জন্ম তারিখ: ২১ আগস্ট, ২০০৫
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১০ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট
মোহাম্মদ রায়হানুল হাসান, বাংলাদেশের ২য় স্বাধীনতা যুদ্ধে এক অসম সাহসী যোদ্ধা, যিনি ২১ আগস্ট ২০০৫ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার হরিনারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ডাক্তার ফজলে আলম রাশেদ এবং মাতা রেহেনা আক্তার। তিনি ছিলেন তিন বোনের একমাত্র আদরের ছোটভাই। উত্তর হরিনারায়নপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্র ছিলেন শহীদ রায়হান। পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি লেখালেখিও করতেন, খেলাধুলায়ে তিনি ছিলেন বেশ চৌকস। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অনেক পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি। ৫ আগস্ট ২০২৪ তারিখে, ঠাকুরগাঁও রোডের বালিয়াডাংগি মোড়ে এক রাজনৈতিক সংঘর্ষে রায়হানুল গুরুতর আহত হন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সন্ত্রাসী সাঈদ কমিশনার এবং তার সঙ্গীদের আক্রমণের শিকার হয়ে তিনি অগ্নিদগ্ধ হন। ১০ আগস্ট ২০২৪ তারিখে সকাল ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তার মৃত্যু হয়। তার এই বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। রায়হানুলের সাহসিকতা ও শুদ্ধচিত্তের উদাহরণ তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন দেশের ইতিহাসে এক মহান শহীদ হিসেবে, যিনি তার জীবনকে দেশের স্বার্থে উৎসর্গ করেছিলেন। শাহাদাতের ঘটনা কোটা বিরোধী আন্দোলনে শহীদ রায়হানুল ইসলাম প্রথম থেকেই সবগুলো মিটিং মিছিলে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আসছিলেন। ন্যায্য দাবীর এ আন্দোলনে তার বাবা মা উভয়েই শিক্ষিত হওয়ায় কেউ তাকে এ কাজে বারন করেননি বরং উৎসাহ দিয়েছেন। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ৪ আগষ্ট তিনি বাড়ি থেকে আন্দোলনে বেরিয়ে বন্ধুদের সাথে মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। সকাল ১০ টায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশ, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রীদের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংগঠিত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের একটি গুলি তার ডান কান ঘেঁষে চলে যায়, স্থানীয় হাসপাতালে ক্ষতস্থানের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। পরদিন ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের পর তিনি ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি বালিয়াডাঙ্গি মোড়, ঠাকুরগাঁও রোড সাঈদ কমিশনারের বাড়ির কাছে গেলে সাঈদ কমিশনার আন্দোলনকারীদের সাথে বসবে বলে বেশ কয়েকজনকে তার বাড়িতে দাওয়াত করে। এদিকে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল এনে সেই রুমটি তৈরী রাখে আওয়ামী দুর্বৃত্ত সাঈদ কমিশনার। আন্দোলনকারীরা তার রুমে বসলে সাঈদ কমিশনার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দ্রুত সরে পড়ে এবং যাবার সময় আগুন লাগিয়ে দেয়, মূহুর্তেই বিষ্ফোরিত হয় গ্যাস সিলিন্ডার। অগ্নিকুন্ডলিতে পরিণত স্থানটি। আগুনে দগ্ধ হয়ে ভেতরে কাতরাতে থাকে রায়হানুল ইসলাম ও তার সাথীরা। দ্রুত লোকেরা সেখান থেকে আগুনে দগ্ধ ছাত্রদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথিমধ্যেই একজন আন্দলনলকারী মারা যায়, আরও একজন শহীদ হন হাসপাতালে নেবার পর। রায়হানুল ও তার আরেক সাথী রকিকে দ্রুত ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন ইনিষ্টিটিউটে ১০ আগস্ট ভোর ৭ টায় রায়হানুল হাসান শাহাদাত বরণ করেন। ঠাকুরগাঁও নিজগ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হন শহীদ রায়হানুল ইসলাম। তার পিতা ডা: ফজলে আলম রাশেদ দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামীলীগের রোষানলে পড়ে এক বিভীষিকার জীবন যাপন করছিলেন। ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না বাড়িতে। তার একমাত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠনিটি বন্ধ রাখতে হয়েছিল এই সন্ত্রাসী আওয়ামী নির্যাতনের কারণে। তাই পরিবারের হাল ধরতে পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ঔষধের দোকানে বসতে শুরু করেছিলেন শহীদ রায়হান। শহীদ রায়হানুল হাসান এর আলিম পরীক্ষা শুরু হয়েছিল, তবে আন্দোলন ও দেশের পরিবর্তীত রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। স্থগিত হওয়া পরীক্ষা আবার শুরু হয়েছে, কিন্তু পরীক্ষার হলে শহীদ রায়হানের সে সিট ফাঁকাই রইল। মহান আল্লাহ দুনিয়ার সমস্ত পরীক্ষা থেকে মুক্তি দিয়ে নিজের কাছে ডেকে নিলেন। এ ভাবেই শহীদ রায়হানুল হাসান বাংলাদেশের জনগনকে স্বৈরাচারের হাত থেকে মুক্ত করে দিয়ে গেলেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয়র অনুভূতি শহীদের বোনের বক্তব্য অনুযায়ী, তার ভাইটি ছিল পরিবারের জন্য একনিষ্ঠ একজন। মাকে প্রচণ্ড ভালোবাস, বাবার সাথেও ছিল খুব ভালোবাসা, সে ইসলামকে খুবই ভালাবাসতো। বাবা মার কথা মেনে চলতো। এলাকার লোকদের সে সবসময় নামাজের জন্য ডেকে ডেকে মসজিদে নিয়ে যেত। মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলে হিসাবে সবার প্রিয় ছিল সে। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদের পিতা একজন পল্লী চিকিৎসক, আওয়ামী দুঃশাসনে তিনি তার আয়ের জন্য একমাত্র প্রতিষ্ঠান ঔষধের দোকানে ব্যবসায়িক কাজে ঠিকমতো বসতে পারতেন না। পুলিশি ভয় সহ নানা প্রকার উৎপাত করতো আওয়ামী লীগের লোকেরা। সে জন্য তার রোগী দেখা ও ঔষধ বিক্রির কাজ প্রতিনিয়তই বিঘ্নিত হত। প্রায়ই তাকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হতো, রাতে ঠিক মতো বাসায় ঘুমাতেও পারতেন না। এসময় তার শহীদ হওয়া ছেলেটি পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার ব্যবসায়িক কাজে সহযোগিতা করতো। শহীদের পিতা বাহিরে রোগী দেখে মোটামুটি ২০,০০০ টাকার কম বেশী আয় করেন যা দিয়ে তাদের সংসার চলে। প্রস্তাবনা ১. শহীদের বাবাকে স্থায়ী ব্যবসার জন্য পুঁজি দেওয়া যেতে পারে ২. নিয়মিত ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: রায়হানুল হাসান জন্ম তারিখ : ২১-০৮-২০০৫ পিতা : ডাক্তার ফজলে আলম রাশেদ মাতা : রেহেনা আক্তার স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: হরিনারায়ণপুর , ইউনিয়ন: ১১ নং মুহাম্মদপুর, থানা: ঠাকুরগাঁও, জেলা: ঠাকুরগাঁও পেশা : ছাত্র (আলিম পরীক্ষার্থী) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : হরিনারায়নপুর সিনিয়র আলিম মাদরাসা ঘটনার স্থান : বালিয়াডাংগি মোড়, ঠাকুরগাঁও রোড, সাঈদ কমিশনারের বাড়ি আহত হওয়ার সময়কাল : ০৫-০৮-২০২৪, বিকাল ৫টা (আনুমানিক) শাহাদাতের সময়কাল : ১০-০৮-২০২৪, সকাল ৭টা, শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট আঘাতের ধরন : অগ্নিদগ্ধ আক্রমণকারী : আওয়ামীলীগ নেতা সন্ত্রাসী সাঈদ কমিশনার ও তার সাঙ্গপাঙ্গ