Image of বদিউজ্জামান

নাম: বদিউজ্জামান

জন্ম তারিখ: ১৯ আগস্ট, ১৯৮৮

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: গার্মেন্টস কর্মী, শাহাদাতের স্থান : চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ

শহীদের জীবনী

১৯ আগস্ট ১৯৮৮ সালের পড়ন্ত বিকেলে জন্মগ্রহণ করেন বদিউজ্জামান। রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার ভূত ছাড়া গ্রামে দম্পতি আব্দুল কাইয়ুম ও বশিরুন নেছার ঘর পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত আলোকিত করেন বদিউজ্জামান। পিতা মাতার প্রথম সন্তান ছেলে হওয়ায় অনেক খুশি হন তার পরিবার। আব্দুল কাইয়ুমের জীবনের বড় একটি চাওয়া পাওয়া ছিল সুন্দর একটি ছেলে হবে তার প্রথম সন্তান। সেই চাওয়া পাওয়া পূরণ করল বদিউজ্জামান জন্ম নিয়ে। কিন্তু পিতা মাতা বেঁচে থাকতেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন বদিউজ্জামান। যেতে চাননি কিন্তু কুখ্যাত ছাত্রলীগ তাকে জোর করেই বিদায় করলেন। তার একমাত্র দোষ ছিল সে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহযোগিতা করেছে, সে সকল সময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে ,গার্মেন্টসের চাকরিজীবী হয়েও সে সকল সময় ছাত্রদের পক্ষ নিয়ে আন্দোলন করেছে। বদিউজ্জামান, দশম শ্রেণি পর্যন্ত হলদি বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার পর কর্মজীবনে নারায়নগঞ্জে গার্মেন্টেসে যোগদান করেন। তিন ভাই, এক বোনের মধ্যে শহীদ বদিউজ্জামান ই সবার বড় ছিলেন। বাবা কৃষিকাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় শহীদ বদিউজ্জামানই পরিবারের দেখাশুনা করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে উনি এক কন্যা সন্তানের জনক, যার বয়স আট বছর। সে তার নানা বাড়িতে টেপামধুপুর রংপুরে থেকে ১ম শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। শহীদের স্ত্রীও গার্মেন্টস শ্রমিক যিনি বর্তমানে নারায়নগঞ্জে অবস্থান করছেন। শহীদ সংক্রান্ত সামগ্রিক বর্ণণা ভালো ভালো বাক্য রচনায় সিদ্ধহস্ত ছাত্রলীগের সভাপতির কথা, ছাত্রলীগ আপন গতিতে এগিয়ে চলছে নষ্টামির যাবতীয় কর্মতিলক এঁকে। কিন্তু বাস্তবে ছাত্রলীগ ন্যায়ের বিপরীতে অন্যায়ের পক্ষে সকল সময়। পৃথিবীর কোন ছাত্র সংগঠন এত ভয়ংকর এবং কুখ্যাত হতে পারে তা কারো জানা নেই। আওয়ামী লীগের যাবতীয় অপকর্মের পক্ষে লাঠিয়াল হিসেবে পেয়ে যান ছাত্রলীগ নামের এই দলীয় গুণ্ডাবাহিনীকে, সেই বাহিনীকে ব্যবহার করে তারা ক্ষমতার মেয়াদ পূর্ণ করেন। প্রয়োজনে হামলা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর, শিক্ষকদের ওপরে। ২০২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সিলেটে ছাত্রলীগের কর্মী সাইফুর রহমানসহ ৯ জনের দল স্বামীকে বেঁধে রেখে এক গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় তুলেছিল। অবশেষে এই কুখ্যাত দলের পতন হলো কিন্তু বদিউজ্জামানের মত নিরীহ ব্যক্তিদের জীবন দিতে হলো ছাত্রলীগের হাতে। সে দিনের ঘটনা ৫ আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দুপুর ২ টার দিকে ভারতে পালিয়ে যায়। ১৫ বছরের জুলুম নির্যাতনের অবসান ঘটায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ আনন্দ উল্লাস করতে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। শহীদ বদিউজ্জামানও এ সরকারের অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তাই ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনার পতনে তার আনন্দটাও অনেক বেশি ছিল। আজ বহুদিন পরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে। আজ বড় আনন্দের দিন এই আনন্দের দিনে কি কেউ ঘরে থাকতে পারে? আজ বাংলার প্রতিটি মানুষ আবার স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করতে পারল। বদিউজ্জামান তার স্ত্রীকে বলছেন চলো আমরা এই বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করি। আমরা স্বাধীন দেশে বসবাস করলেও দীর্ঘদিন স্বৈরাচারী ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার কারণে পরাধীন অবস্থায় ছিলাম। আজকের এই দিনে চলো আমরা সাধারণ মানুষের সাথে মুক্ত আকাশের নিচে আল্লাহ শুকরিয়া আদায় করি। বদিউজ্জামানের স্ত্রী আদরি খাতুন বললেন, না, আমার যেতে ভালো লাগছে না তুমি যাও। শহীদ বাদিউজ্জামান তখন একাই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল । বদিউজ্জামান অনেক আনন্দের সাথে সরকার পতনের মিছিল করে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়িতে ঢুকবেন এমন সময় ছাত্রলীগের কিছু গুণ্ডা তাকে ধরে নিয়ে যায়। বাদিউজ্জামানকে ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের নির্দিষ্ট রুমে যেখানে তারা সাধারণ ছাত্রদের নিয়মিত অত্যাচার করে থাকে সেখানে রড হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে বদিউজ্জামানকে মেরে ফেলে। পরে সন্ধ্যা ৬:৩০ টার দিকে তার স্ত্রীর কাছে কেউ ফোন দিয়ে বলে আপনার স্বামী নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি আছে। দ্রুত হাসপাতালে চলে আসেন। স্ত্রী আদুরি খাতুন দ্রুত হাসপাতালে গেলে তার স্বামী বদিউজ্জামানকে মৃত অবস্থায় পায়। তখনই পুরো হাসপাতালে বদিউজ্জামানের স্ত্রীর কান্নায় ভারী হয়ে যায়। একজন গার্মেন্টস কর্মীর বক্তব্য গার্মেন্টস কর্মীদের প্রতি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় অত্যাচার করেছে। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধ্বসের মাধ্যমে এক হাজার শ্রমিকের বেশি মানুষ হত্যা করে আওয়ামী লীগ সরকার। রানা প্লাজায় উদ্ধারকর্মীদের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে জানা গিয়েছে শেখ হাসিনার নির্দেশেই রানা প্লাজা ধ্বসের মামলা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড লাগিয়ে দেয় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার। এতে ১১৭ জন নিরীহ গার্মেন্টস শ্রমিক আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করে। এভাবে বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগ সরকার গার্মেন্টস কর্মী শহীদ বদিউজ্জামানের মতো বাংলাদেশের মানুষের প্রতি নৃশংস অত্যাচার চালিয়েছে। বদিউজ্জামানের কর্মজীবন গ্রামে থাকা অবস্থায় বাবার চাষাবাদে সহযোগিতা করতেন। ২০০৩ সালে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। ৩ মার্চ ২০০৪ থেকে কেসি প্রিন্ট লিমিটেডের ডেলিভারি ম্যান হিসেবে জয়েন করেন। নিজের কর্ম প্রচেষ্টা এবং যোগ্যতায় অল্প অল্প করে পদোন্নতি হতে সর্বশেষ এই প্রতিষ্ঠানেরই সিনিয়র সুপারভাইজার ছিলেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এই পদেই অধিষ্ঠিত ছিলেন। শহীদ সম্পর্কে বন্ধুর অনুভূতি বদিউজ্জামান আমার সমবয়সী, বন্ধু একই সাথে পড়াশুনা করেছি। সে অত্যন্ত বিনয়ী, ভদ্র ও নামাজী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচিতে উনি যোগদান করতেন শ্রমিক হওয়া স্বত্তেও ৫ আগস্ট তারিখেও সে মিছিলে গিয়েছিল। মিছিল শেষে বাসায় ফিরেছিলেন তিনি। বাসার সামনে থেকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে মেরে ফেলে। আমি তার পরিবার, গ্রামবাসীর পক্ষ হতে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এক নজরে শহীদ বদিউজ্জামান নাম : বদিউজ্জামান জন্ম তারিখ : ১৯-০৮-১৯৮৮ জন্মস্থান : কাউনিয়া, রংপুর পেশা : গার্মেন্টস কর্মী। কেসি প্রিন্ট লিমিটেড, সিনিয়র সুপারভাইজার (২০০৪ সাল থেকে উত্তর প্রতিষ্ঠানে ডেলিভারি ম্যান হিসেবে কাজ করতেন বর্তমান ঠিকানা গ্রাম : ভূতছাড়া ইউনিয়ন : শহীদবাগ থানা : কাউনিয়া , জেলা : রংপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ভূতছাড়া ইউনিয়ন : শহীদবাগ থানা : কাউনিয়া, জেলা: রংপুর পরিবার পিতার নাম : আব্দুল কাইয়ুম পিতার পেশা ও বয়স : কৃষক ৬২ বছর মাতার নাম : মোসা: বছিরুন খাতুন মায়ের পেশা ও বয়স : গৃহিনী, ৫৬ বছর আয়ের উৎস : গার্মেন্টসের চাকরি পরিবার : মেয়ে নুসরাত জাহান মিম (৮) প্রথম শ্রেণির ছাত্রী আঘাতকারী : ছাত্রলীগ আহত হওয়ায় ও স্থান সময় : চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ, ৫ আগষ্ট ২০২৪ সন্ধ্যা ৬টা মৃত্যুর তারিখ ও সময়, স্থান : ৫ আগষ্ট ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিট চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ পারিবারিক কবরস্থান : নিজ গ্রামের এলাকা পারিবারিক কবরস্থান

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of বদিউজ্জামান
Image of বদিউজ্জামান
Image of বদিউজ্জামান
Image of বদিউজ্জামান
Image of বদিউজ্জামান
Image of বদিউজ্জামান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

লাবলু মিয়া

মো: মেরাজুল ইসলাম

মো: নুর আলম

মো: আজিজুল ইসলাম

মো: সুজন হোসেন

মো: মিরাজুল ইসলাম

মো: নুরুজ্জামান

মো: সাগর রহমান

মো: নয়ন মিয়া

মো: জাহিদুল ইসলাম

হাফেজ মো: নাসির ইসলাম

মো: রুবেল ইসলাম

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo