Image of মো: রাকিবুল হাসান রকি

নাম: মো: রাকিবুল হাসান রকি

জন্ম তারিখ: ১ নভেম্বর, ১৯৯৫

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১০ আগস্ট, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা: ছাত্র এবং পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যাবসা, শাহাদাতের স্থান : ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে

শহীদের জীবনী

মো: রাকিবুল হাসান রকি ১ নভেম্বর ১৯৯৫ সালে ঠাকুরগাঁও জেলার সদর থানার ৮ নং রহিমানপুর ইউনিয়নের আরাজী পাইকপাড়া গ্রামে এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মো: জাকির হোসেন (৫৫) একজন কাঁচামাল ব্যাবসায়ী, মা মোসা: রিক্তা বেগম (৪০) একজন গৃহিণী। তার মা এবং বাবা উভয়ই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। রাকিবুলের বাবার মূলত হাইপ্রেসার এবং ওনার কাশির সাথে রক্ত আসে এবং মায়ের হরমোনের ও ডায়াবেটিকসের সমস্যা। কাঁচামালের ব্যাবসা করে মাত্র দশ হাজার টাকা আয় হয় যার মধ্যে সাত হাজার টাকা তার বাবা এবং মায়ের চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়। বাকি টাকা দিয়ে কোনোরকমে ৫ সদস্যের পরিবারে জীবন যাপন করে তারা। পারিবারিকভাবে সামান্য কিছু কৃষি জমি থাকলেও সেখান থেকে কোনরকমে বছরের ভাত আসে। রাকিবুল তার পরিবারকে স্বচ্ছল করার জন্য প্রায়শই তার বাবার ব্যাবসা দেখাশোনা করত। এর পাশাপাশি রাকিবুল শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে অনার্স করছিল। সামগ্রিক বর্ননা ৫ জুলাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা বিরোধী কর্মসূচি পালন করতে থাকে। দিনের পর দিন চলে গিয়েছে কিন্তু স্বৈরাচারী আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ছাত্র-ছাত্রীদের কথায় কর্ণপাত করেনি। যার ফলে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ রুপ নেয় শান্তিপূর্ণ মিছিলে। ১৫ জুলাই গুণ্ডা বাহিনী সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এমনকি তারা ছাত্রীদেরকে নির্মমভাবে রক্তাক্ত করে। হল বন্ধ করে দিয়ে তারা ঘাতক পুলিশের সাহায্যে শিক্ষার্থীদের উপর ব্যাপক হামলা চালিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি ক্যাম্পাসকে রক্তে রঞ্জিত করে। নির্মমভাবে তারা শিক্ষার্থীদের হত্যা করে এবং মাটিচাপা দিয়ে রাখে। পরবর্তীতে এই সরকার দেশের প্রতিটি যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট করে দেয়, বিশেষ করে ইন্টারনেট পরিসেবা বন্ধ করে দেয়, গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় কারফিউ জারির মাধ্যমে। ১৫ বছর থেকে মৌলিক অধিকার না পেয়ে আসা জণগণ আরও বেশি অধিকার হারা হয়। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ রাগে ফেটে পড়ে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের উপর। সেরকমই রাকিবুল হাসানও আর ঘরে বসে থাকতে পারেনি। আন্দোলন শুরুর প্রথমদিন থেকেই সক্রিয় ভাবে জড়িয়ে পড়েন। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার গুণ্ডা পুলিশবাহিনী আন্দোলনকারীদের উপর এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। সেদিন সেই ছাত্র আন্দোলনে রাকিবুলও ছিল। একে একে তেরোটি রাবার বুলেটের আঘাতে জর্জরিত হয় সে। কিন্তু দমাবার পাত্র রাকিবুল নয়। শরীরের তীব্র ব্যাথা নিয়ে ৫ আগস্ট আবারো আন্দোলনে যায়। সেদিন দুপুর ১২ টায় অন্যান্যদের মতো সেও শুনতে পায় ক্ষমতালিপ্সু হাসিনার পদত্যাগের কথা। তারপরে সেদিনের বিজয় মিছিলে যোগ দেয় রাকিবুল। মিছিলটি বালিয়াডাঙ্গি মোড় ঠাকুরগাঁও রোড এর সামনে সাঈদ কমিশনারের বাড়ির সামনে গেলে সাঈদ কমিশনার কয়েকজন আন্দোলনকারীদের সাথে বসবে বলে প্রস্তাব করে। এতে সরল মনে রাকিবুল সহ কয়েকজন আওয়ামী গোলাম সাঈদ কমিশনারের কথা বিশ্বাস করে তার সাথে তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। এদিকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সাঈদ কমিশনার ও তার ভাই গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল এনে রুমটি প্রস্তুত করে রাখে। সুযোগ বুঝে সাঈদ কমিশনার সেখানে আগুন লাগিয়ে দেয়। গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল থাকাতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। রাকিবুল সহ অনেকেই আহত হয়। জরুরি ভিত্তিতে রাকিবুলকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় অন্যান্য আন্দোলনকারীরা। কিন্তু রাকিবুলের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হতে থাকলে তাকে ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করে দেয়া হয়। সেখানে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে সে। অবশেষে ১০ আগস্ট ভোর ৪ টায় মহান রব্বুল আলামীন রাকিবুলের কষ্ট লাঘব করে না ফেরার দেশে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে ঠাকুগাঁওয়ে তার নিজ গ্রামে জানাজা এবং দাফন করা হয়। রাকিবুল ছিল একজন সত্যিকারের যোদ্ধা এবং বাবা মায়ের গর্বিত বীর সন্তান। নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি প্রতিবেশী মোঃ হানিফ হোসেন এই বীর সম্পর্কে বলেন, 'শহীদ রাকিবুল ছিল পরোপকারী নিবেদিত প্রাণ একজন সমাজকর্মী। যেকোনো প্রকার কাজে তার নান্দনিকতার ছোঁয়া। এমন পরোপকারী মানুষকে হারিয়ে আমরা ব্যাথিত। যারা এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত আমরা তাদের বিচারের দাবী জানাই।' প্রস্তাবনা শহীদ পরিবারকে এককালীন আর্থিক সাহায্য প্রদান। পরিবারের যাবতীয় চিকিৎসার খরচ বিনামূল্যের ব্যবস্থা করা। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : মো: রাকিবুল হাসান রকি জন্ম তারিখ : ১ নভেম্বর ১৯৯৫ বাবার নাম : মো: জাকির হোসেন মায়ের নাম : মোছা: রিক্তা বেগম পেশা : ছাত্র এবং পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যাবসা পরিবারের সদস্য : ৫ জন স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: আরাজী পাইকপাড়া, ইউনিয়ন: ৮ নং রহিমানপুর, থানা: সদর, জেলা: ঠাকুরগাঁও আঘাতকারী : সাঈদ কমিশনার, তার ভাই ও তার সন্ত্রাসী ছেলে ঘটনার সময় ও স্থান : ৫ আগস্ট, ২০২৪, বিকাল: ৫টা, সাঈদ কমিশনারের বাড়িতে মৃত্যুর তারিখ ও সময় : ১০ আগস্ট, ২০২৪, ভোর ৪টায়, ঢাকার শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রাকিবুল হাসান রকি
Image of মো: রাকিবুল হাসান রকি
Image of মো: রাকিবুল হাসান রকি
Image of মো: রাকিবুল হাসান রকি

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আব্দুল লতিফ

মো: সাগর রহমান

মো: রবিউল ইসলাম রাহুল

বদিউজ্জামান

মো: রুবাইদুজ্জামান রেজওয়ান নাইম

মোহাম্মদ আশিকুল ইসলাম

মো: আজিজুল ইসলাম

রুদ্র সেন

মো: সাজ্জাদ হোসেন

হাফেজ মো: নাসির ইসলাম

মো: নুর আলম

মো: আল মামুন

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo