Image of মোসলেম উদ্দিন মিলন

নাম: মোসলেম উদ্দিন মিলন

জন্ম তারিখ: ২৫ জানুয়ারি, ১৯৮৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: স্বর্ণকার , শাহাদাতের স্থান : মুড়িপট্টি, পৌর বাজারের সামনে

শহীদের জীবনী

মোসলেম উদ্দীন মিলন। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে এই নাম। শাহাদাতের মধ্য দিয়ে তিনি নিজকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছেন। আপামর জনতার ন্যায্য অধিকার আদায়ে নিজের জীবন দিয়ে তিনি এ অধিকার বাস্তবায়ন করে গিয়েছেন। যুগ যুগ ধরে তাঁকে মানুষ স্মরণ করবে একজন বীরশ্রেষ্ঠ হিসেবে। ১৯৮৭ সালের ২৫ জানুয়ারি রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানাধীন ১/৫ পূর্ব গনেশপুর গ্রামে এই তেজস্বি বীর জন্মগ্রহন করেন। ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ৬ষ্ঠ, মধ্যবিত্ত পরিবারে তাঁর বেড়ে উঠা। পরিবারের সহায়তায় তিনি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার সুযোগ পান। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন কঠোর পরিশ্রমী। অল্প বয়সে তিনি বাবার মতো স্বর্ণকারের পেশায় নিজেকে যুক্ত করেন। সেই সাথে তিনি পরিবারের হালও ধরেন। তিনি নগরীর দেওয়ানবাড়ী সড়কের একটি জুয়েলার্সে কর্মরত ছিলেন। বিবাহিত জীবনে তিনি ২ সন্তানের জনক। বড় ছেলে বায়েজিদ ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং ছোট ছেলে তামজিদ হিফজ খানায় পড়াশোনা করে। ১৯ জুলাই ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মিছিলে স্বৈরাচারী খুনি হাসিনার ঘাতক পুলিশের গুলিতে শাহাদাত বরণ করেন মোসলেম উদ্দিন মিলন। যেভাবে তিনি রবের ডাকে সাড়া দেন ছাত্রসমাজ কর্তৃক সরকারি চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথার সংস্কারের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকে শুরু থেকেই সমর্থন করতেন মোসলেম উদ্দিন। আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করার পেছনে তার আবেগী মন সব সময় কাজ করতো। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ তার নিজ জেলা রংপুরের ছেলে নিরস্ত্র আবু সাঈদকে গণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত অবস্থায় পুলিশ গুলি করে হত্যা করে। যা তিনি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি। বাসায় বার বার তার সেই ভিডিও দেখতেন আর বলতেন 'কি অপরাধ ছিল ছেলেটির। আমাদের উচিৎ এর প্রতিবাদ করা'। এরপর তিনি ভেবেছিলেন এতগুলো তাজা প্রাণের ঝড়ে যাওয়া দেখে সরকারের বোধোদয় হবে, তারা ছাত্রদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে কোটাপ্রথার সংস্কার করবে। কিন্তু সরকার ছাত্রদের দাবি মেনে নিয়ে আদালতের রায় পরিবর্তনের কথা মুখে বললেও সরকারি পুলিশ বাহিনী একদিনের জন্য গুলি করা থামায়নি। ফলে শহীদের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। ১৬,১৭ ও ১৮ জুলাই এই তিনদিনে শহীদের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় শতকের ঘর। তাই সেদিন আর তিনি নিজেকে ঘরে বেঁধে রাখতে পারেননি। দিনটি ছিল ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই শুক্রবার। সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। জুমার নামাজের পর সারা দেশের ছাত্র-জনতা নেমে আসে রাজপথে। রংপুরও এর ব্যতিক্রম ছিল না। শহীদ মোসলেম উদ্দীন মিলন এ দিন জুমার নামাজ আদায় করে দুপুরের খাবার শেষে বেরিয়ে পড়েন। তখন সময় আনুমানিক বিকাল ৪ টা। তিনি সাধারণ জনতার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেন। মিছিল এগিয়ে গেলে একপর্যায়ে পুলিশ ও সাধারণ জনতার মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। পুলিশ অন্যায়ভাবে সাধারণ জনতার উপর টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। নিরস্ত্র জনতা দি¦গিবদিক ছুটতে থাকে। আকস্মিক ঘাতক পুলিশের একটি বুলেট সরাসরি মোসলেম উদ্দিন মিলনের বুকে বিদ্ধ হয়। সে সময় তিনি মুড়ি পট্টি, পৌরবাজারের সামনের রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে তিনি সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। পরবর্তীতে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল থেকে আনুমানিক রাত ৮ টায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। পরদিন শনিবার বিকাল ৩ টায় মুন্সিপাড়া কবরস্থানে নামাজে জানাজা শেষে দাফন করা হয়। পরবর্তীতে মৃত্যুর ৫৮ দিন পর ১৫ সেপ্টেম্বর রোববার রংপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার(ভূমি) আহমেদ সাদাত, তদন্ত কর্মকর্তাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও নিহতের পরিবারের উপস্থিতিতে কবর থেকে তার লাশ উত্তোলন করা হয়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহমেদ সাদাত বলেন, আদালতের নির্দেশে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে নিহত মোসলেম উদ্দিন মিলনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গত ২৭ আগস্ট নিহতের সহধর্মিণী দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে রংপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য/অনুভূতি ১. শহীদ মোসলেম উদ্দিন মিলনের প্রতিবেশী রুবায়েত আল খায়ের এর ভাষ্য মতে, তিনি খুব সাধারণ জীবন যাপন করতেন। স্থানীয় কারো সাথে শত্রুতা, ঝগড়া বিবাদ ছিলনা। তিনি ছিলেন বন্ধুত্ব পরায়ণ মানুষ, ছোট বাচ্চাদের সাথে গভীর সখ্যতা ছিল, তিনি দায়িত্ব পালনে ছিলেন বিনয়ী। ২. শহীদের চাচা বাদল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি ছোটদের প্রতি অনেক স্নেহপরায়ণ ছিলেন। কিছুদিন পর পর ছোট ভাই ভাতিজা, সন্তানদের নিয়ে চড়ুইভাতির আয়োজন করতেন। এসব কিছু আজ শুধুই স্মৃতি। তিনি তো আর কখনো ফিরে আসবেন না আমাদের মাঝে। তারা বলেন, আমরা এই হত্যার বিচার চাই। আল্লাহর কাছে একটাই প্রার্থনা- মহান আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করে জান্নাতুল ফিরদৌস নসিব করুন। আর এই শহীদ পরিবারের প্রতি সবাই এগিয়ে আসুন। এই পরিবারে ২ জন এতিম সন্তান রয়েছে। আপনারা দয়া করে তাদের ভবিষ্যৎ এর দিকে তাকাবেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ মোসলেম উদ্দীন মিলনের ৪ সদস্যের পরিবার। ২ ছেলেকে নিয়ে খুব সুন্দর ভাবেই দিনাতিপাত করছিলেন। তার একমাত্র আয়ের উৎস ছিল স্বর্ণের দোকানের ম্যানেজার। সেখান থেকে তিনি পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহ করতেন। বড় ছেলে ৭ম শ্রেণির ছাত্র আর ছোট ছেলে হিফজ মাদ্রাসায় পড়ে। বর্তমানে ছেলের লেখাপড়ার খরচ ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করা দূরহ হয়ে পড়েছে। মোসলেম উদ্দিন তার নিজের বসত ভিটায় একটি পাকা ঘর নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেছিলেন। এজন্য কিছু ঋণও করেছেন। ঘরটি সম্পূর্ণ করা হয়নি। কাজ চলমান রেখেই তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। শহীদ মোসলেম উদ্দীন মিলন শহীদ হওয়ায় তার পরিবারের ভরণপোষণ পরিচালনা করা পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। পরিবারের একমাত্র আয়ের মানুষটি শহীদ হওয়ায় গোটা পরিবারটি অন্ধকারের মধ্যে পড়ে যায়। এতিম দুই সন্তানের ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১: বাসস্থান প্রয়োজন। তার অসমাপ্ত ঘরটি সম্পূর্ণ করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা দরকার। প্রস্তাবনা-২: মাসিক ভাতা চালু করা। প্রস্তাবনা-৩ : ইয়াতিম ছেলেদের পড়াশোনা ও যাবতীয় খরচ বহন করলে ভালো হয়। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: মোসলেম উদ্দিন মিলন জন্ম তারিখ : ২৫-০১-১৯৮৭ পিতা : মরহুম মোকলেছার রহমান মাতা : মোসা: মর্জিনা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ১/৫ পূর্ব গনেশপুর, ইউনিয়ন: রংপুর সিটি কর্পোরেশন, থানা: কোতোয়ালি, জেলা: রংপুর পেশা : স্বর্ণকার, বৈরানী জুয়েলার্স এতিম সন্তান : ২ জন ১. বায়েজিদ বোস্তামী (১৩ বছর), ৭ম শ্রেণি ২. তামজিদ (১০ বছর), হিফযখানা ঘটনার স্থান : মুড়িপট্টি, পৌর বাজারের সামনে আহত হওয়ার সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৪:৩০ শাহাদাতের সময়কাল : ১৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৪:৩০। মুড়িপট্টি, পৌর বাজারের সামনে আঘাতের ধরন : বুকে বুলেট বিদ্ধ হয়ে আক্রমণকারী : পুলিশ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : মুন্সিপাড়া কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মোসলেম উদ্দিন মিলন
Image of মোসলেম উদ্দিন মিলন
Image of মোসলেম উদ্দিন মিলন
Image of মোসলেম উদ্দিন মিলন

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: গোলাম রব্বানী

হাফেজ রিদওয়ান আলী

মো: শাহিনুর আলম

মো: মিরাজুল ইসলাম

মো: আসাদুল হক বাবু

আবু সাঈদ

রুদ্র সেন

লাবলু মিয়া

মো: আজিজুল ইসলাম

মো: নুরুজ্জামান

মো: সোহাগ

মো: আবু ছায়েদ

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo