জন্ম তারিখ: ২ এপ্রিল, ২০০৪
শহীদ হওয়ার তারিখ: ৫ আগস্ট, ২০২৪
বিভাগ: রংপুর
পেশা:স্পার্ট অনলাইন ডিস সংযোগ অফিসে চাকুরী, শাহাদাতের স্থান : বাড্ডা থানার সামনে
২০২৪ স্বৈরাচার পতনের গণঅভ্যুত্থানে নিহত হওয়া শহীদদের অন্যতম মো: সাগর রহমান। তিনি শহীদ হন ৫ আগস্ট বিজয়ের দিনে। সাগর এর জন্ম ২ এপ্রিল ২০০৪ সালে পঞ্চগড় জেলা সদরের অন্তর্গত চাকলাহাট ইউনিয়নের কিত্তিনিয়া গ্রামে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন সাগর রহমান। তাঁর পিতার নাম মো: রবিউল ইসলাম (৫৫)। পেশায় তিনি একজন গরু ব্যবসায়ী। মাতা মোসা: সখিনা খাতুন (৪২) একজন গৃহিণী।বড় দুঃখের বিষয় শহীদ সাগর রহমানের বয়স যখন মাত্র ১০ মাস, বাবা রবিউল ইসলাম তাঁর মাকে তালাক দেন। কারণ ছিল শহীদের মা মানসিক ভারসাম্যহীন। এমন পরিস্থিতিতে শহীদ সাগর রহমানের নানী মেয়ে ও ছোট নাতিকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন। ছোটবেলা থেকেই নানির বাড়িতে বড় হতে থাকেন সাগর রহমান। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ে ও ছোট নাতিকে নিয়ে দুঃখ দুর্দশার মধ্যে দিন কাটতো অভাবী নানীর। বিভিন্ন জায়গা হতে যা সহযোগিতা পেতেন তাই দিয়ে সংসার চালিয়েছেন নানী। সাগর রহমানের বয়স যখন ছয় বছর তখন এক প্রতিবেশির সহায়তায় স্থানীয় বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি করানো হয় তাঁকে । বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পেরেছিলেন সাগর রহমান। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় বিশেষ করে পারিবারিক দারিদ্রতা, মায়ের মানসিক সমস্যা , সুযোগ সুবিধার অভাব ইত্যাদি নিয়ে পরীক্ষায় বসলেও দুই বিষয়ে অকৃতকার্য হন শহীদ সাগর রহমান। পড়াশোনার পাঠ চুকাতে হয় শহীদ সাগর রহমানকে। সংসারে ভারসাম্যহীন মা ও নানির চিকিৎসার খরচ জোগাতে এবং পরিবারের হাল ধরতে বড় মামার সহযোগিতায় ২০২২ সালে ঢাকায় এসে স্পার্ট অনলাইন (ঝঢ়ধৎঃ ড়হষরহব) ডিস সংযোগ অফিসে চাকরি নেন সাগর রহমান। মেরুল বাড্ডায় একটি টিনশেডের ভাড়া বাসায় মা সহ থাকতেন সাগর রহমান। মেরুল বাড্ডায় ডিস সংযোগ অফিসে চাকরির সুবাদে অফিসের লোকজন এবং স্থানীয় বিভিন্ন লোকজনের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে সাগর রহমানের । তাদের থেকে কিছু অনুদান পেয়ে এবং ডিসলাইনে চাকরির টাকা দিয়ে অসুস্থ মা এবং অসুস্থ নানির চিকিৎসা সহ সকল বিষয়ে দেখাশোনা তাকেই করতে হয়। শহীদ হওয়ার ঘটনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা, ১৮ জুলাই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে মামাতো ভাই সজিবের সাথে মেরুল বাড্ডার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন সাগর। সাগর রহমান ছিলেন সম্মুখ সারির সাহসী যোদ্ধা। পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের কর্মসূচিতে মামাতো ভাই সজীব ও বন্ধুবান্ধবসহ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন শহীদ সাগর। ঘটনার দিন ৫ আগস্ট ২০২৪, স্বৈরাচার সরকার বিরোধী এক দফা আন্দোলন চুড়ান্ত পর্যায়ে। মেরুল বাড্ডা এলাকায় পেটোয়া পুলিশলীগ ও স্বৈরাচারী সরকারের পালিত র্যাব ও বিজিবির নৃশংসতার কারণে ছাত্র-জনতা বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান করেছিলেন। শহীদ সাগর রহমান ও তার বন্ধুবান্ধবরাও একটি নির্মানধীন ভবনের নিচে অবস্থান করেছিলেন। বেলা ১২ টার দিকে অফিস থেকে ফোন আসলে সাগর রহমান অফিসে চলে যায়। এদিকে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশের সকল রাস্তায় ছাত্র-জনতার ঢল দেখে ভয় পেয়ে যায় ফ্যাসিবাদী সরকার। যখন লক্ষ লক্ষ ছাত্র-জনতা গণভবনে হামলা করতে যায় তখন প্রায় বেলা ২ টার দিকে তৎকালীন স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ ও পলায়নের খবর শুনে পুরো বাড্ডা এলাকা সহ পুরো বাংলাদেশে বিজয় মিছিল শুরু হয়। তৎক্ষণাৎ সাগর অফিস থেকে ছুটি নিয়ে, ছাত্র-জনতার সাথে বিজয় মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বাড্ডা থানার দিকে বিজয় মিছিল অগ্রসর হলে। থানার ছাদে অবস্থানরত পেটোয়া পুলিশ বাহিনী বিজয় মিছিলকে লক্ষ্য করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ শুরু করে। এতে বহু লোক হতাহত হয়। একের পর এক ছাত্র-জনতা রক্তাক্ত হতে থাকে। রাস্তায় রক্তের নদী বয়ে যেতে শুরু করে। হঠাৎ পেটোয়া পুলিশলীগের একটি গুলি সাগর রহমানের কোমরে বিদ্ধ হয় এবং পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে যায়। রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায় তার শরীর। সেখানেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সাগর। মৃত্যুর ফেরেশতা তার জন্য আসতে আর দেরি করেনি। সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে সে। কিন্তু তৎক্ষনাত তাকে হাসপাতালে নিতে পারেনি কোনো সহযোদ্ধা পরে স্থানীয় ছাত্র-জনতার সহায়তায় মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। কিন্তু বেশিরভাগ ডাক্তার যা বলে সেদিনের সেই ডাক্তারও একই কথা বলেন। তিনি তাকে মৃত ঘোষণা করে। সাগর রহমানের বড় মামা ও মামাতো ভাই সজীব একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে সেদিনই নিজ গ্রামে নিয়ে যায়। পরে হাজার হাজার মুসল্লীদের উপস্থিতিতে দুটি জানাজা শেষ করে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়, ’২৪-র বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদ সাগর রহমানকে । বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল ছেলেকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মা সখিনা আক্তারের অবস্থা হয় আরও করুণ। ছেলের এ আকস্মিক বিদায় তিনি এক মুহূর্তের জন্যও মেনে নিতে পারছেন না। এছাড়াও অসুস্থ নানির দেখাশোনা করার মতো আর কেউ নেই। শহীদ মোঃ সাগর রহমানের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি ছিলেন শহীদ সাগর। তার মানসিক ভারসাম্যহীন মা ও অসুস্থ নানীকে নিয়ে বাড্ডার এক টিনসেড ভাঙ্গা বাড়িতে তাদের বসবাস। সহায় সম্বলহীন এই ছোট্ট পরিবারটিতে দুঃখ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট রইল না তাদের। শহীদ পরিবারের জন্য সহযোগিতা সংক্রান্ত প্রস্তাবনা ১. শহীদের মা সখিনা আক্তারের জন্য প্রতিবন্ধী ভাতা ও নানীর জন্য বৃদ্ধ ভাতার ব্যাবস্থা ২.এককালীন সহায়তা প্রয়োজন ৩.প্রতিবন্ধী মায়ের চিকিৎসা করা প্রয়োজন। ৪.একমাত্র বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন। একনজরে শহীদ পরিচিতি পূর্ণনাম : মো: সাগর রহমান জন্ম তারিখ : ০২-০৪-২০০৪ জন্মস্থান : পঞ্চগড় সদরের কিত্তিনিয়া গ্রামে পেশা : স্পার্ট অনলাইন ডিস সংযোগ অফিসে চাকুরী পিতা : মোঃ রবিউল ইসলাম মাতা : মোছা. সখিনা খাতুন বর্তমান ঠিকানা : গ্রাম: কিত্তিনিয়া, ইউনিয়ন: চাকলাহাট, থানা: সদর, জেলা: পঞ্চগড় স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: কিত্তিনিয়া, ইউনিয়ন: চাকলাহাট, থানা: সদর, জেলা: পঞ্চগড় শহীদ হওয়ার স্থান : বাড্ডা থানার সামনে ঘাতক : পুলিশ আঘাতের ধরন : গুলি গুলিবিদ্ধের তাং ও সময় : ৫ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০ শহীদ হওয়ার তাং ও সময় : ৫ই আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০ সমাধিস্থল : গ্রামের বাড়ি