জন্ম তারিখ: ৩ মার্চ, ১৯৮১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: দিন মজুর, শাহাদাতের স্থান : গাজীপুর বড়বাড়ি, জয়বাংলা রোড
১৯৮১ সালের ৩ মার্চ রংপুরের পীরগাছা উপজেলার জোয়ান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ মঞ্জু মিয়া। তার পিতার নাম এনছান আলী এবং মাতার নাম সহিতন খাতুন। বর্তমানে মাতা পিতা দুইজনই বয়সে বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছেন । মঞ্জু মিয়া অনেক আশা নিয়ে ঢাকাতে এসেছিলেন যেন ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ ভালো হয়। চার সন্তানের জনক মঞ্জু ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ আল্লাহর কাছে ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন। ইসরাইল যেমন অন্যায়ভাবে ফিলিস্তিনের মানুষদের ওপর বিমান হামলা করছে, হেলিকপ্টার দিয়ে গুলিবর্ষণ করছে ঠিক তেমনি বাংলাদেশে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টার দিয়ে গুলিবর্ষণ করে তার অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। মঞ্জু মিয়ার মত কয়েকশো মানুষ সে শহীদ করেছে ঠিকই কিন্ত সে তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারল না। পাপ করলে পাপের শাস্তি পেতেই হয়। শহীদ মঞ্জ মিয়া ছোটকাল থেকেই কখনো অন্যায়ের সাথে আপোষ করেননি। সত্য প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সকল সময় ছিলেন সোচ্চার। তাইতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্ত্রী সন্তানের মায়া মহব্বত তাকে ঘরে থাকতে দেয়নি। শহীদ মো: মঞ্জু মিয়া সংক্রান্ত সামগ্রিক বর্ণনা পৃথিবী মাঝে মাঝে যেমন অনেক সুন্দর লাগে তেমনি অনেক খারাপও লাগে। এক এক সময় মনে হয় এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাই। যেখানে কোনো হিংসা কোনো ঝগড়া কোনো কলহ থাকবে না। থাকবে শুধু ভালবাসা, প্রেম, নিরিবিলি পরিবেশ। যেখানে বসে একা একা অনেকক্ষণ চিন্তা করতে পারব। কবিতা লিখতে পারব সেই সুন্দর স্থানে চলে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এই সুন্দর স্থানটি এই পৃথিবীতে মিলবে? পৃথিবীটা আসলে অনেক সুন্দর। কিন্তু এখানকার মানুষগুলি অনেক খারাপ। আর এদের কারণেই এই সুন্দর পৃথিবী আজ এক করুণ রূপ ধারণ করেছে। মৃত্যু এক অনিবার্য মহাসত্য। মৃত্যুর হাত থেকে কেউই মুক্তি পায়নি। মানুষের কীর্তিই মানুষকে চিরভাস্বর করে রাখে। মৃত্যুর পরেও হয়ে থাকে অমর। পৃথিবীর বুকে তাকে রাখে চিরস্মরণীয় বরণীয়। তেমনি কীর্তিগাঁথা আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গকারী এক শহীদ মো: মঞ্জু মিয়া। দীর্ঘ শাসনে সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন শেখ হাসিনা। তার সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। আর রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকার বিরোধী অবস্থানে চলে যায়। এর ফলে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক দিক থেকেও একা হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৭ জুলাই ২০২৪ রোজ শনিবার, জয় বাংলা রোড, বড়বাড়িতে নিজের ভাড়া বাসা থেকে মো: মঞ্জু মিয়া হেলিকপ্টারের শব্দ শুনে ঘর থেকে শহীদ হবার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেরিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে যোগ দেন। আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা এবং পুলিশের মাঝে অনেক দূরত্ব ছিল। দূরত্ব বজায় রেখেই শান্তিপূর্ণভাবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু কে জানে ফ্যাসিবাদী সরকার জনগণের ঘাম ঝরানো টাকায় কেনা হেলিকপ্টার উড়িয়ে এই জনগণকেই হত্যা করবে? বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম ঘটনা কোনদিন ঘটেনি যে ঘটনার ইতিহাস স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকার করে গেল। পৃথিবীর ইতিহাসেও খুব কমই দেখা মেলে এ ধরনের ন্যাক্কারজনক হত্যাকাণ্ড। বাসা থেকে ৫ মিনিটের দূরুত্বে প্রধান সড়কে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার উপর পুলিশ নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। হেলিকপ্টার থেকে পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই শরীরের পেটের বামপাশে গুলিবিদ্ধ হন দিনমজুর মঞ্জু। উনার স্ত্রীর কাছে ফোনযোগে খবর এলে ছুটে যান, সেখানে চিকিৎসা না পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে উত্তরায় এক ক্লিনিকে চিকিৎসক শরীরের ভিতর থেকে গুলি বের করা যায় কিনা। পরক্ষণেই রাস্তায় এম্বুলেন্সেই শাহাদাত বরণ করেন। শহীদ মো: মঞ্জু মিয়া সকল সময় শহীদ হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা লালন করতেন। বাংলাদেশের ২য় মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শহীদ রংপুরের মো: মঞ্জু মিয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে নিজেকে যুক্ত করে নিয়েছিলেন। স্ত্রীকে শহীদ হওয়ার আগে বলেছিলেন যে, আমি যদি আন্দোলনে গিয়ে মারা যাই সে মৃত্যু আমার শহীদি মৃত্যু হবে, তুমি চিন্তা করবে না আর আমাদের বাচ্চাদের দেখে রাখবে। বাস্তব জীবনে ইসলাম চর্চার খুবই চেষ্টা করতেন। শহীদ মঞ্জু মিয়ার সাথে আন্দোলনকারী এক ব্যক্তির অভিমত মঞ্জু মিয়া আন্দোলনরত জনতা কে বারবার বলতেছিল আমাদের বিজয় হবেই হবে। কারণ আমরা সত্যের পথে আছি। আর সত্যের পথে অবশ্যই আল্লাহ আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। এটা তার শেখ হাসিনার অবশ্যই একদিন পতন হবে। আমাদের জীবন থাকতে আমরা সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগের অন্যায় কখনো মেনে নেব না। এদেশ থেকে বৈষম্য দূর করেই ছাড়বো। ইনশাল্লাহ। শহীদ মঞ্জু মিয়ার স্ত্রীর কান্না বিজড়িত কথা আমি এখন কি করে বাঁচবো আমার সন্তানদের নিয়ে? আমার স্বামী তো কোন অন্যায় করেনি সে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিন্তু তাকে কেন হত্যা করা হলো। দেশের বৈষম্য দূর হোক এটা চাওয়া কি অন্যায়? কোমলমতি ছাত্রদের যারা হত্যা করছে তার বিরুদ্ধে কথা বলা কি অন্যায়? আমার স্বামী তো সেই সব ছাত্রদের পক্ষে কথা বলেছে, তাদের আন্দোলনের সাড়া দিয়েছে যারা মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরি হোক এটা চেয়েছিল। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই। যারা আমার স্বামীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছে এবং যারা হেলিকপ্টার থেকে আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের বিচার চাই। পারিবারিক অবস্থা তিনি বাস্তব জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। দিনমজুরের কাজ করে পরিবার চালাতেন মঞ্জু মিয়া ।তার স্ত্রী একজন গার্মেন্টস কর্মী ছিলেন। বর্তমানে কোনো আয়ের উৎস নেই। টিনের ঘরে ৪ সন্তান নিয়ে শহীদের স্ত্রী বসবাস করছেন। বৃদ্ধ পিতা-মাতাও অসহায় অবস্থায় গ্রামে দিন যাপন করছেন। এক নজরে শহীদ মো: মঞ্জু মিয়া নাম : শহীদ মো: মঞ্জু মিয়া জন্ম তারিখ : ০৩.০৩.১৯৮১ পেশা : দিন মজুরের কাজ জন্মস্থান : জুয়ান, পীরগাছা, রংপুর স্থায়ী ঠিকানা গ্রাম : জুয়ান, ইউনিয়ন: ৫ নং ছাওলা থানা : পীরগাছা, জেলা: রংপুর বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: জুয়ান, ইউনিয়ন: ৫ নং ছাওলা, থানা: পীরগাছা, জেলা: রংপুর পিতার নাম : মো: এনছার আলী (৭৭) কৃষিকাজ মাতার নাম : মোসা: সহিতন (৬৫) গৃহিণী স্ত্রী : গৃহিণী সন্তান : ১. মো: আলম (১৫) আক্কেলপুর সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ৯ম শ্রেণি ২. মো: রাসেল (১১) বিয়ারপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪র্থ শ্রেণি ৩. মোহনা মরিয়ম (৪) ৪. আবু বকর সিদ্দিক আহত হওয়ার সময় ও স্থান : ২০/৭/২০২৪ তারিখ, দুপুর ১২টা, গাজীপুর বড়বাড়ি, জয়বাংলা রোড শাহাদাতের সময় : ২০/০৭/২০২৪ বিকাল ৪ ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পথে, উত্তরার পথে আক্রমনকারী : পুলিশ (হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণ) দাফন : ২১/০৮/২০২৪ সকাল ১০ টায়, নিজ এলাকায় পারিবারিক কবরস্থান