জন্ম তারিখ: ১ জানুয়ারি, ১৯৭৯
শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা: ব্যবসায়ী, শাহাদাতের স্থান : ঢাকা মোহাম্মদপুর
“হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলি মাথার খুলি খন্ড খন্ড করে দিল শহীদ আবু ছায়েদের” শহীদ মো: আবু ছায়েদ ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ সালে পঞ্চগড় জেলার বোদা থানার ৬ নং মারিয়া ইউনিয়নের নতুন বস্তি নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পেশায় একজন ব্যাবসায়ী ছিলেন। আবু ছায়েদের পিতা আব্দুল খালেদ (মৃত) পেশায় একজন কৃষক ছিলেন এবং মাতা সোনাবান (মৃত) ছিলেন একজন গৃহিণী। ৮ ভাইবোনের মধ্যে ছায়েদ দ্বিতীয় ছিল। ৮ ভাই-বোনের পরিবার তার বাবা মা অভাবের মধ্যেই পরিচালনা করেছেন। শহীদের পরিবার তার ৮ ভাইবোনদের মধ্যে ছয় ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান এবং তার বোন গৃহিণী। ছায়েদ অভাব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরে আসেন এবং ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে তার ব্যবসা বড় হয়। ছায়েদের দুই স্ত্রী ছিল। প্রথমজন তার সন্তান নিয়ে গ্রামেই বসবাস করেন এবং দ্বিতীয়জন ছায়েদের সাথে ঢাকায় বাস করেন। ছায়েদ ব্যবসা করে মাসে যা আয় করতেন তা থেকে কিছু অংশ গ্রামে প্রথম স্ত্রীর কাছে পাঠাতেন। এতে তার স্ত্রী এক ছেলে সন্তান নিয়ে তাদের সংসার সুখেই কাটাচ্ছিলেন। ছায়েদ তার দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে ঢাকাতে ভালোই ছিলেন। কিন্তু তাদের সুখের সংসার তছনছ হয়ে যায় ছায়েদের শাহাদাতের মাধ্যমে। শহীদ হওয়ার ঘটনা জুলাই আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যেসব নির্দোষ নিরীহ শিশু, মহিলা পুরুষ ছাত্র-ছাত্রী প্রাণ হারায় তাদের মধ্যে ছায়েদ অন্যতম। ৫ জুলাইয়ের কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হলে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের দিকে একটিবারের জন্যও নজর ফেরায়নি। শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের স্বৈরশাসকের নজরে আসার জন্য একের পর এক সমাবেশের ডাক দেন। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমাবেশে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের ছাত্রনামক গুন্ডা নির্মমভাবে আঘাত করতে থাকে। তার উপরে আবার হাসিনার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে বিরক্ত হয়ে হয়ে ছাত্র-জনতা তাদের মুখের উপরেই দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। বিশেষ করে ১৫ জুলাই বিকাল ৪ টায় যখন এক সাংবাদিকের প্রশ্নে সাইকো হাসিনা বলে, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিদের দিব.' তার এই বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে সেইদিন রাতেই শিক্ষার্থীরা তুমুল আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীরা, 'তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার' এই স্লোগান দেয়ায় গুণ্ডা বাহিনী ছাত্রলীগ শিক্ষার্থীদেরকে নির্মমভাবে মারতে থাকে। এরপর থেকে আন্দোলন আরও তীব্র হলে যখন আর শেখ হাসিনার পুলিশলীগ, গুণ্ডা ছাত্রলীগেরা শিক্ষার্থীদের ঠেকাতে ব্যর্থ হয় তখন ১৯ জুলাই জালিম শেখ হাসিনা র্যাবকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালাবার নির্দেশ দেয়। তারা যখন হেলিকপ্টার থেকে বৃষ্টির মত গুলি ছুড়তে থাকে তখন মানুষজন পাখির মত মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকে। এমনকি অবুঝ শিশুরা আনন্দিত মনে বিমান দেখার জন্য ছাদে যায় তাদেরকেও গুলি লেগে সেখানেই মৃত্যুবরণ করতে থাকে। এসময় ছায়েদের দোকানের জন্য পলিব্যাগের প্রয়োজন পড়লে তিনি পাশেই একটি দোকানে আনতে যান। তখন হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের ছোড়া গুলির মধ্যে একটা বুলেট হঠাৎ ছায়েদের মাথার খুলি ভেদ করে ঢুকে যায়। আরেকটি গুলি তার পায়ে লাগে। সেখানেই তিনি পড়ে যান এবং মৃত্যু ঘটে। তার লাশ যখন ঢাকার মোহাম্মদপুরে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তখন সেটা দেখে তার স্ত্রী আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেনি। সেখানেই অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোদাতে নিয়ে আসা হয়। গ্রামজুড়ে এক কান্নার রোল পড়ে যায়। এরপর জানাজা শেষে তার নিজ গ্রাম বোদাতেই কবরস্থ করা হয়। নিকটাত্মীয়দের অনুভূতি ছায়েদের প্রতিবেশিরা ছায়েদ সম্পর্কে বলেন ু কি দোষ ছিল ছায়েদের? সে ত অত্যন্ত নিরীহ ব্যাক্তি ছিল। কারও কোনো ক্ষতি করেনি সে। যদি কোনো গরীব মানুষ তার কাছে সাহায্য চাইত সাধ্য অনুযায়ী সে দিত। অত্যন্ত ভালো মানুষ ছিল ছায়েদ। এই বলে এলাকাবাসীরা খুনি শেখ হাসিনার কঠোর বিচারের দাবি করেন। অনেকে আবার মহান রবের দরবারে বিচারের ভার দেন। প্রস্তাবনা ছায়েদের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তিই ছিলেন ছায়েদ। তার মৃত্যুতে দুই স্ত্রীই পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। একমাত্র ছেলে মামুন ইসলাম (১৫) এতিম হয়ে যায়। ছায়েদের মৃত্যুতে আর্থিক কষ্টে ভুগছে তার দুটি পরিবার। সাহায্যের জন্য তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে অন্যের দিকে। অসহায় স্ত্রী সন্তানকে অন্তত আর্থিক সাহায্য করা যেতে পারে। এমন কোনো ব্যাবস্থা করে দেয়া যাতে অন্যের দিকে না তাকিয়ে থাকতে হয়। এছাড়াও তার মৃত্যুর আগে ঋণে রয়েছে ১৫০,০০০ টাকা। যা পরিশোধ করা দরকার। এক নজরে শহীদের ব্যাক্তিগত তথ্য নাম : আবু ছায়েদ জন্ম তারিখ : ১ জানুয়ারি ১৯৭৯ বাবার নাম : আব্দুল খালেক (মৃত) মায়ের নাম : সোনাবান পেশা : ব্যবসায়ী পরিবার : দুই স্ত্রীও এক ছেলে স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: নতুন বস্তি, ইউনিয়ন: মারিয়া ৬নং, থানা: বোদা, জেলা: পঞ্চগড় বর্তমান ঠিকানা : ঐ ঘাতক : স্বৈরাচারী হাসিনার র্যাব বাহিনী ঘটনার সময় ও স্থান : ঢাকা মোহাম্মদপুর ১৯ জুলাই ২০২৪ মৃত্যুর সময় ও স্থান : ঐ