Image of মো: রায়হানুল ইসলাম

নাম: মো: রায়হানুল ইসলাম

জন্ম তারিখ: ২৬ নভেম্বর, ১৯৯০

শহীদ হওয়ার তারিখ: ১৯ জুলাই, ২০২৪

বিভাগ: রংপুর

ব্যক্তিগত তথ্য:

পেশা:কোম্পানির চাকরি, শাহাদাতের স্থান : লিংক রোড,বাড্ডা, ঢাকা

শহীদের জীবনী

বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বেড়ে ওঠা সাহসী এক যুবকের নাম রায়হানুল ইসলাম। যিনি কুড়িগ্রাম জেলার অন্তর্গত ওলিপুর থানার মুন্সিপাড়া গ্রামে এক মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম ১৯৯০ সালের নভেম্বর মাসে। ২১ তারিখে জনাব আব্দুর রশিদ এবং রাহেনা বেগমের কোলকে আলোকিত দুনিয়ায় আসেন এই যুবক। তার পিতা হাসিল সংগ্রহক এবং মাতা একজন গৃহিণী। পিতা হাসিল সংগ্রহণের পাশাপাশি দুটি ঘর ভাড়া দিয়ে কিছু অর্থ উপার্জন করেন। মধ্যবিত্ত এই পরিবারটি খুব ভালোভাবে চলতে না পারলেও বেশ স্বাভাবিকভাবেই চলছিল তাদের পরিবার। তবে জনাব আব্দুর রশিদের মেধাবী ও পরিশ্রমী ছেলেটি একটি কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার পরে যেন খুলে গেল নতুন দরজা। শহীদ রায়হানুল ইসলাম স্টারলিং স্টক এন্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড এ অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করেন। চাকরিতে যোগদান করার সময় বেশি দিন হয়নি। এইতো মাত্র ৫-৬ মাস হলো তিনি সেখানে যোগদান করেছেন। প্রতিমাসে তার বেতন থেকে পিতা-মাতাকে ১০ হাজার টাকা করে পাঠাতেন। সন্তানের কষ্টার্জিত এই অর্থ থেকে দশ হাজার টাকা পেয়ে পিতা-মাতা যেন আনন্দে উল্লাসিত থাকতেন। সন্তানের অজান্তেই পিতা মাতার চোখ দিয়ে বেয়ে যেতো আনন্দের পানি। তবে সেই আনন্দ যেন কিছুদিনের মধ্যেই ধুলোয় মিশে গেল। সন্তানের এই আকস্মিক মৃত্যুতে তার পরিবার পরিজন হয়ে গেলেন নি:স্ব। রায়হানুল ইসলামের পরিবারে তার স্ত্রী এবং একটি পাঁচ মাসের কন্যা এখন এতটাই অসহায় যে, তার পাঁচ মাসের কন্যা আর কাউকে বাবা বলে ডাকতে পারেনা। মেয়ে তার বাবাকে হারালেন, বাবা মা তার ছেলেকে হারালেন এবং স্ত্রী তার স্বামীকে হারালেন। স্ত্রী পিতা-মাতা ও কন্যাকে রেখেই চিরতরে বিদায় নিতে হলো এই স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের কারণে। যেভাবে শহীদ হলেন রায়হান শহীদ রায়হান একটি প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। যখন দেশব্যাপী চলছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে কোটা সংস্কার আন্দোলন। কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রথমে খুব শান্ত ভাবেই চলছিল। মূলত জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলন প্রথমে ঢাকায় শুরু হলেও ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে যায় দেশের বিভিন্ন জায়গায়। অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নেমে যায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেই সরকার এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয় না। বিভিন্নভাবে তাদের সাথে অপরাজনীতি করে। তাদেরকে দেখানো হয় হাইকোর্ট। শিক্ষার্থীরা ১৪ তারিখে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। ছাত্রদের পক্ষ থেকে সময় বেঁধে দেওয়া হয় মাত্র ২৪ ঘন্টা। রাষ্ট্রপতিও শিক্ষার্থীদের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। ১৫ তারিখেও শিক্ষার্থীরা সারা দেশে কর্মসূচির ডাক দেন। ঢাকার মধ্যে সকল প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা জড় হতে থাকেন রাজু ভাস্কর্যের সামনে। সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে যেতে থাকেন শাহবাগের দিকে। তারপর ছাত্রলীগ ও টোকাই লীগের সন্ত্রাসী বাহিনীরা ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে ভারী অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ চালায়। সেই দিনে আহত হন অসংখ্য নারীরাও। এমনকি ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সিতেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী বাহিনীরা প্রবেশ করে আহত শিক্ষার্থীদের উপরে চালায় নির্যাতন। এমন অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে ১৬ তারিখ সারা দেশে প্রতিবাদী সমাবেশ করেন ছাত্র-জনতা। পুলিশ প্রশাসন ছাত্রদের উপরে রাবার বুলেট টিয়ারশেল, গ্রেনেড, বোমাসহ গুলি চালান। রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশ বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড নাড়া দেয় প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে। নতুনভাবে দেওয়া হয় সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি। সারা দেশেই ইতমধ্যে সরকারের লেলিয়ে দেওয়া বাহিনীর আঘাতে অনেকেই মৃত্যুবরণ করে ।মৃত্যুর মিছিল বাড়তে থাকে একের পর এক। ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলন ইতোমধ্যেই রূপ নিয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে। ১৯ তারিখে কমপ্লিট শাটডাউন দিয়ে ছাত্র জনতা নামেন রাজপথে। সেই দিনটি ছিল শুক্রবার। শহীদ রায়হানুল ইসলাম ঢাকার বাড্ডা লিঙ্ক রোডের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তিনি স্টারলিং স্টক এন্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেডে এ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। মতিঝিলে অফিস হওয়ার কারণে বাড্ডার লিংক রোড এর কাছে বাসা নিয়ে থাকতেন তিনি। সুযোগ পেলে তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতেন। ১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজ আদায়ের পরে তার বন্ধুকে সাথে নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটের দিকে সন্ত্রাসী পুলিশ বাহিনী ছাত্র-জনতার উপরে গুলিবর্ষণ করেন। একটি গুলি এসে তার ডান চোখের উপরে মাথার সামনে দিয়ে ঢুকে পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলির কারণে বেশ কিছুক্ষণ তিনি রাস্তাতেই পরে থাকেন। ইতোমধ্যেই পিচঢালা কালো রাস্তাটি লাল হয়ে গিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে পথচারী ও মিছিলে অংশ নেওয়া এক বন্ধু উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে নেওয়ার পূর্বেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। এই সংবাদ তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে জানালে স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পরেন। শুরু হয়ে যায় পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনদের আহাজারি। পরিবারের সূর্য সন্তানকে আওয়ামী পুলিশ বাহিনী এভাবেই বিদায় করে দেয় দুনিয়া থেকে। নিকটাত্মীয়দের ও সজনদের বক্তব্য শহীদ রায়হানুল ইসলামের নানা জানান, রায়হান খুব মিশুক ও অমায়িক ছেলে ছিল। শহীদ হওয়ার ১৯ দিন আগে সে বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁর মা তাঁর জন্য ৩ পদের মাছ রান্না করে সামনে বসে খাইয়েছিলেন। ৩ দিনের ছুটি শেষ করে যাওয়ার সময় তাঁর মা ৫ পদের তরকারী বক্স ভরে দিয়ে দেন যেন ঢাকায় বসে খেতে পারে। কিন্তু সে তরকারী শেষ হওয়ার আগেই সে দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলেন। শহীদ রায়হানুল ইসলামের মা রাহেনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন যে, আমার ছেলে তাঁর মেয়ের ইসলামীক নাম রেখেছেন। যেন কেয়ামতের দিন নাম ধরে ডাকলে বাবাসহ উপস্থিত হতে পারেন। শহীদের পারিবারিক অবস্থা শহীদ রায়হানুল ইসলাম পরিবারের একমাত্র সন্তান। তাঁর আর কোন ভাই/বোন নেই। সংসারে বাবা মা, স্ত্রী ও ৫ মাসের মাসের ছোট মেয়ে সন্তান রয়েছে।শহীদ রায়হান বাবা-মাকে খরচের জন্য প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে দিতেন। শহীদ রায়হানুল ইসলামের বাবা একজন স্থানীয় বাজারের হাসিল সংগ্রহক ও ২ টি রুম ভাড়া দেওয়ার মাধ্যমে ওখান থেকে সামান্য কিছু উপার্জন করেন। কিন্তু শহীদ রায়হানুল ইসলাম মারা যাওয়ার পরে তাদের আয়ের বড় কোন মাধ্যম নেই । বর্তমানে আয়ের উৎস হিসেবে ২ টি রুম ভাড়া দিয়ে ৮০০০ হাজার টাকা ও স্থানীয় বাজারের হাসিল সংগ্রহ করে ৫০০০-৬০০০ টাকা করে প্রতি মাসে ১৪০০০/- উপার্জন করতে পারেন। এক মর্মান্তিক ঘটনা একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করে মরদেহ কুড়িগ্রামের উলিপুর নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এম্বুলেন্সটি কুড়িগ্রামে ঢুকার মুখে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বাধা দেয়।বিবেকের কতটা পচন ধরলে তাদের এমন আচরণ আশা করা যায়। এম্বুলেন্সটি ভেঙ্গে ফেলার হুকমি দিলে ড্রাইভার আর উলিপুরে যেতে রাজি না হওয়ায় অন্য একটি পিকআপা ভাড়া করে মরদেহ উলিপুর নিয়ে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেওয়া হয়। উলিপুর আসার আগেই পুলিশ বাড়িতে এসে ভয়-ভীতি দেখিয়ে হুমকি দিতে থাকে। জানাজা নামাযের সময় নির্ধারন করে মাইকিং করতে অটো ভাড়া করলে সেই অটো পুলিশ আটকে দেয়। মরদেহের গাড়ি বাড়িতে পৌঁছার আগেই স্থানীয় ও দূর হতে অসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য বাড়িতে অবস্থান নেয়।তাৎক্ষনিক সিন্ধান্ত নিয়ে কাছের সাবাইকে ফোন দিয়ে জানাজার সময় জানিয়ে দেয়। পুলিশের উপস্থিতিতে অনেক সংক্ষেপ করে জানাজার আনুষ্ঠানিকতা সেরে দ্রুত সময়ে উলিপুর পৌরসভার কবরস্থানে দাপন সম্পন্ন করা হয়। একনজরে শহীদ পরিচিতি নাম : রায়হানুল ইসলাম জন্মতারিখ : ২৬-১১-১৯৯০ ধর্ম : ইসলাম পেশা : কোম্পানির চাকরি পিতার নাম, বয়স, অবস্থা : আব্দুর রশিদ, ৫৯,হাসিল সংগ্রহক মায়ের নাম, পেশা : রাহেনা বেগম, ৫১,গৃহিণী পারিবারিক সদস্য : ৪ জন : ১ মেয়ে, রাফনাজ বিনতে রায়হান রাওজা, বয়স: ৫ মাস স্থায়ী ঠিকানা : গ্রাম: মুনসিপাড়া, ইউনিয়ন: উলিপুর, থানা: উলিপুর, জেলা: কুড়িগ্রাম বর্তমান ঠিকানা : বাড্ডা লিংক রোড, থানা: বাড্ডা, জেলা: ঢাকা ঘটনার স্থান : লিংক রোড,বাড্ডা, ঢাকা আঘাতকারী : পুলিশ আহত হওয়ার সময় কাল : ১৯-০৭-২০২৪ইং, দুপুর ১:৪৫ মি: নিহত হওয়ার সময়কাল, স্থান : ১৯-০৭-২০২৪ইং, লিংক রোড,বাড্ডা, ঢাকা শহীদের কবরে বর্তমান অবস্থান : পৌরসভার কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে কবরটি বাশের বেড়া দিয়ে বেষ্টুনী করে ঘিরে রাখা হয়েছে। শহীদের নাম সম্বলিত সাইন বোর্ড টানানো রয়েছে।

শহীদের তথ্য সম্বলিত ছবি

Image of মো: রায়হানুল ইসলাম
Image of মো: রায়হানুল ইসলাম
Image of মো: রায়হানুল ইসলাম
Image of মো: রায়হানুল ইসলাম
Image of মো: রায়হানুল ইসলাম

একই বিভাগ অন্যান্য শহীদদের তথ্য

আল শাহ রিয়াদ

মো: সাহান পারভেজ

মো: মঞ্জু মিয়া

মো: সাজ্জাদ হোসেন

মো: মেরাজুল ইসলাম

মো: শাহরিয়ার আল আফরোজ শ্রাবন

মো: মামুন

মো: রুবাইদুজ্জামান রেজওয়ান নাইম

মো: সাগর রহমান

মো: নয়ন মিয়া

আব্দুল্লাহ আল তাহির

মো: রাশেদুল হক

শেয়ার করুন Facebook Logo Twitter Logo WhatsApp Logo