Image of মো: জাহিদুর রহমান

নাম: মো: জাহিদুর রহমান

জন্ম তারিখ: ৫ জানুয়ারি, ২০০২

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি বাড়িতে আগুনে দগ্ধ

শহীদের জীবনী

মো: জাহিদুর রহমান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম শহীদ। তাঁর জন্ম লালমনিরহাট জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম নবীনগর। তার পিতা মরহুম সেকান্দর আলী এবং মাতার নাম মোসা: জমিলা বেগম। তিনি ৫ আগস্ট বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী নরপিশাচদের নির্মমতার শিকার হন। লালমনিরহাটের একটি বাড়িতে আটকে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সেখানেই আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহাদাত বরণ করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবন মো: জাহিদুর রহমান একজন ছাত্র ছিলেন। তিনি লালমনিরহাট সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে ৯ম শ্রেণিতে পড়াশোনা করতেন। কিশোর মো: জাহিদুর রহমান ছিলেন প্রকৃত অর্থেই একজন মেধাবী এবং পরিশ্রমী মানুষ। পরিশ্রম করে তিনি তার পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। স্বপ্ন ছিল অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সবার স্বপ্ন কি আর পূরণ হয়। কিছু মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। বাস্তবে রুপ নেয় না। ছোট বয়সে বাবাকে হারান। মায়ের কাছেই বড় হন। মা খুব কষ্ট করে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ছেলেকে এসএসসি পাশ করান। কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্রতার কারণে আর পড়াশোনা চালানো সম্ভব হয় না। ঢাকায় যান কাজের উদ্দেশ্যে। আগুনে পুড়িয়ে সকল স্বপ্ন ভস্ম করে দেওয়া হল শহীদ জাহিদুর রহমানের। তার দেহের সাথে স্বপ্ন গুলোও পুরে ছাই হয়ে গেল। চোখে দেখা রঙিন স্বপ্ন নিমিষেই কালো অঙারে পরিণত হয়ে গেল। পারিবারিক জীবন ও অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ জাহিদুর রহমান খুবই দরিদ্র ঘরে বেড়ে উঠা এক যুবকে। ৪ জনের সংসারে তার পিতা অন্যের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। খুব অল্প বয়সে যখন তার বয়স ৬ বছর তখন তিনি তার পিতাকে হারান। এই এতিম পরিবারের হাল ধরেন তার অসুস্থ মা। মানুষের বাসায় ও মেসে কাজ করে যা পেতেন তাই দিয়ে সংসার চালাতেন। খুবই জীর্ণশীর্ন তাদের বাড়িটি, ২ কক্ষে ৪ জনের বসবাস। ৪ জন বলতে তার বোন ও দুলাভাই সহ। খুব কষ্টের মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয় এই বয়স্ক মানুষটির জীবন। ছেলের শাহাদাতের মধ্যদিয়ে বৃদ্ধ মা একা হয়ে গেল। তাই তার বোন ও দুলাভাই মায়ের দেখভালের দায়িত্ব নেবেন বলেছেন। তবে তারাও খুবই দরিদ্র। আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয় মো: জাহিদুর রহমান কে ৫ আগস্ট ২০২৪। বাঙালি জাতির স্মরণীয় একটি দিন। টানা ১৫ বছর পর পরাজয় হলো ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। কোটা আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন থেকে নিরাপদ স্থানে চলে যান শেখ হাসিনা। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে চলমান অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লং মার্চ টু ঢাকা ছিল আজ। এর আগে দুইদিনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গড়ে ওঠা এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পুরো জুলাই মাসজুড়ে চলে এই আন্দোলন। একপর্যায়ে সরকার কোটা সংস্কার করে। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার জেরে এক দফা দাবি উঠে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ৫ আগস্ট বেলা ১১ টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। এক পর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সমূহ লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। ছাত্র-জনতার ঢল দেখে ভয়ে দেশ ছেড়ে পালান ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রচিত হয় এক নতুন ইতিহাস। ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের পতনের ঘটে। সারা দেশে বিজয় ও আনন্দ মিছিল বের হয়। যাওয়ার আগে স্বৈরাচারী হাসিনা দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়। সারা দেশে হামলা, ভাঙচুর, আগুন, ডাকাতি, খুন ইত্যাদির মাধ্যমে এক আতংকের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মো: জাহিদুর রহমান ও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন। লালমনিরহাটের একটি বাড়িতে আবদ্ধ করে আগুনে পুড়িয়ে ৬ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তার মধ্যে জাহিদুর রহমানও ছিলেন। সাধারণ জনতার সাথে আনন্দ মিছিলে যুক্ত হন । শহীদ মো: জাহিদুর রহমান। আনন্দ মিছিল চলাকালে কে বা কারা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন সুমনের ৪ তলা সুরম্য প্রাসাদের ৩য় তলায় ৬ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজ বন্ধ করে বাহির থেকে আগুন ধরিয়ে দেয় ঘাতকের দোসররা। মুহুর্তেই পুড়ে নি:শেষ হয়ে যায় ৬ জনের দেহ। সেই ৬ জনের মধ্যে মো: জাহিদুর রহমান একজন। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এই জঘন্ন হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে বলে দাবী সাধারণ জনগনের। বাড়িটি ছিল লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে। রাত যত ঘনিয়ে আসে ৬ জনের পরিবার তাদের খুঁজতে থাকে, কেউ ফেসবুকে অনলাইন, বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে সংবাদ আসে যে, আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে ৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তখন রাত ১২ টা। তখনি পরিবারের সন্দেহ হয় তাদের ছেলে মো: জাহিদুর রহমানকে নিয়ে। সেনা বাহিনীর সহায়তায় লাশগুলি উদ্ধার করে লালমনিরহাট হাসপাতালে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে সেই পুড়ে যাওয়া ৬ জনের মধ্যে তাদের আদরের ছেলে মো: জাহিদুর রহমানও আছে। লাশ পুড়ে একদম ছাই হয়ে যায়। চেনার কোন উপায় থাকে না। কোনটা কার লাশ। অবশেষে খুব কষ্টে জাহিদুর রহমানের লাশ সনাক্ত করা হয়। এমন ভয়ানক মৃত্যু দেখে সকলে কেঁপে উঠে। মমতাময়ী মা ছেলের এমন করুণ মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিল না। দাফন-কাফন হাসপাতাল থেকে বেলা ৫:৩০ মিনিটে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। জানাজা শেষে বাদ মাগরিব স্থানীয় পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়ের বক্তব্য শহীদের বোনের বক্তব্য অনুযায়ী, তার ভাইটি ছিল পরিবারের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। মাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো। পড়াশোনার খরচ কুলাতে না পেরে সে ঢাকায় কাজের জন্য যায় এবং সেখানে কাজ করে যা আয় করতো তা তার মায়ের জন্য পাঠাতো। সে বোনকে খুব আদর করত। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : শহীদ মো: জাহিদুর রহমান পেশা : ছাত্র, লালমনিরহাট সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ ৯ম শ্রেণি জন্ম তারিখ : ০৫.০১.২০০২ বয়স : ২২ বছর পিতা : মরহুম সেকান্দর আলী মাতা : মোসা: জমিলা বেগম শাহাদাতের তারিখ : ৫ আগস্ট ২০২৪ শাহাদাতের স্থান : লালমনিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনে একটি বাড়িতে আগুনে দগ্ধ স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: নবীনগর, লালমনিরহাট পৌরসভা, লালমনিরহাট প্রস্তাবনা : শহীদের মাকে মাসিক সহযোগিতা প্রদান করা জরুরী

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: জাহিদুর রহমান
Image of মো: জাহিদুর রহমান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: রাকিবুল হাসান রকি

মো: সাগর রহমান

আল শাহ রিয়াদ

লাবলু মিয়া

রুদ্র সেন

বদিউজ্জামান

মো: শাহাবুল ইসলাম ( শাওন )

মো: রবিউল ইসলাম রাহুল

মো: রুবেল ইসলাম

শাকিনুর রহমান

মো: আজিজুল ইসলাম

মো: রায়হানুল হাসান

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo