জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৯৬
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: নাপিত , শাহাদাতের স্থান: আশুলিয়া থানার সামনে
“শোনো রিনা শহীদ হলে শহীদ হবো দেশ স্বাধীন করবোই” রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানার হাটখোলাপাড়া গ্রামে পিতা মো: রফিকুল ইসলাম, মাতা মোসা: আমেনা বেগমের ঘরে ১ জানুয়ারি ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন শহীদ জাহিদুল ইসলাম। তার বাবা পেশায় ছিলো একজন রিকশা চালক এবং মা ছিলো গার্মেন্টস কর্মী। শহীদ জাহিদুল ইসলামের ৩ ভাই ছিলো। তাদের মধ্যে জাহিদুল বড়। তিনি পেশায় একজন নাপিত ছিলেন। তিনি রংপুর জেলার বটগড় ইউনিয়নের আমরুল বাড়ী হাটপাড়া গ্রামের রিনা বেগম কে বিয়ে করেন এবং শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই থাকতেন। তার নিজের কোন ঘর নেই। তিনি নাপিত এর কাজ করেই তার পরিবারের খরচ বহন করতেন। যেভাবে শহীদ হলেন জাহিদুল ইসলাম আশুলিয়া থানার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ হয়। দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার সাথে আন্দোলনে নামেন শহীদ জাহিদুল। কোটা ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে আন্দোলন শুরু হয় জুলাই এর শুরু থেকে বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ও দলমত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণ ছিলো সেখানে। একজন শিশু থেকে শুরু করে একজন নাপিত ও জীবন দেয় এই যুদ্ধে। এই আন্দোলনের নৃশংসতা দেখে বহু মানুষ অত্যাচারি সরকারের কবল হতে মুক্তির জন্য ছাত্র-জনতার "লং মার্চ টু ঢাকা" কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। ছাত্র-জনতাকে দমিয়ে রাখার জন্য দখলদার সরকারের রক্ত পিপাসু পুলিশ বাহিনী বিভিন্ন ফন্দি আঁটে। আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে আশুলিয়া থানার ছয় তলা থেকে পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকে । এই গুলিতে অসংখ্য মানুষ আহত হয় । তার মধ্যে ফ্যাসিবাদী আজ্ঞাবাহী পুলিশের একটি গুলি এসে লাগে জাহিদুল এর মাথায় । গুলি মাথার পেছনের দিকে আঘাত করে সামনের দিক ভেদ করে বেরিয়ে যায় । তার সহযোদ্ধারা নিজেদের জীবনের তোয়াক্কা না করে তাকে সাথে সাথে আশুলিয়ার মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। শহীদ জাহিদুল ইসলামের স্বপ্ন আশা ছিলো ছোট মেয়েটাকে সুন্দর একটা জীবন উপহার দিবে। শহীদ জাহিদুলের স্বপ্ন ছিলো দেশকে স্বাধীন করবে। দেশ স্বাধীন হওয়া আর দেখা হলো না তার । স্বপ্ন ছিলো বহুদুর কিন্তু দেশীয় সম্পদ লুট করে খাওয়া শাসক ও চাটুকার পুলিশ তার স্বপ্ন পূরণ করতে দিলো না । অসম্পূর্ণ স্বপ্ন নিয়েই জঞ্জাল ভরা দুনিয়াকে বিদায় জানিয়ে তলদেশে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত সুন্দর বাগানের দিকে এগিয়ে গেলেন শহীদ জাহিদুল ইসলাম । আর কখনো ঘরে ফিরবে না জাহিদুল ইসলাম শহীদ জাহিদুল ইসলাম ধর্মপ্রাণ ছিলেন। তিনি সবসময় অন্যায় এর প্রতিবাদ করতেন। জাহিদুল এর সাথে সবার সুসম্পর্ক ছিলো । অভাবের তাড়নায় গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেও গাজীপুরে সেলুনের কাজ করে তার পরিবার চালাতো। শহীদ জাহিদুল ইসলামকে হারিয়ে তার পরিবার শোকাহত তার ছোট মেয়েটা হলো এতিম এবং তার মাথার উপর থেকে বটবৃক্ষের ছায়া উঠে গেলো । এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: জাহিদুল ইসলাম পেশা : নাপিত পিতার নাম : মো: রফিকুল ইসলাম মাতার নাম : মোসা: আমিনা বেগম জন্ম তারিখ : ১-১-১৯৯৬ আহত হওয়ার সময়কাল : ৫-৭-২০২৪ দুপুর ২: ৩০ মিনিট মৃত্যুর তারিখ, সময় : ৫-৮-২০২৪, দুপুর ৩ ঘটিকায় স্থায়ী ঠিকানা : জেলা-রংপুর, থানা- বদরগঞ্জ, গ্রাম: হাটখোলাপাড়া ভাই : ৩ জন