Image of মো: সাহান পারভেজ

নাম: মো: সাহান পারভেজ

জন্ম তারিখ: ৩ মার্চ, ২০০৪

শহীদ হওয়ার তারিখ: ৬ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র, শাহাদাতের স্থান : রংপুর মেডিকেল কলেজ

শহীদের জীবনী

২০০৪ সালের ৩ মার্চ ঠাকুরগাঁও জেলার ৮নং রহিমনপুর ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন মো: সাহান পারভেজ। মৃত সইফ উদ্দিন ও মোসা: মর্তেজা বেগমের সুযোগ্য সন্তান।একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবে ঠাকুরগাঁও সদরের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। খেলাধুলায়ও তিনি বেশ চৌকস ছিলেন।জুলাই ২০২৪ সালে দেশব্যাপী যে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, সাহান সেই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ছাত্রজনতার প্রতিরোধে টিকতে না পেরে দুর্বৃত্ত হাসিনা তার বোন শেখ রেহানা সহ ভারতে পালিয়ে গেলে জনগণ বিজয় মিছিল বের, সাহানও তাতে অংশগ্রহণ করে। মিছিলের একপর্যায়ে ঠাকুরগাঁও রোড সাঈদ কমিশনারের বাড়ির সামনে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে তিনি আহত হন। তাকে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে ৬ আগস্ট রাত ১২ টায় তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সাহানের মৃত্যুতে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং সমগ্র জাতি শোকাহত। তার শাহাদাত যুগে যুগে দাবি আদায়ের লড়াইয়ের সৈনিকদের প্রেরণা জোগাবে। রবের কাছে তার আত্মার উচ্চমর্যাদা কামনা করি এবং আল্লাহ যেন তার পরিবারকে এই কঠিন সময় মোকাবিলা করার শক্তি দান করেন। আমিন। শাহাদাতের প্রেক্ষাপট শহীদ মো: সাহান পারভেজ। মেধাবী, চঞ্চল ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী সাহান পারভেজ ছোট বেলা থেকেই মা বাবার আদরের। পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় এলাকার সবাই তাকে খুব ভালোবাসতো। শিক্ষকদেরও প্রিয় ছিলেন তিনি। সাহান এইচ এস সি পাশ করে ঢাকা কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পরিবারের স্বপ্ন ছিল সে পড়ালেখা শিখে বড় মানুষ হবে, পরিবারের দুঃখ কষ্ট দূর করবে। কিন্তু তাঁর মৃত্যুতে যেন সব থেমে গেল। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানাভাবে দেশের মানুষের মাঝে বিভেদের দেয়াল রচনা করে। এমনই এক দেয়াল ছিলো সরকারী চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক কোটাপ্রথা, যে দেয়াল ভাঙ্গার সাধ্য কারোরই ছিল না। অবশেষে ২০১৮ সালে ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কোটাপ্রথা বাতিল করে। কিন্তু আন্দোলন চলে গেলে ২০২৪ সালে পুনরায় বিনা ভোটে অনির্বাচিত সরকার আবারো ক্ষমতায় এসে সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে বাতিল হও্য়া কোটাপ্রথা পূনর্বহাল করে। এতে ক্ষিপ্ত হয় সাধারণ ছাত্র-জনতা পুনরায় আন্দোলনে নামে। আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সরকারকে নানা আল্টিমেটাম দেয়া হয় কিন্তু সরকার কোন ভ্রুক্ষেপও করে না। আন্দোলনকে শেষ করে দেও্য়ার উদ্দ্যেশ্যে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার ব্যাপক দমননীতি অবলম্বন করে। এক পর্যায়ে সরকার ছাত্র হত্যায় মেতে উঠলে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি তখন ১ দফায় নেমে আসে। সরকার কারফিউ জারী ও ইন্টারনেট শাটডাউন করে পুরো দেশকে অন্ধাকারে ঠেলে দেয়। চলতে থাকে গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও পাইকারিহত্যা। এক পর্যায়ে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বেরিয়ে আসে রাজপথে, খুনি হাসিনা জনগনের ভয়ে ভারতে পালিয়ে যায় ক্ষমতা ছেড়ে।। আর সে দিনটি ছিল “৩৬শে জুলাই” তথা ৫ আগস্ট ২০২৪। সারা দেশে তখন আনন্দের জোয়ার, মিষ্টি খাবার ধুম। ঠিক সে সময় ঠাকুরগাঁয়েও স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে বিজয় মিছিলে বের করে ছাত্র-জনতা, সাহানও তাতে অংশগ্রহণ করে। মিছিলটি বালিয়াডাঙ্গি মোড়, ঠাকুরগাঁও রোড সাঈদ কমিশনারের বাড়ির কাছে গেলে সাঈদ কমিশনার আন্দোলনকারীদের সাথে বসবে বলে বেশ কয়েকজনকে তার বাড়িতে দাওয়াত করে। এদিকে পূর্ব থেকে পরিকল্পিতভাবে গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল এনে সেই রুমটি তৈরী রাখে। আন্দোলনকারীরা তার রুমে বসলে সাঈদ কমিশনার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা দ্রুত সরে পড়ে এবং যাবার সময় আগুন লাগিয়ে দেয়। মূহুর্তেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। আগুনে দগ্ধ হয়ে ভেতরে কাতরাতে থাকে সাহান ও তার সংগীরা। জনগণ সেখান থেকে আগুনে দগ্ধ লোকেদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। পথিমধ্যে একজন ও হাসপাতালে পৌঁছানোর পর আরও একজন অগ্নিদগ্ধ শহীদ হন। সহান কে উদ্ধার করে দ্রুত নিয়ে যাওয় হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তার শরীরের ৯০% আগুনে পুড়ে গিয়েছিল। অবশেষে ৬ আগস্ট রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জালড়া সাহসী বীর ‘২৪ এর যোদ্ধা রাত ১২ টায় শেষ নি:শাস ত্যাগ করেন। মহান আল্লাহ তায়ালা তাঁকে নিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। কি নির্মম ও পৈশাচিক ও বীভৎস ছিল এই মৃত্যুটি যা শুনলে সাধারণ মানুষের গা শিউরে উঠে। এলাবাসী সবাই এর কঠিনতম বিচার দাবী করেছেন। শহীদ সম্পর্কে নিকটাত্মীয় ও বন্ধুর বক্তব্য ১. শহীদের বড় ভাই বলেন, সাহান তাদের পরিবারের একমাত্র আলোকবর্তিকা ছিল। কারণ তার কলেজে রেজাল্ট খুব ভালো। তাকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন ছিল, সে একদিন বড় হয়ে কষ্টের এই সংসারের হাল ধরবে কিন্তু কি হতে কি হয়ে গেলো। আমাদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো। সে বলতো, “আমি ঢাকা গিয়ে কিছু একটা করবো। পরিবারের হাল ধরবো, তোমার চোখের চিকিৎসা করাবো”। ২. প্রতিবেশি একজন জানান, পড়াশোনায় খুব ভালো এবং খেলাধুলা প্রিয় ছিল সাহান। আন্দোলনে তার জীবন গেছে, আমরা এলাকার মেধাবী ও ভদ্র একটি ছেলেকে হারালাম। পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার বিবরণ শহীদ মো: সাহান পারভেজ এইচএসসি পাশ করে ঢাকা কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য অপেক্ষমান ছিলেন। তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস হিসেবে তাঁকে পরিবার তৈরী করছিল। তার বাবা সুগারমিলে চাকুরী করতেন, তার মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরেন শহীদের অসুস্থ বড় ভাই। তিনি দীর্ঘদিন চোখের অসুখে ভুগছেন। মহাজনের সাথে বস্তা উঠানোর কাজ করে মাসে ১০,০০০/- টাকার মতো আয় করে সংসার চালান। এছাড়াও তার পিতা সুগারমিলে চাকুরীকালীন অবস্থায় বাড়ি তৈরীর জন্য দুই লক্ষ টাকা ঋণ করেন। ছেলেরা এখনো সেটা পরিশোধ করতে পারেননি। বাড়ির কাজও বাবার মৃত্যুর পর অসম্পূর্ণ থেকে যায়। প্রস্তাবনা ১. বাড়ির কাজ সম্পন্ন করার জন্য সহযোগিতা করা যেতে পারে। ২. শহীদের বড় ভাইকে তার অসুস্থতার জন্য চিকিৎসা ও ব্যবসার জন্য পুঁজির যোগান দেওয়া যেতে পারে। ৩. অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচ বহন করা। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: সাহান পারভেজ জন্ম তারিখ : ০৩-০৩-২০০৪ পিতা : মৃত সইফ উদ্দিন মাতা : মোসা: মর্তেজা বেগম স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: হরিহরপুর, ইউনিয়ন: ৮ নং রহিমনপুর , থানা: ঠাকুরগাঁও সদর, জেলা: ঠাকুরগাঁও পেশা : ছাত্র (স্নাতক ভর্তিচ্ছু) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ (এইচ এস সি পর্যন্ত) ঘটনার স্থান : বালিয়াডাংগি মোড়, ঠাকুরগাঁও রোড, সাঈদ কমিশনারের বাড়ি আহত হওয়ার সময়কাল : ৫-৮-২০২৪, বিকাল ৫ টা (আনুমানিক) শাহাদাতের সময়কাল : ৬ আগস্ট রাত ১২:০০টা, রংপুর মেডিকেল কলেজ আঘাতের ধরন : অগ্নিদগ্ধ আক্রমণকারী : আওয়ামী সন্ত্রাসী সাঈদ কমিশনার এবং তার সাঙ্গুপাঙ্গ শহীদের কবরের বর্তমান অবস্থান : মাদাডাঙ্গি পারিবারিক কবরস্থান।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: সাহান পারভেজ
Image of মো: সাহান পারভেজ

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

মো: জোবায়ের হোসেন

মো: জাহিদুর রহমান

মো: জাহিদুল ইসলাম

রুদ্র সেন

মো: সুজন হোসেন

মো: সোহাগ

মো: ছমেছ উদ্দিন

আবু সাঈদ

মো: রাশেদুল হক

মানিক মিয়া

মো: শাহিনুর আলম

আশাদুজ্জামান নূর সূর্য্য

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo