জন্ম তারিখ: ৩ নভেম্বর, ১৯৮১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা : পাম্প মিস্ত্রী, শাহাদাতের স্থান : বছিলা, মোহাম্মদপুর
সামাজিক অসঙ্গতি আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে সদা প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর ছিলেন শহীদ মো: মনসুর মিয়া। কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক না হয়েও ন্যায় ও সত্যের পক্ষে সামাজিক ও রাজনৈতিক সক্রিয়তা শহীদ মনসুর চরিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক। ১৯৮১ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন মনসুর মিয়া। তার পিতার নাম একলাল মিয়া এবং মাতার নাম খায়রুন নেসা। স্ত্রী ও একমাত্র পুত্র সন্তান মামুন ইমাম রিমন (১০) কে নিয়ে মনসুর মিয়ার সুখের সংসার। শিশু রিমন মাদ্রাসায় আমপারা বিভাগের ছাত্র। পেশাগত জীবনে তিনি একটি পাম্পে চাকরি করতেন। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ মনসুর ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ২৩/০২ বছিলা, মোহাম্মদপুরে পৈতৃক জমিতে একটি ঘর থাকা সত্ত্বেও তিনি পরিবার নিয়ে আলাদা বসবাস করতেন। শাহাদাতের পূর্বে পাম্পের মিস্ত্রি হিসেবে চাকরি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির তিরোধানে উপার্জনের বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের সামনে ঝুলে আছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শংকা। শাহাদাতের ঘটনার সামগ্রিক বিবরণ ২০২৪ এর জুলাইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন ক্রমে জোরদার হতে থাকে। ধীরেধীরে ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, হকার, ব্যবসায়ীসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। পাশাপাশি বাড়তে থাকে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ সরকারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী নেতাকর্মীদের হামলা ও আক্রমণ। ছাত্রজনতা সকল খুন-গুমের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকে। এমতাবস্থায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার 'কমপ্লিট শাটডাউন' ঘোষণা করেন। ১৯ জুলাই ২০২৪, শুক্রবার, সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটের দিকে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলা ব্রীজের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। র্যাব সদস্যদের সাথে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে নিরস্ত্র প্রতিবাদী ছাত্রজনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। শহীদ মনসুর মিয়া সেখানেই গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাস্থলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীদের মধ্যে র্যাব এর পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সদস্যরা জড়িত ছিলো। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ঘটনার অব্যবহিত পরে আহত মনসুর মিয়াকে তার ভাই ও চাচাতো ভাইয়েরা দ্রুত উদ্ধার করে রাত ৮টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর শারিরীক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করেন। পরের দিন অর্থাৎ ২০ জুলাই শনিবার দুপুর ৩ টার দিকে মনসুর মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাতবরণ করেন। আনুমানিক রাত ৮ টায় বছিলা গার্ডেন রোজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশ নেয় তার অসংখ্য গুণগ্রাহী ও শুভানুধ্যায়ী মানুষ। এলাকাবাসী ও সহকর্মীরা তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত দোষীদের বিচারের দাবী জানান। জানাজা শেষে রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শহীদ মনসুর মিয়াকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য/অনুভূতি শহীদ মো: মনসুর মিয়া পূর্বে তার পৈতৃক সম্পত্তির উপর নির্মিত একটি ঘরে বসবাস করতেন। একাধিক সূত্রে জানা যায়, সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক বিবাদ চলছিল। শহীদের সামাজিক অবস্থান: শহীদ মনসুর মিয়া সামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন। যদিও তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না, তথাপি সামাজিক বৈষম্য নিরসন এবং ন্যায়বিচারের দাবীতে তিনি বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। তার এই রাজনৈতিক সক্রিয়তা এবং সামাজিক কার্যক্রম তাকে স্থানীয়ভাবে বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছিল। তার জানাজায় অসংখ্য শোকসন্তপ্ত মানুষ অংশ নেয়। শহীদের ব্যক্তিগত প্রোফাইল পূর্ণ নাম : শহীদ মো: মনসুর মিয়া জন্ম তারিখ : ০৩/১১/১৯৮১ জন্মস্থান : বছিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা পিতার নাম : মো: একলাল মিয়া মাতার নাম : খায়রুন নেসা (মৃত) পেশা : পাম্প মিস্ত্রী মাসিক আয় : টাকা ২০,০০০/- (প্রায়) পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ০৩ (তিন) জন শহীদের সন্তানের বিবরণ নাম : মামুম ইমাম (রিমন), বয়স: ১০ বছর, শিক্ষা: আমপারা (মাদ্রাসা) আক্রমণকারী : র্যাব ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ ঘটনার স্থান : বছিলা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ২০২৪, রাত ৮ টা মৃত্যুর তারিখ : ২০ জুলাই ২০২৪, দুপুর ৩ টা মৃত্যুর স্থান : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কবরস্থান : রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী কবরস্থান সহযোগিতার জন্য প্রস্তাবনা ১.বসবাসের আবাসন প্রয়োজন ২. সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যোগানে সহযোগিতা প্রয়োজন