জন্ম তারিখ: ১১ জানুয়ারি, ১৯৮০
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: ফেরিওয়ালা, শাহাদাতের স্থান : ক্রিসেন্ট হসপিটাল উত্তরা
রংপুর জেলার কাউনিয়া থানার হারাগাছ ইউনিয়ন মোল্লাটরি গ্রামে পিতা মো: তৈয়ব আলী ও মাতা মোসা: লাইলী বেগম এর ঘরে ১১ জানুয়ারি ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে শহীদ লাবলু মিয়া জন্মগ্রহণ করেন। তার বয়োবৃদ্ধ বাবা ও মা গৃহস্থালি কাজ করেন । শহীদ লাবলু মিয়া পেশায় একজন ফেরিওয়ালা। তিনি তার পরিবারে একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে তিনি ভাঙ্গারির মালামাল ফেরি করতেন এবং তার পরিবারের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করতেন। যেভাবে শহীদ হলেন লাবলু মিয়া ২০২৪ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন হলো বাংলাদেশের সব ধরনের সরকারি চাকরিতে প্রচলিত কোটা ভিত্তিক নিয়োগ ব্যাবস্থা সংস্কারের দাবিতে সংগঠিত একটি আন্দোলন। এই আন্দোলনে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি হয় । শতশত বেওয়ারিশ লাশ ও গোপন করা হয় । শহীদ ভাইদের লাশ গুলো পুলিশ লীগ দ্বারা পুড়িয়ে দেওয়া হয়। বহু ছাত্র-জনতার অঙ্গহানি হয় । অনেক কসাই চিকিৎসকের অবহেলায় বহু আন্দোলনকারী চিকিৎসা না পেয়ে মারা যায়। অনেক কসাই চিকিৎসকের কুরুচিপূর্ণ বুলি এমন ছিলো যে সুশিক্ষিত মানুষের হৃদয়েও আঘাত হানে। এসব অত্যাচারের নৃশংসতা যখন চুড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় তখনই বহু নারী, পুরুষ, কৃষক, শ্রমিক, ভেদাভেদ ভুলে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । তাদেরই একজন ছিলেন শহীদ লাবলু মিয়া । তিনি ৫ আগস্ট " লং মার্চ টু ঢাকা " কর্মসূচিতে দুপুর ১ টায় ছাত্রদের সাথে যোগ দেয় । কোটা বিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল গুলো যখন গণভবনের কাছাকাছি তখন ডামি সরকার তার পোষা বাহিনীকে আন্দোলন রুখে দেওয়ার নির্দেশ দেয় । " লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচির অংশ হিসেবে উত্তরা আজমপুর এলাকায় সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মনুষ্যত্বহীন পুলিশ বাহিনী ও টেন্ডারবাজ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। সেই গুলিতে জীবনের আলো নিভে যায় অনেকের সেখানে শহীদ লাবলু মিয়াও ছিলো। তিনি বিকাল ৩ টার দিকে ঘাতক পুলিশের গুলিতে আহত হন এবং তার মাথার পিছনের দিক থেকে ঢুকে সামনের দিক দিয়ে বেরিয়ে যায় । তাৎক্ষণিকভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শহীদ লাবলু মিয়ার বন্ধু তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং তার স্ত্রীকে জানায় লাবলু আহত হয়েছে । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শহীদ হওয়ার পরের দিন বিকাল ৫:৩০ মিনিটে নিজ বাড়ির পাশে সমাহিত করা হয় শহীদ লাবলু মিয়াকে । কেমন আছেন লাবলুর পরিবার শহীদ লাবলু মিয়া তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তার দুই মেয়ে ও একটি ছেলে আছে । তার একমাত্র ছেলেও শারীরিকভাবে অসুস্থ। তার বড় মেয়ে বিবাহিত । টাকার অভাবে ছোট দুই সন্তানের পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পথে । জনাব লাবলু মিয়ার সংসার অনেক কষ্টের মধ্যে চলছিল। দিন এনে দিন খেতো, তাকে হারিয়ে পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। রেখে যাওয়া স্মৃতি শহীদ লাবলু মিয়া অত্যন্ত আল্লাহ ভীরু ছিলেন। ঠিক মতো নামাজ আদায় করতেন সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। তিনি পরিবার-পরিজন সবাইকে নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। তিনি যখন এলাকায় যেতেন তখন সকলের সাথে দেখা করতেন। সবার খোঁজ খবর রাখতেন। তার কথা স্মরণ করে পরিবার ও এলাকাবাসী শোকাহত। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : লাবলু মিয়া পেশা : ফেরিওয়ালা পিতার নাম : তৈয়ব আলী মাতার নাম : মোসা: লাইলি বেগম আহত হওয়ার সময় : ৫-৮-২০২৪ , বিকাল ৩টা শাহাদাত এর তারিখ : ৫-৮-২০২৪, সন্ধ্যা ৭ টা ক্রিসেন্ট হসপিটাল উত্তরা স্থায়ী ঠিকানা : জেলা-রংপুর, থানা-কাউনিয়া, ইউনিয়ন-হারাগাছ, গ্রাম-মোল্লাটরি