জন্ম তারিখ: ৫ মে, ১৯৭৮
শহীদ হওয়ার তারিখ: ২০ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: ঢাকা_সিটি
পেশা: রিক্সা চালক, শাহাদাতের স্থান : রামপুরা
দেশের ক্রান্তিকালে দেশের পক্ষে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষ। শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণ ভুলে সবার পরিচয় হয়ে যায় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্ত্র প্রহরী। শহীদ ইসমাইলও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাই দেশের চরম সংকটকালীন মুহূর্তে মুক্তিকামী মানুষের সাথে রাজপথে নেমে এসেছিলেন তিনি। শহীদ ইসমাইল পেশায় রিকশা চালক। তার বাবার নাম মো: ইব্রাহিম মিয়া, মা সাফিয়া খাতুন। জন্ম ১৯৭৮ সালের ৫ মে। তার জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর থানার উজানচর ইউনিয়নের নতুনহাটি গ্রাম। সেখানেই তার বেড়ে ওঠা। পরে রুটি রুজির সন্ধানে চলে আসেন ঢাকায়। বাড্ডা রামপুরা এলাকায় একটি ঝুপড়ি বাড়িতে তিনি পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতেন। তার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়েরা বিবাহিত। ছেলেটি একটি হেফজখানায় পড়ে। গ্রামের বাড়িতে তার বসতভিটা ছাড়া আর কোনো জমা-জমি নাই। স্ত্রী লাকী। ইসমাইল মিয়া ৪র্থ শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। ১৯ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি স্বৈরাচারের ঘাতক বিজিবির গুলিতে আহত হন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই শাহাদাত বরণ করেন। ঘটনার বিস্তারিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ইসমাইল থাকতেন রাজধানীর বাড্ডায়। প্রতিদিন ভাড়া রিক্সা নিয়ে বের হতেন। জীবিকার তাগিদে ১৯ জুলাইও বের হয়েছিলেন রিক্সা নিয়ে। সেদিন ঢাকার রাজপথে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। আন্দোলন চলছিল রামপুরা- ডেমরা সড়কেও। এসময় বিটিভি ভবনের পাশ থেকে আন্দোলনকারীদের দিকে নির্বিচারে গুলি করে পুলিশবাহিনী। পুলিশের নির্বিচারে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপের পাশাপাশি আরো যোগ দেয় আওয়ামী সন্ত্রাসী বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হয়ে ওঠে ঘাতক বাহিনী। ইসমাইল রিক্সা চালিয়ে যেতে যেতে দেখেন চারদিকে আহত, গুলিবিদ্ধ মানুষ। নিজের কথা ভুলে যান। রিক্সা থামিয়ে লেগে যান আহতদের পরিচর্যায়। আহতদের পানি পান করান। এভাবে কেটে যায় দুপুর। আহতদের হাসপাতালে পাঠাতে উদ্যোগী হন। স্বৈরাচারের বুলেট গর্জে ওঠে। বিজিবির একটি বুলেট বিদ্ধ করে ইসমাইলের মাথায়। সাথে সাথেই রামপুরার রাজপথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন মো: ইসমাইল মিয়া। ২০ জুলাই সকাল ৮ টায় নিজ গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়। পারিবারিক অবস্থা শাহাদাতের সময় শহীদ ইসমাইল তার দুই মেয়ে, এক ছেলে ও স্ত্রী রেখে গেছেন। মেয়ে সানজিদা ও তানজিলা বিবাহিত। ছেলে রামিন হেফজখানার ছাত্র। গ্রামের বাড়িতে শুধু তার বসতভিটা আছে। আর কোনো জমি নাই। রাজধানী উলন রামপুরা এলাকায় থাকতেন একটি ঝুপড়ি বাড়িতে। তার স্বল্প আয়েই চলত সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম পুরুষ ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি ঋণ করেছিলেন ৫০ হাজার টাকা। নিজের কোনো রিক্সা ছিল না। ভাড়া রিক্সা চালাতেন। আত্মীয়দের মন্তব্য: স্ত্রী লাকি তার স্বামীকে তার জীবনের সবচেয়ে ভালো একজন মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেন। আর মেয়ে সানজিদা বলেন, “আমার বাবা একজন নরম দিলের মানুষ ছিলেন। সবসময় আমাদের খোঁজ খবর রাখতেন, যত্ন নিতেন। তার ছিল অমায়িক ব্যবহার। বাবার মতো এমন মানুষ আমরা কোথায় পাব? আমরা আমাদের বাবার হত্যাকারীর বিচার চাই।” সহযোগিতার প্রস্তাবনা প্রস্তাবনা-১ শহীদের পরিবারকে এককালীন অনুদান দেওয়া উচিত। তারপর প্রতি মাসে একটি সংসার চলার মতো ভাতার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রস্তাবনা-২ তার সন্তানের লেখাপড়ার জন্য শিক্ষা ভাতা দেওয়া দরকার। চিকিৎসা ভাতা ও ফ্রী চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। প্রস্তাবনা-৩ ঢাকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য একটি জমি ও বাসা বরাদ্দ দেওয়া হোক। এক নজরে শহীদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী নাম : মো: ইসমাইল জন্ম : ০৫-০৫-১৯৭৮ পিতা : মৃত মো : ইব্রাহিম মিয়া মাতা : মৃত সাফিয়া খাতুন স্ত্রী : লাকী, সন্তান : দুই মেয়ে, এক ছেলে শিক্ষা : ৪র্থ শ্রেণি পেশা : রিক্সা চালক স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নতুন হাটি, ইউনিয়ন: উজানচর, থানা : বাঞ্জারামপুর, জেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া বর্তমান ঠিকানা : হোল্ডিং নং ৬/১১, বাড্ডা উলন, রামপুরা, উত্তর সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা আহত : মাথায় গুলিবিদ্ধ গুলিকারী : বিজিবি আহত হওয়ার সময় : ১৯ জুলাই ৫.৩০ মিনিট, স্থান : রামপুরা, ঢাকা জানাজা দাফন : ২০ জুলাই ২০২৪, রাত: ৮টা কবর : নিজ গ্রামের পারিবারিক কবরস্থান
নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করেছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে, মারে ও মরে। (সুরা তাওবা ৯:১১১)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে শহীদ হতে চায়, আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দেন।” (সহীহ মুসলিম ১৮৮৯)


