Image of মো: সোহাগ

নাম: মো: সোহাগ

জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ২০০৭

শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : উত্তর বাড্ডা

শহীদের জীবনী

প্রত্যেক আত্মাকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। পৃথিবীর জীবন ক্ষণস্থায়ী আর মৃত্যু এক অনিবার্য বাস্তবতা। মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থা নিয়ে মতভেদ আছে, কিন্তু একদিন সবাইকে মরতে হবে-সে বিষয়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোন মতপার্থক্য নেই। ‘মৃত্যু’ পৃথিবীর মায়ামোহ ধন-দৌলত থেকে সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে। ভাই-বোন, পিতা-মাতা কিংবা বন্ধু-বান্ধব আর আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কের মাঝে ফারাক তৈরি করে। প্রেম-ভালোবাসার বন্ধনকে ছিন্ন করে। এমনকি এক পর্যায়ে মৃত ব্যক্তিকে তাদের স্বজন কিংবা পরিচিত জনের হৃদয় থেকে ভুলিয়ে দেয়। কিন্তু মৃতকে বাঁচিয়ে রাখে একটি মৃত্যু। সেই মৃত্যু সৌভাগ্যের, সেই মৃত্যু শাহাদাতের। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে মৃত বলো না। এসব লোক প্রকৃতপক্ষে জীবিত, কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।’ সত্য মুক্ত স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের/খোদার রাহে প্রাণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের। কি অপরাধ ছিল শহীদ মো: সোহাগের? কেন সন্তানের কফিন পিতার কাঁধে বহন করতে হলো? কেন মা আর ভাইয়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হল? কেন স্বজন আর প্রতিবেশীদের বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে হল? অপরাধ একটাই! আর তা হল অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। স্বৈরাচার খুনি শেখ হাসিনার বৈষম্যপূর্ণ আচরণের বিরোধিতা করা। এছাড়া তো আর কোন অন্যায় সে করেনি। এর জন্যই বুঝি শেখ হাসিনার পোষা পুলিশ লীগ সোহাগকে গুলি করে হত্যা করল। শহীদ মো: সোহাগের সংক্ষিপ্ত জীবনী বাংলাদেশে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জোট সরকার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করল। ঐ দিনই সন্ত্রাসী আওয়ামীলীগ জামায়াতে ইসলামীর অনেক নেতা কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এরপর পরপরই তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে দেশ পরিচালনা করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শুরুর দিকেই ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারিতে রেজাউল করিম ও সালমা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। ‘২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আলোকিত শহীদ মো: সোহাগ হোসেন। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানার বড় পাহাড়পুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারের সন্তান মো: সোহেল। অর্থের অভাবে খুব বেশি লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি তার। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়েই লেখাপড়ার ইতি টানেন। অবশেষে পরিবারসহ ঢাকায় বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। পিতা অনেক কষ্টে রিকশা চালান। পিতার কষ্টকে কিছুটা লাঘব করার জন্য সে মাত্র ৭৫০০ টাকা বেতনের ঢাকার এম জেড কোম্পানি নামে এক গার্মেন্টসে চাকরি নেন। গার্মেন্টস এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অত্যাচার তাকে নিয়মিত সহ্য করতে হতো। সে মনে মনে জীবনে বড় হয়ে বড় একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিক হবে এ ধরনের স্বপ্ন এঁকেছিল। কিন্তু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী সংগঠন ও তাদের কোটায় চাকরি পাওয়া পুলিশ তার স্বপ্নকে চিরতরে শেষ করে দিল। ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার কারণে ঘাতক পুলিশের গুলিতে তাকে চির বিদায় নিতে হলো। শাহাদাতের ঘটনা শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলেন, সেই পর্যায়ে ১৪ জুলাই ২০২৪ শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল । আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সে ‘রাজাকার শব্দও ব্যবহার করেছিল। এতে তার একগুঁয়েমি ও অহংকারের বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছিল। এরপর শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন, আন্দোলন আরও জোড়ালো হয়। সেই আন্দোলন দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করায় গত ১৭ জুলাই থেকে কয়েক দিনে সারা দেশে দুই শত এর বেশি প্রাণহানি ঘটে। এরপর সেনাবাহিনী নামিয়ে কারফিউ দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তবে শিক্ষার্থীরা সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে নামেন। বিপুলসংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় শেষ পর্যন্ত কোনো কিছুতেই রক্ষা হলো না। ১৯ জুলাই, শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় পরিস্থিতি থমথমে। মেট্রোরেল স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করা হয়।পরে জানা যায় আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনার পরামর্শে ও পরিকল্পনায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সাধারণ ছাত্রদের দোষারোপ করা হয় । এতে সারা দেশে সংঘর্ষে অন্তত ৫৬ জন নিহত। এদিন জুম্মার পর দুপুর ৩ টায় উত্তর বাড্ডায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে তার ময়মনসিংহের এক বন্ধুর সাথে অংশগ্রহণ করেন সোহাগ। আন্দোলনের কর্মসূচির এক পর্যায়ে সোহাগ সামনের সারিতে চলে যায়। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে। রাস্তায় কয়েক জন ছাত্র আহত হয়ে পড়ে থাকে। আহতদের সহযোগিতা করার জন্য কারো এগিয়ে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। সোহাগ এবং আরো কয়েকজন আন্দোলনকারী আহতদের সহযোগিতায় এগিয়ে গেল। সকল ভয়ভীতি দূর করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে সকলেই। আন্দোলনের কর্মসূচির একপর্যায়ে বিবেকহীন পশু সমতুল্য পুলিশ অতর্কিত গুলি চালায় নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের উপর। সোহাগ আন্দোলনরত অবস্থায় বুকের বাম পাশে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে মাটিতে লুকিয়ে পড়েন। তৎক্ষণাৎ তাকে পার্শ্ববর্তী এ এম জেড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্মরত ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেলে তিনি ইন্তেকাল করেন। নিকটস্থ কেউ না থাকায় অনেক লাশের ভিতর সে হারিয়ে যায়। অবশেষে লাশের স্তুপ এর মধ্য থেকে তার পিতা পাঞ্জাবি দেখে তাকে শনাক্ত করতে পারেন। ২০০৮ সাল থেকে টানা ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থেকে হত্যা, নৈরাজ্য ও লুটপাট করে মানুষের আস্থা হারায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার। কোটা সংস্কার নিয়ে চলা দীর্ঘ আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে এবং শহীদ সোহাগের মতো সত্য ন্যায়ের পথে চলা সন্তানদের জীবনের বিনিময়ে অবশেষে দেশত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় নরখাদক, ক্ষমতা লোভী শেখ হাসিনা শহীদের বড় ভাইয়ের অনুভূতি মৃত্যু সকলের জন্য অবধারিত কেউ স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করে আবার কেউ অস্বাভাকি মৃত্যুবরণ করে। আর কিছু মৃত্যু হয় স্মরণীয় মৃত্যু। আর সোহাগ সবসময় সে স্মরণীয় মৃত্যুই কামনা করত। তার মৃত্যুতে আমি মোটেও দুঃখিত না বরং শহীদের ভাই হতে পেরে আমি গর্বিত। শহীদ সোহাগের শখ কবুতর পোষা খুব ভালো লাগতো। অল্প অল্প করে টাকা গুছিয়ে ঢাকাতে বড় একজন ব্যবসায়িক হওয়া স্বপ্ন ছিল সোহাগের। গার্মেন্টসে চাকরি করতে যেয়ে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন তাকে সহ্য করতে হতো। এ কারণে সে মনে মনে কল্পনা করে আমিও একদিন এ ধরনের গার্মেন্টসের মালিক হবো। একনজরে শহীদ মো: সোহাগ পূর্ণ নাম : মো: সোহাগ জন্ম তারিখ : ০১.০১.২০০৭ পেশা : গার্মেন্টস কর্মী, এম জেড কোম্পানী ঢাকা জন্মস্থান : বড় পাহাড়পুর, পীরগঞ্জ, রংপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: রড, পাহাড়পুর, ইউনিয়ন: ১০ নং শানের হাট , থানা: পীরগঞ্জ, জেলা: রংপুর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: রড, পাহাড়পুর, ইউনিয়ন: ১০ নং শানের হাট, থানা: পীরগঞ্জ, জেলা: রংপুর পিতার নাম : মো: রেজাউল (৫২), রিকশা চালক মাতার নাম : মোসা: সালসা বেগম (৪৫) গৃহিণী বড় ভাই : মো: সোহেল (২৬) গার্মেন্টস কর্মী বৈবাহিক অবস্থা : অবিবাহিত আহত হওয়ার সময় ওস্থান : ১৯-০৭.২০২৪, বিকাল ৪ টা উত্তর বাড্ডা, ঢাকা শাহাদাতের সময় : ১৯-০৭-২০২৪ বিকাল ৪:৩০ উত্তর বাড্ডা আক্রমনকারী : পুলিশ দাফন : ২০-০৮-২০২৪ সকাল ১০ টায় পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ
Image of মো: সোহাগ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

হাফেজ রিদওয়ান আলী

মো: শাহাবুল ইসলাম ( শাওন )

মো: রায়হানুল ইসলাম

মো: রাকিবুল হাসান রকি

মো: ছমেছ উদ্দিন

মো: মামুন

মো: সাহান পারভেজ

লাবলু মিয়া

মো: নুর আলম

মোসলেম উদ্দিন মিলন

মো: আশরাফুল ইসলাম অন্তর

মো: মোহতাসিম হাসান ফাহিম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo