের পড়াশোনার খরচ, স্ত্রীর কর্মসংস্থান ও মায়ের চিকিৎসা খরচের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য শহীদের পূর্ণনাম : মো: মেরাজুল ইসলাম জন্ম : ২ নভেম্বর ১৯৮৮, রংপুর শহীদের পেশা : কলা ব্যবসায়ী পিতা : শামছুল হক (মৃত) মাতা : আম্বিয়া খাতুন (৭০), গৃহিণী স্ত্রী : নাজনীন আক্তার (৩২), গৃহিণী স্থায়ী ঠিকানা : নিউ জুম্মাপাড়া, রংপুর সিটি বর্তমান ঠিকানা : নিউ জুম্মাপাড়া, রংপুর সিটি সন্তানেরা : ৫ ভাই, ২ বোন বড় ছেলে মেহরাব হোসেন নাজিল (১৫), ছাত্র, ৯ম শ্রেণি সম্পর্ক ছেলে মো: হানিফা (৩), সম্পর্ক ছেলে শাহাদাত : ১৯ জুলাই ৫:৩০ টায় কলাপট্টি জরজেজ মার্কেটের সামনে পুলিশের গুলিবিদ্ধ হয়ে ৭.০০ টায় রমেক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন