জন্ম তারিখ: ১ জুলাই, ২০০১
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: প্রাইভেট শিক্ষক, ব্যবসা, শাহাদাতের স্থান: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
২০০১ সালের ১৪ জুলাই রংপুর জেলার বদরগঞ্জ থানার অন্তর্গত ঝাটু পাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাফেজ রিদওয়ান। পিতা মো: সাইদুল ইসলাম এবং মাতা মোসা: মল্লিকা খাতুন খুব কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করলেও ছেলেকে আখেরাতের জন্য তৈরি করেছেন হাফেজ বানিয়ে। গ্রামে থেকে ছেলেদের মানুষের মত মানুষ করা কঠিন হয়ে যাবে এজন্য সাইদুল ইসলাম তার সন্তানদের নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। চার ভাইয়ের মধ্যে হাফেজ রিদওয়ান ছিলেন পিতা মাতার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। কারণ তার আচার-আচরণ ছিল অমায়িক। পিতা মাতাকে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন। বছরখানেক আগে গোপালগঞ্জের মেয়ে রুকাইয়া খাতুন এর সাথে রিদওয়ান বিয়ে হয়। তাদের ঘর এখন ছয় মাস বয়সের বায়েজিদ বোস্তামী আলোকিত করে রেখেছেন। হাফেজ রিদওয়ান এর বড় ভাই আলাদা সংসার করছেন এবং ছোট দুই ভাই হেফজ খানায় পড়ালেখা করেন। ইসলামিক পরিবার হওয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যেও তারা সুখে শান্তিতে দিন যাপন করতেন। বিশ্বনন্দিত আলেমে দ্বীন মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী যখন শাহাদাত বরণ করেন তখন হাফেজ রিদওয়ান স্বপ্ন আঁকেন তার সন্তান হলে সাঈদী সাহেবের মত তৈরি করবেন। সন্তান হয়তো মানুষের মত মানুষ হবে, আলেম হবে কিন্তু হাফেজ রিদওয়ান সেটা উপভোগ করতে পারবে না। কারণ তাকে জালিম স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পোষা কিছু মানুষ নামের পশুরা দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিলেন। ঘটনা সংক্রান্ত বিবরণ সদ্য মুক্ত স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের/খোদার রাহে প্রাণ দিতে আজ ডাক পড়েছে তাদের। কি অপরাধ ছিলো হাফেজ রেদওয়ানের? কেন সন্তানের কফিন পিতার কাঁধে বহন করতে হলো? কেন মায়ের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হলো? কেন স্বজন আর দ্বীনি ভাইদের বুকফাটা আর্তনাদ শুনতে হলো? অপরাধ একটাই! ‘তাদের (ঈমানদারদের) থেকে তারা কেবল একটি কারণেই প্রতিশোধ নিয়েছে। আর তা হচ্ছে তারা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিল, যিনি প্রশংসিত, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সাম্রাজ্যের অধিকারী। মৃত্যু সকলের জন্য অবধারিত কেউ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে আবার কেউ অস্বাভাকি মৃত্যুবরণ করে। আর কিছু মৃত্যু হয় স্মরণীয় মৃত্যু। আর হাফেজ রেদওয়ান সবসময় সেই স্মরণীয় মৃত্যুই কামনা করতেন। মৃত্যু এক অনিবার্য মহাসত্য। মৃত্যুর হাত থেকে কেউই মুক্তি পায়নি। মানুষের কীর্তিই মানুষকে চিরভাস্কর করে রাখে। মৃত্যুর পরেও হয়ে থাকে অমর। পৃথিবীর বুকে তাকে রাখে চিরস্মরণীয় বরণীয়। তেমনি কীর্তিগাঁথা আল্লাহর রাহে জীবন উৎসর্গকারী এক শহীদ হাফেজ রেদওয়ান। ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশ স্বাধীনের দাবিতে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন হাফেজ রিদওয়ান। সকাল থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীর ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসী গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হতে থাকে। সাধারণ ছাত্র-জনতা ন্যায্য দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসলেও আজ দুপুরে আন্দোলনের সফলতা আসে। সফলতা আসার পরেও সন্ধ্যার দিকে আজমপুর উত্তরায় ছাত্র-জনতাকে উদ্দেশ্য করে পুলিশ মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ করে। আন্দোলনরত জনতার মধ্যেই একজন ছিলেন হাফেজ রিদওয়ান আলী। তিনি সবসময় আন্দোলনের সামনের দিকে ছিলেন। তিনি ভাবছিলেন সারা দেশ যখন আমরা স্বাধীন করে ফেলেছি তখন এখানেও স্বাধীন করা সম্ভব। স্বৈরাচার গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা যখন পদত্যাগ করেছে তখন তার প্রশাসন সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী বেশিক্ষণ আমাদের সাথে লড়াই করতে পারবেনা । তার চিন্তাভাবনা ঠিকই ছিল। কিন্তু হঠাৎ পুলিশের নিক্ষেপ করা ৪ টি গুলি শরীরে বিদ্ধ হয়। তন্মধ্যে ১ টি গুলি কাঁধে আটকে যায়। সাথে সাথে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় পরেরদিন রাত ৯ টায় ইন্তেকাল করেন কুরআনের পাখি হাফেজ রিদওয়ান। হাফেজ রিদওয়ানের আমল আখলাক হাফেজ রিদওয়ান বয়োপ্রাপ্ত হওয়ার আগেই নিজেকে ইসলামের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেন এবং তিনি সর্বদা ঠাণ্ডা, ঝড়-বৃষ্টি সত্ত্বেও নামাজের শুরুতে মসজিদে যেতেন এবং নামাজের পর কোরআন পড়তে বসতেন। কুরআন ছিল তার ব্যক্তিগত সঙ্গী, তিনি সর্বদা এটি আবৃত্তি করতেন।তিনি তার আচরণে সৎ ছিলেন; তার সর্বদা অশ্রুসিক্ত চোখ তার ভাল সততাকে নির্দেশ করে এবং তার সম্পূর্ণ লক্ষ্য ছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি আনুগত্য। হাফেজ রিদওয়ান একজন পরামর্শদাতা ব্যক্তি ছিলেন, বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে। তিনি সর্বদা পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতেন।তিনি তার পিতাকে সম্মান করতেন এবং তার মায়ের প্রতি স্নেহশীল এবং মমতাময়ী ছিলেন। তার ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে নিজেকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছিলেন এবং তিনি তার উচ্চ আধ্যাত্মিকতার জন্য পরিচিত ছিলেন, কারণ তিনি মসজিদে যে নামাজ আদায় করতেন তার রুকু ও সিজদা দীর্ঘায়িত করতেন। শুক্রবারে অজু করে সবার আগে মসজিদে যেতেন এবং নিয়মিতভাবে রাতে উঠে নামাজ পড়তেন, নিয়মিত রোজা রাখতেন এবং গোপনে সাদকা করতেন।তিনি ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান পুনরুজ্জীবিত করতে আগ্রহী ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলন শুরু হওয়ার সাথে সাথে, হাফেজ রিদওয়ান তার পরিবারকে বিদায় জানালেন জিহাদের কাজের আহ্বানে সাড়া দিলেন। তার আত্মা তাকে বলেছিল যে তার নাম শহীদদের মধ্যে থাকবে। তাই তিনি তার মায়ের কাছে ফিসফিস করে বললেন মা আমি শহীদ হতে পারি । তিনি তার মাকে ধৈর্য ধরতে বললেন এবং মিসেসকে সান্ত্বনা দিতে বলেছিলেন। তিনি তার মুখের দিকে দাঁড়িয়েছিলেন। স্বামীর প্রস্থানের বিরোধিতা করেছিলেন, এবং তাকে যা করতে হয়েছিল তার উত্তর ছিল, আমি নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছি। শহীদের পিতার বক্তব্য সকলের জন্য অবধারিত কেউ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করে আবার কেউ অস্বাভাকি মৃত্যুবরণ করে। আর কিছু মৃত্যু হয় স্মরণীয় মৃত্যু আর রিদওয়ান সবসময় সেই স্মরণীয় মৃত্যুই কামনা করত। তার মৃত্যুতে আমি মোটেও দুঃখিত না। বরং শহীদের পিতা হতে পেরে আমি গর্বিত। হাফেজ রিদওয়ান এর পারিবারিক অবস্থা শহীদ রিদওয়ানের পারিবারিক অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ। ছয় মাসের ছেলেকে নিয়ে রিদওয়ানের স্ত্রী রিদওয়ানের পিতার পরিবারেই আছেন। উপার্জনের কোন ব্যক্তি এই পরিবারে নেই। তাদের স্থায়ী কোন সম্পত্তিও নেই। শহীদ রিদওয়ানের ছোট দুই ভাই লেখাপড়া করেন। একটি হাফেজী মাদ্রাসায় এবং বড় ভাই আলাদা করে সংসার করেন। এক নজরে শহীদ হাফেজ রিদওয়ান আলী নাম : হাফেজ রিদওয়ান আলী জন্ম তারিখ : ১/০৭/২০০১ জন্মস্থান : ঝাটুপাড়া, বদরগঞ্জ, রংপুর পেশা : প্রাইভেট শিক্ষক, ব্যবসা বর্তমান ঠিকানা : ৪৮ নম্বর ওয়ার্ড, দত্তপাড়া টঙ্গী কলেজ গেট টঙ্গী, পূর্ব থানা, গাজীপুর স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: ঝাটু পাড়া, ইউনিয়ন: ৫ নং কাজীপাড়া, থানা: বদরগঞ্জ, জেলা: রংপুর পরিবার পিতার নাম : মো: সাইদুল ইসলাম (৪৯), বেকার মাতার নাম : মোসা: মল্লিকা খাতুন (৪৫) গৃহিণী আয়ের উৎস : টিউশনি, আতর টুপির ছোট ব্যবসা স্ত্রী : রুকাইয়া খাতুন (১৭) গৃহিণী ছেলে : বায়জিদ বোস্তামি (৬ মাস) আঘাতকারীর : পুলিশ আহত হওয়ার তারিখ, সময় ও স্থান সময় : আজমপুর, উত্তরা; ০৫-০৮-২০২৪, বিকাল ৫ : ৩০ মৃত্যুর তারিখ, সময় ও স্থান : ০৬-০৮-২০২৪, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাত ৯ টা জানাজ : ০৭-০৮-২০২৪, সকাল ১১ টা কবরস্থান : ঝাটুপাড়া, বাজারগঞ্জ, রংপুর প্রস্তাবনা ১.নিয়মিত মাসিক আর্থিক সহায়তা ২. ব্যবসায়িক কাজে মূলধন সহায়তা ৩. বাড়ি করে দেওয়া