জন্ম তারিখ: ১৩ জুলাই, ২০০৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের
“দেহের সাথে স্বপ্ন গুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেল।” মো: জোবায়ের হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রাণোৎসর্গকারীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর জন্ম লালমনিরহাট জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম খোর্দসাপটানাতে। তার পিতা জনাব জহিরুল ইসলাম এবং মাতার নাম মোসা: জিন্নাতুন নাহার। লালমনিরহাটের একটি বাড়িতে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখানেই আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবন মো: জোবায়ের হোসেন একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি লালমনিরহাট সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। মাঝে মাঝে বাবার সাথে ইন্টেরিয়র ডিজাইন মিস্ত্রী হিসেবে কাজে যোগ দিতেন। কিশোর জোবায়ের ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন মেধাবী এবং পরিশ্রমী একজন মানুষ। পরিশ্রম করে তিনি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল অনেকদুর এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সবার স্বপ্ন কি আর পূরণ হয়। কিছু মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। বাস্তবে রুপ নেয় না। আগুনে পুড়িয়ে সকল স্বপ্ন ভস্ম করে দেওয়া হল। তার দেহের সাথে স্বপ্ন গুলোও পুরে ছাই হয়ে গেল। চোখে দেখা রঙিন স্বপ্ন নিমিষেই কালো অঙারে পরিণত হয়ে গেল। পারিবারিক জীবন শহীদ জোবায়েরের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫ জন। তার বড় ভাই জাকির হোসেন কোরআনের হাফেজ। আর ছোট বোন জেসমিন আক্তার ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। দিন আনেন দিন খান। পরিবারটির মাসিক কোন আয় নেই। অসুস্থ বাবা মেরুদণ্ডের সমস্যা নিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইন মিস্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। দিন শেষে যে টাকা পান তাই দিয়ে সংসার চলে। পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি শহীদ জোবয়ের হোসেনের পিতা জনাব মো: জহিরুল ইসলাম বর্তমানে খুবই অসুস্থ। বেশ কিছু দিন আগে মিস্ত্রির কাজ করার সময় পড়ে গিয়ে শহীদের বাবা কোমরে প্রচণ্ড চোট পান। পরে তাকে চিকিৎসা নিতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়। ভালো করে হাঁটতে পারেন না। ভারী কোন কাজ করতে পারেন না। তবুও অসুস্থ অবস্থায় জীবনের চাকা ঘুরাতে দিনরাত অসুস্থতা নিয়েও তাকে এই কাজ করে যেতে হয়। বাবা অসুস্থ হওয়ায় এই শহীদ ছেলেটি বাবার কাজে মিস্ত্রী হিসেবে সহযোগিতা করতো। যেভাবে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হল শহীদ মো: জোবায়ের হোসেন কে ঘটনার দিনটি ছিল ৫ আগস্ট ২০২৪। এ দিনেই বাংলার ইতিহাসে রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের পতন ঘটে। সারা দেশে বিজয় ও আনন্দ মিছিল বের হয়। শহীদ জোবায়ের হোসেনও সেদিন আনন্দ মিছিলে যুক্ত হয়েছিলেন। যখন ছাত্র-জনতা ও সাধারণ মানুষ আনন্দ করতে থাকে তখন কে বা কারা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন সুমনের ৪ তলা সুরম্য প্রাসাদের ৩য় তলায় ৬ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে বাহির থেকে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজ বন্ধ করে বাহির থেকে আগুন ধরিয়ে দেয় ঘাতকের দোসররা। মুহুর্তেই পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায় ৬ জনের দেহ। সেই ৬ জনের মধ্যে শহীদ মো: জোবায়ের হোসেনও ছিলেন। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই জঘন্ন হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে দাবী সাধারণ জনগনের। বাড়িটি ছিল লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে। রাত যত ঘনিয়ে আসে ৬ জনের পরিবার তাদের খুঁজতে থাকে, কেউ ফেসবুকে অনলাইন, বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সংবাদ আসে যে, আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তখন রাত ১২ টা। তখনি সন্দেহ হয় তাদের। মনে হয় তাদের জোবায়েরও সেখানেই আছে। সেনা বাহিনীর সহায়তায় লাশগুলি উদ্ধার করে লালমনিরহাট হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে সেই পুড়ে যাওয়া ৬ জনের মধ্যে তাদের আদরের ছেলে জোবায়েরও আছে। লাশ পুড়ে একদম ছাই হয়ে যায়। চেনার কোন উপায় থাকে না। কোনটা কার লাশ। অবশেষে খুব কষ্টে শহীদ জোবায়ের লাশ সনাক্ত করা হয়। এমন ভয়ানক মৃত্যু দেখে সকলে থমকে উঠে। মমতাময়ী মা ছেলের এমন করুন মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। দাফন-কাফন হাসপাতাল থেকে বেলা ৫:৩০ মিনিটে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। জানাজা শেষে বাদ মাগরিব স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: জোবায়ের হোসেন পেশা : ছাত্র, লালমনিরহাট সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ৯ম শ্রেণি জন্ম তারিখ : ১৩.০৭.২০০৮ বয়স : ১৫ বছর পিতা : মো: জহিরুল ইসলাম মাতা : মোসা: জিন্নতুন নাহার শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি বাড়িতে আগুনে দগ্ধ স্থায়ী বর্তমান ও ঠিকানা : গ্রাম: খোর্দসাপটানা, লালমনিরহাট পৌরসভা, লালমনিরহাট প্রস্তবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক সহায়তা প্রদান ২. শহীদের পিতার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা