জন্ম তারিখ: ২৮ জুলাই, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: কৃষক, শাহাদাতের স্থান : কাউয়ামারী পয়েন্ট
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটেও। এ জেলার অন্যতম একজন শহীদ হাফেজ মো: আজিজুল ইসলাম। লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানার ঝালাঙ্গি গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কৃষক পিতা মো: আবদুর রহিম (৫১) ও গৃহিনী মাতা মোসা: রেজিয়া খাতুনের (৪৩) একমাত্র পুত্র সন্তান তিনি। ৫ আগস্ট বিজয়ের দিন সন্ধ্যা ৬ টায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আজিজুল শাহাদাত বরণ করেন। ব্যক্তিগত জীবন আওলিয়ারহাট কাজী নিজামীয়া দাখিল মাদ্রাসার দশম শ্রেণীর ছাত্র ছিলেন আজিজুল ইসলাম। এর আগে তিনি জামিয়া রাশিদিয়া ইসলামীয়া মাদ্রাসা থেকে হেফজ শেষ করেন। মো. আবদুর রহিমের দ্বিতীয়পক্ষের বড় সন্তান শহীদ হাফেজ মো. আজিজুল ইসলাম। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি কুরআনে হাফেজ হন। এলাকায় তরুণ ইসলামী বক্তা হিসেবে বেশ পরিচিতও হয়ে উঠেছিলেন তিনি। ওয়াজ মাহফিল গুলোতে তাঁর ডাক পড়ত। তিনি ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহিত করতে চাইতেন। যেভাবে শহীদ হন ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার এক দফা দাবিতে সবাই রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানালে সারাদেশের মানুষ সেই আহ্বানে সাড়া দেয়। বাস্তায় নেসে আসে আওলিয়ারহাট কাজী নিজামীয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও। জমায়েত ঘটে কাউয়ামারী পয়েন্টে। সকাল ১১ টা থেকে সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মিছিল চলে। এরপর খুনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দোসর ঘাতক পুলিশের সহায়তায় ছাত্র-জনতার উপর চড়াও হয়। চলে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। এরই মধ্যে খবর আসে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। মানুষ আনন্দ মিছিল বের করে। সেই মিছিলেও যোগ দেন হাফেজ আজিজুল ইসলাম। সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত একটা ডিজিটাল সাইনবোর্ডে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। আনুমানিক ২০ মিনিট বৈদ্যুতিক তারে ঝুলে ছিলেন। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শহীদ সম্পর্কে শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া আওলিয়ারহাট কাজী নিজামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সহ-সুপার বলেন, “হাফেজ শহীদ মো. আজিজুল ইসলাম এই মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলেন। এই বছর দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন। বিগত তিন বছরে তিনি সহপাঠি বা কারো সাথে কোন দ্বন্দ্বে জড়াননি। তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ অফিসে জমা পড়েনি। তার সবচেয়ে বড় গুণ ওয়াজের মওসুমে নানা স্থানে বয়ান পেশ করতেন। ভালো একজন ইসলামী বক্তা হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।” পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা আজিজুল ইসলামের পিতা মো: আবদুর রহিম পেশায় একজন কৃষক। নিজের জমিতে চাষবাস করে সংসার চলে। তাঁর দুই সংসার। প্রথমপক্ষে ৩ জন ছেলে সন্তান ও ২ জন মেয়ে রয়েছে। আর দ্বিতীয় পক্ষে একজন ছেলে (শহীদ আজিজুল ইসলাম) এবং একজন মেয়ে। আজিজুল ইসলামের তিন ভাইয়ের মধ্যে মো: জালাল উদ্দিন পেশায় কৃষক, মো: হেলাল উদ্দিন পাথর শ্রমিক এবং মো: মিজানুল ইসলাম আওলিয়ারহাট কাজী নিজামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র। এক নজরে শহীদ মো: আজিজুল ইসলাম নাম : মো: আজিজুল ইসলাম পিতা : মো: আবদুর রহিম মাতা : মোসা: রেজিয়া খাতুন পেশা : কৃষক জন্ম তারিখ ও বয়স : ২৮ জুলাই ২০০৫, ১৯ বছর আহত ও শহীদ হওয়ার তারিখ : ০৫ আগস্ট শাহাদাৎ বরণের স্থান : কাউয়ামারী পয়েন্ট দাফনের স্থান : নিজ গ্রাম স্থায়ী ঠিকানা : ঝালাঙ্গি, পাটগ্রাম থানা, লালমনিরহাট ঘরবাড়ি ও সম্পদের অবস্থা : নিম্নবিত্ত পরিবার ভাইবোন ও সন্তানের বিবরণ : তিন ভাই ও দুই বোন প্রস্তাবনা ১. শহীদের পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. ভাইদের যথাযথ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা ৩. ছোট বোনের সমস্ত দায়িত্ব নেয়া