জন্ম তারিখ: ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা : ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি বাড়িতে আগুনে দগ্ধ
আল শাহ রিয়াদ ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের প্রাণৎসর্গকারীদের মধ্যে অন্যতম। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী নরপিশাচদের নির্মমতার শিকার হন তিনি। লালমনিরহাটের একটি বাড়িতে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানেই আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবন শহীদ আল শাহ রিয়াদের ডাক নাম তন্ময়। শহীদ তন্ময় প্রকৃত অর্থেই একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। স্কুল জীবন থেকে কলেজ জীবনের প্রত্যেক স্তরে তিনি তাঁর মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ভর্তি হন। ছোট বেলা থেকেই আল শাহ রিয়াদ মিশুক, ভদ্র ও মার্জিত স্বভাবের অধিকারী। মায়ের খুব বাধ্য সন্তান ছিল রিয়াদ। কখনো কোথাও যেতে হলে প্রথমেই তার মায়ের অনুমতি নিয়ে তারপর যেতেন । বাবা হারানোর পর পরিবারের বড়ো ছেলেটি ছিল মায়ের আদরের ধন। মধ্যবিত্ত স্বচ্ছল পরিবারে জন্ম নেয়া দুই ভায়ের মধ্যে সে ছিল বড়ো । ২০২০ সালে তার বাবা মারা যাবার পর পরিবারের আয়ের প্রধানতম পথটি রুদ্ধ হয়ে যায়্। দুনিয়া থেকে চলে যাবার আগে শহীদ অনেক স্মৃতি রেখে গেছেন। পারিবারিক জীবন শহীদ আল রিয়াদ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। পরিবারিক সূত্র থেকে জানা যায় , শহীদের পিতার মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পদ ও শহীদের মামা ওনানীর সহযোগিতা নিয়ে তারা মোটামুটিভাবে দিনাতিপাত করছিল। মো: আল জুবায়ের তামিম পুলিশ লাইন স্কুল, লালমনিরহাতে ৮ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন এ শহীদ আল শাহ রিয়াদ আল শাহ রিয়াদ ২০২৪ সালের বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী। ২০১৩, ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের ৬ জুন আবারও কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। দাবী আদায়ে রাজপথে নেমে আসে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শহীদ আল রিয়াদ এ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। সরকার আন্দোলন দমাতে সব স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করে। ঢাকার মেসে মেসে চিরুনি অভিযান চালায় পুলিশ। সাধারণ ছাত্রদের ধরে এনে থানায় আটকে রাখে। আতংক ছড়িয়ে পড়ে শহরে। মায়ের অনুরোধে রিয়াদ লালমনিরহাটের নিজ বাসায় ফিরে আসেন। এখানে এসেও শহীদ তার কর্তব্য থেকে পিছিয়ে যাননা। তিনি আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। আন্দোলনের এক পর্যায়ে আসে বহুল কাঙ্খিত ২য় স্বাধীনতা। অগ্নিঝরা আগস্ট মাসের ৫ তারিখ ছিল স্বৈরাচার পতনের দিন। সাধারন জনতার বিজয় ও আনন্দের দিন। শহীদ আল রিয়াদ আনন্দ মিছিলে যোগ দিতে বিকেল ৩ টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় । বিজয় মিছিলে তখন ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ আনন্দ করতে থাকে। এক পর্যায়ে কে বা কারা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন সুমনের ৪ তলা সুরম্য প্রাসাদের ৩য় তলায় ৬ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে আটকে রাখে। বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়্। বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ঘাতকের দোসররা। মুহুর্তেই পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায় ৬ জনের দেহ। অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে এই জঘন্ন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে দাবী সাধারন জনগনের । বাড়িটি ছিল লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে। রাত যত ঘনিয়ে আসে রিয়াদের মায়ের চিন্তা ততই বাড়তে থাকে। ছেলেকে দেখতে না পেয়ে হনে হয়ে খুঁজতে শুরু করে সবাই। ফেসবুকে অনলাইন, বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সংবাদ আসে যে, আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সহায়তায় লাশগুলি ঘরের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত লাশগুলো লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবারগুলোর ধারনা যে, এই ৬ জনের মধ্যেই হয়তো তাদের সন্তানকে পাওয়া যাবে। পরদিন ৬ আগষ্ট শহীদের মামা ও চাচা একসাথে গিয়ে লাশ শনাক্ত করতে সক্ষম হন। শহীদের পুরো শরীর আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায়। দেখে বুঝার উপায় থাকে না এটা কার লাশ। শুধু মুখের থুতনী ও গলার চেইন দেখে তার পরিবার তাকে সানাক্ত করতে সক্ষম হন। ছেলের এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে মায়ের অন্তর ফেটে যায়। কে আছে তার মাকে সান্তনা দেবে? মায়ের আহাজারিতে এলাকাবাসীও কান্না ধরে রাখেতে পারে না। দাফন অবশেষে বেলা ১:৩০ মিনিটে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হলে বিকেল ৫:৩০ মিনিটে আসর নামাজের পর লালমনিরহাট কেন্দ্রীয় কবরস্থানে শহীদ আল রিয়াদকে দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের অনুভূতি শহীদের সম্পর্কে তার বাল্যকালের বন্ধু , স্কুল ফ্রেন্ড মাহমুদা হোসেন মিথির ভাষ্য মতে, আল শাহ রিয়াদ ছিল খুবই সাধারণ, মেধাবী একজন ছেলে। সে অনেক মিশুক ছিল, তার সকল বন্ধুদের সে সম্মান করত। একই সাথে প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নিত। কারো সাথে দেখা হলেই কেমন আছিস বলে খোঁজ নিত। শহীদ রিয়াদের প্রতিবেশী বড় বোন মাহবুবা মনির ভাষ্য মতে, তার সাথে দেখা হলে হাসি মুখে কথা বলতো সালাম দিয়ে কুশলাদী বিনিময় করতো। দেশ প্রেমিক ও প্রতিবাদী মানসিকতার ছেলে ছিল শহীদ রিয়াদ। তার এই জঘন্য ও বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছে সেই সাথে যারা এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে তাদের শাস্তির দাবী জানাই। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : আল শাহ রিয়াদ পেশা : ছাত্র, রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ জন্ম : তারিখ: ০৮.০৯.২০০৫ বয়স : ১৮ বছর পিতা : মরহুম জাহেদুল ইসলাম মাতা : নাসরীন পারভীন শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি বাড়িতে আগুনে দগ্ধ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : হাড়িভাঙ্গা, মহেন্দ্রনগর, লালমনিরহাট প্রস্তাবনা ১. শহীদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান ২. পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান দেয়া