Image of মো: নুরুজ্জামান

নাম: মো: নুরুজ্জামান

জন্ম তারিখ: ৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮১

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৮ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা:মোটর সাইকেল চালক, শাহাদাতের স্থান : রংপুর মেডিকেল কলেজ

শহীদের জীবনী

মো: নুরুজ্জামান, একজন মোটরসাইকেল চালক, যিনি ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮১ তারিখে জন্মগ্রহণ করেন লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে। তার পরিবার ছিল হতদরিদ্র, দিন এনে দিন খাওয়া ছিল তাদের জীবনের নিত্য চ্যালেঞ্জ। তার বাবা, মো: আফিয়ার রহমান আগেই পরলোকগমন করেছেন। তার মা মোসা: আছিয়া বেগম, বয়স ৬৮, গৃহিণী, পরিবারের জন্য আর্থিকভাবে কিছুই করতে পারছেন না। তাদের আয়ের কোনো নির্দিষ্ট উৎস ছিল না। নুরুজ্জামানের পরিবারে ছিল ৬ জন সদস্য। দুই ভাই ও দুই বোনের মাঝে তিনি ছিলেন গ্রামের সুপরিচিত এক পরোপকারী মানুষ। গ্রামের লোকজন তাকে যেকোনো সমস্যায় সবার আগে পাশে দাঁড়াতে দেখত। তার উদারতা ও সাহায্য করার ইচ্ছা তাকে গ্রামে সবার প্রিয় করে তুলেছিল। তবে তার নিজের জীবনে অর্থনৈতিক সংকট সবসময়ই ছিল প্রবল। দিন এনে দিন খাওয়া এই মানুষটি তার পরিবারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনার প্রেক্ষাপট শহীদ নুরুজ্জামান ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল ও মিশুক প্রকৃতির মানুষ। আওলিয়ারহাট বাজার এলাকায় যখন তিনি ভ্যান চালাতেন তখন অনেকেই তাঁর ভ্যানের জন্য অপেক্ষা করতেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে তাঁর ভ্যানেই যেতেন বা ভাড়া নিতেন। তিনি কখনও অতিরিক্ত ভাড়া দাবী করতেন না। এলাকার মধ্যে তাঁর লেনদেন ও ব্যবহার নিয়ে তিনি প্রশংসিত ছিলেন। যখন তিনি ভ্যান বিক্রি করে মটর সাইকেল কিনে যাত্রী বহন করতেন তখনও সবার সাথে ভালো লেনদেন ছিল। ভাড়া নিয়ে কারও সাথে মনোমালিন্য হয়নি। শহীদ নুরুজ্জামান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চুড়ান্ত পর্যায়ের এক দফা কর্মসূচিতে আওলিয়ারহাট বাজারে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে অংশগ্রহণ করছিলেন। সকাল থেকে সারাদিন শান্তিপূর্ন ভাবেই অবস্থান নিচ্ছিলেন। দুপুরের দিকে মিছিল থেকে বাসায় গিয়ে খাওয়া ধাওয়া শেষ করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে বেলা ২ টা ৩০ মিনিটের দিকে সরকার পতনের খবর শুনে বিজয় মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য আবার আওলিয়ারহাট বাজারে যান। ওখানে গিয়ে সবার সাথে দীর্ঘক্ষণ বিজয় মিছিল করে চিৎকার করে বলতে থাকেন স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এক সময়ে বাজারের একটি ফার্মেসীর দিকে আগাতে গেলেই পিছন থেকে ওৎ পেতে থাকা এক দুস্কৃতকারী তাঁর মাথার পিছনে স্বজোড়ে আঘাত করে। আঘাত পেয়ে নুরুজ্জামান মাটিতে পরে গেলে অন্য আরেকজন দুস্কৃতকারী তাঁর কোমড়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। বাজারে উপস্থিত অনেক লোকজনের সম্মুখেই এই ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু আক্রমণ ঠেকাতে কেউ বাধা দেয়নি । প্রতিবেশী ২ জন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। মারাত্নকভাবে আহত নুরুজ্জামানকে মাথায় পানি দিয়ে বাসায় নিয়ে রাখা হয়। বাসায় অবস্থার অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। একদিন রাখার পরে অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাঁকে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে ডাক্তাররা বলেন যে,তাঁর মস্তিষ্কে আঘাত পেয়েছে এবং মগজের আবরন ফেটে গিয়েছে। এমতাবস্থায় তাঁর অপারেশন করার সিন্ধান্ত নিলে ৮ আগস্ট ২০২৪ রাত ৩ টা ২৫ মিনিটে অপারেশন করার আগেই প্রচুর পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁর মৃত্যুতে পুরো পাটগ্রাম উপজেলায় শোকের সৃষ্টি হয়েছিল। আওলিয়ারহাট বাজারে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল। তাঁকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা এখন দিশেহারা। কারণ শহীদ নুরুজ্জামানই ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম। উক্ত ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। শহীদ নুরুজ্জামানের বড় ছেলে হাবিবুর রহমান জানান যে ,হামলাকারীর নামে মামলা করার পরিকল্পনা ছিল । কিন্তু পুলিশ বলছে মামলা করলে লাশ কবর থেকে তুলে আবার ময়নাতদন্ত করতে হবে। বাবার লাশ আবার তুলতে হবে এটা ভেবে আমরা এখনও মামলা করিনি। শহীদ সম্পর্কে অনুভূতি আ: রহীম আওলিয়ারহাট বাজারের একজন মুদি ব্যবসায়ী। শহীদ নুরুজ্জামানের সাথে তাঁর খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিল। শহীদ নুরুজ্জামান ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, নুরুজ্জামান যখন ভ্যান চালাতেন,তখন আমার মুদি দোকানের মালামাল ওর ভ্যানে করেই নিয়ে আসতাম। ভ্যানের ভাড়া নিয়ে কখনও সে আমার সাথে কথা বলেনি। যা ভাড়া দিয়েছি তাই নিয়েছে। প্রতিদিন বাজারে আমার সাথে দোকানে দেখা করতেন এবং ঘরের জন্য বাজার যা লাগতো আমার দোকান থেকেই নিতেন। নুরুজ্জামানের লেনদেন খুব ভালো ছিল। বাজারের কাছেই ওর বাসা হওয়ায় প্রায় সময়ই বাজারের দোকান গুলোতে বসে সবার সাথে আড্ডা দিতেন। কখনও কারও সাথে ঝগড়া-বিবাধে জড়াতেন না। কিন্তু হঠাৎ করে হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে মারা যান। ব্যবসায়ী আ: রহীম পরিকল্পিত এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠ বিচার দাবী করনে। পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা শহীদ মো: নুরুজ্জামান, বয়স ৪৩, পেশায় একজন মোটরসাইকেল চালক। নিজের ছোট্ট মোটরসাইকেলটি ছিল তার জীবনের একমাত্র উপার্জনের উৎস। প্রতিদিন যাত্রী বহন করে যে অল্প আয় করতেন, তা দিয়েই পরিবারের সমস্ত খরচ মেটাতেন। নুরুজ্জামান ছিলেন এক নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি, যার শ্রম ও মেহনতেই তার পরিবারের চাকা ঘুরছিল। তার পরিবারে রয়েছে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। দুই মেয়েকে তিনি বিয়ে দিয়েছেন, কঠোর পরিশ্রম করে বড় ছেলেকে বগুড়ার সৈয়দ আহমেদ কলেজ থেকে অনার্স পাশ করিয়েছেন। যদিও তার বড় ছেলে এখনো কোনো চাকরি পাননি, তবুও তিনি আশা করেছিলেন যে ছেলে একদিন পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবে। ছোট ছেলেটি বর্তমানে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে, তার পড়াশোনা ছিল নুরুজ্জামানের বড় স্বপ্নের অংশ। কিন্তু সেই স্বপ্ন আজ ধূসর হয়ে গেছে। শহীদ নুরুজ্জামান আর বেঁচে নেই। তার মৃত্যুতে পরিবারের উপার্জনের একমাত্র উৎস হারিয়ে গিয়েছে। তার চলে যাওয়ার সাথে সাথে পরিবারের ওপর নেমে এসেছে হতাশার কালো ছায়া। বৃদ্ধ মা প্রতিদিন ছেলের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়েন, স্ত্রী নির্বাক, সন্তানদের ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা যেন তাকে নীরবে গ্রাস করছে। নুরুজ্জামান যে আশার আলো জ্বালিয়ে রেখেছিলেন, তা যেন এখন নিভে গেছে। ছোট ছেলের পড়াশোনা, সংসার চালানোর খরচ, বৃদ্ধ মায়ের ওষুধের টাকা—সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। কীভাবে চলবে তাদের এই সংসার? বড় ছেলে অনার্স পাশ করলেও চাকরির অভাবে পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারছে না।শহীদ নুরুজ্জামানের এই পরিবার আজ এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। যাদের কাছে তিনি একসময় ছিলেন শক্তির প্রতীক, আজ তারাই শূন্যতার ভারে নুয়ে পড়েছে। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্য নাম : মো: নুরুজ্জামান পেশা: মোটর সাইকেল চালক স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: শ্রীরামপুর, পাটগ্রাম, আওলিয়ারহাট, লালমনিরহাট পিতার নাম : মৃত মো: আফিয়ার রহমান, মাতার নাম : মোসা: আছিয়া বেগম, বয়স: ৬৮, পেশা : গৃহিণী আয়ের উৎস : আয়ের উৎস নেই পরিবারের সদস্য সংখ্যা : ৬ জন ভাই বোনের সংখ্যা : ৪, ২ ভাই ২ বোন ১. ভাই মো: হাবিবুর রহমান, বয়স, ২৫ পেশা: শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান : শ্রেণি: মাস্টার্স ভর্তি-ইচ্ছুক ২. মোসা: লামিয়া আক্তার ময়না, বয়স: ২০ পেশা: গৃহিনী ৩. মোসা: নাসরিন আক্তার, বয়স: ১৯ ৪. মো: মারুফ হাসান তাবিব, বয়স ১২ পেশা : শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান : শ্রীরামপুর উচ্চ বিদ্যালয়, ৬ষ্ঠ শ্রেণি ঘটনার স্থান : আউলিয়ারর হাট, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট আক্রমণকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময়কাল : তারিখ- ০৫/০৮/২০২৪, সময়: বিকাল- ৪ টা মৃত্যুর সময় ও স্থান : ০৮/০৮/২০২৪, রংপুর মেডিকেল কলেজ শহীদের বর্তমান কবরস্থান : নিজ বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান প্রস্তাবনা ১. শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক অনুদান প্রদান ২. শহীদের অনার্স পাশ বড় ছেলের ভালো চাকুরীর ব্যবস্থা করে দেয়া

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: নুরুজ্জামান
Image of মো: নুরুজ্জামান
Image of মো: নুরুজ্জামান
Image of মো: নুরুজ্জামান

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

তাহির জামান প্রিয়

মো: রায়হানুল হাসান

মো: সাজু ইসলাম

সাজ্জাদ হোসেন

মো: সুজন হোসেন

মো: মঞ্জু মিয়া

মো: সুমন পাটয়ারী

মো: নয়ন মিয়া

মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

মো: মামুন

মো: ছমেছ উদ্দিন

মো: সাজ্জাদ হোসেন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo